ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের দাবি নির্বাচন বাতিল ও ইসির পদত্যাগ

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ৩০ এপ্রিল ২০১৫

আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের দাবি নির্বাচন বাতিল ও ইসির পদত্যাগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সদ্যসমাপ্ত তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন বাতিল ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদসহ নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পদত্যাগ দাবি করেছে বিএনপির নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত সংগঠন ‘আদর্শ ঢাকা আন্দোলন’। বুধবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির পক্ষ থেকে এ দাবি করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, আমরা নির্বাচনের আগে ইসির কাছে গিয়েছিলাম। তাদের বলেছিলাম নির্বাচনের ভূমিটা যেন সমতল হয়। ভোটাররা যেন যাকে খুশি তাকে ভোট দিতে পারে। প্রার্থী যেন তার ভোটারদের কাছে যেতে পারে। নির্বাচনের সময় যেন রাজনৈতিক মামলায় ‘অজ্ঞাত’ বলে দেখানো লোকদের হয়রানি করা না হয়। আমাদের কোন দাবিই মানা হয়নি। সে কারণে নির্বাচনের দিন কি হয়েছে তা পুরো জাতি দেখেছে। নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে যা দেখিয়েছেন সেটা স্কুলের তিন শিশুকে এনে দিলেও ব্যতিক্রম হতো না। এভাবে নির্বাচন হয় না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিটি নির্বাচনে আমার ভূমিকা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। ২৮ এপ্রিলের নির্বাচনকে তামাশার নির্বাচন আখ্যায়িত করে এমাজউদ্দীন বলেন, ১৯৪৬ সালের নির্বাচনসহ সব নির্বাচন দেখেছি। এসব নির্বাচনের ছোটখাটো ভুল থাকতে পারে। কিন্তু ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের সঙ্গে ওই নির্বাচনের তুলনা হতে পারে না। এটার সঙ্গে কেবল ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের তুলনা হতে পারে। এই নির্বাচনকে আমরা একটি আবর্জনাতুল্য বর্জ্য হিসেবে আখ্যায়িত করছি। তিনি বলেন, সিটি নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে সংলাপের কাজটি করতে চেয়েছিলাম। একবার শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হতে পারলে আগামীতে সব নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হতো, গণতন্ত্রও পূর্ণতা পেত। কিন্তু এ সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে আর কোন নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এক প্রশ্নের জবাবে আদর্শ ঢাকা আন্দোলন’র সদস্য সচিব শওকত মাহমুদ বলেন, আশা করি আমাদের দাবিগুলো সরকার ও নির্বাচন কমিশনের বোধগম্য হবে। তবে এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোন কর্মসূচী দেয়ার চিন্তা করছি না। আমরা আদর্শ ঢাকা গড়ার জন্য ইশতেহার দিয়েছিলাম। সে লক্ষ্যেই কাজ করেছি। সিটি নির্বাচন বর্জন প্রসঙ্গে বিএনপি নেতাদের আগাম ফোনালাপ রেকর্ড ফাঁস হওয়া প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন বর্জনের বিষয়ে যে ফোনালাপ প্রকাশের কথা বলা হয়েছে, তা ভিত্তিহীন। নির্র্বাচন বর্জনের কোন পরিকল্পনাই আমাদের ছিল না। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রেরই প্রায় ৯০ শতাংশ এজেন্ট বের করে দেয়া হয়েছে। তাই পরিস্থিতি বিবেচনা করেই নির্বাচন থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি লাভবান হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে রাজনৈতিকভাবে কিছু বলতে পারছি না। তবে নাগরিক হিসেবে বলতে পারি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সরকারের প্রধান থাকাকালীন সময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া সম্ভব নয়, তা আবারও প্রমাণিত হলো। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শওকত মাহমুদ বলেন, ২৮ এপ্রিল যে নির্বাচন হয়েছে, তা দেশের ইতিহাসের মহাকলঙ্কজনক অধ্যায় হয়ে থাকবে। এটাকে নির্বাচন না বলে নির্লজ্জ প্রহসন বলাই শ্রেয়। স্থানীয় সরকারে এরকম জঘণ্য নির্বাচন আমাদের ইতিহাসে আর হয়েছে কিনা জানি না। নির্বাচন কমিশন সরকারের মর্জি পূরণ করে নির্বাচনের নামে তামাশার মাধ্যমে জিতিকে দিয়েছে আওয়ামী লীগকে কিন্তু হারিয়ে দিয়েছে গণতন্ত্রকে। এ নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন এবং ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের লোকদের স্বেচ্ছাচারিতায় পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়াটিই আবর্জনায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের মতো গায়ের জোরে ব্যালট পেপারে সিল মেরে তিন সিটির মেয়র পদও দখল করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আদর্শ ঢাকা আন্দোলন’র নেতা অধ্যাপক ড. মাহবুবউল্লাহ, অধ্যাপক ড. আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ, আব্দুল হাই শিকদার, জাহাঙ্গীর আলম প্রধান প্রমুখ। নির্বাচন বর্জন প্রসঙ্গে তাবিথ আউয়ালের ব্যাখ্যা ॥ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন বর্জন প্রসঙ্গে নিজস্ব ব্যাখ্যা দিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন, ২৮ এপ্রিল ভোটগ্রহণ শুরুর পূর্ব হতে অধিকাংশ ভোটকেন্দ্র জোরপূর্বক দখল, আমার পোলিং এজেন্টদের সরকারদলীয় সন্ত্রাসী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জোরপূর্বক বের করে দেয়ার কারণে আমি নির্বাচন বর্জন করি। আমার নির্বাচন বর্জন সংক্রান্ত পত্র রিটার্নিং অফিসার বরাবর এবং অবগতির জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে পাঠালে তা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে। আমার পত্রবাহক অনেক অনুরোধ করেও তা প্রদানে ব্যর্থ হয়ে নির্বাচন কমিশন থেকে ফেরত আসে।
×