ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আসন্ন বর্ষায় নদী ভাঙ্গন আতঙ্ক ॥ টেকসই পদক্ষেপ দাবি

প্রকাশিত: ০৪:৩৭, ৩০ এপ্রিল ২০১৫

আসন্ন বর্ষায় নদী ভাঙ্গন আতঙ্ক ॥ টেকসই পদক্ষেপ দাবি

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ সঠিক সময়ে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় বর্ষা মৌসুম শুরু হলেই ভাঙ্গনের মুখে পড়ে রাজশাহীর পদ্মা নদী। পানির তোড়ে ভাঙ্গন শুরু হলে টনক নড়ে কর্তৃপক্ষের। তখন কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে মোকাবেলা করা হয় ভাঙ্গন। তবে কাজের কাজ কিছুই হয় না। মূলত নদী ভাঙ্গন রোধে কার্যকরি ও টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ না করায় প্রতি বছর রাজশাহীতে ভেঙ্গে বিলীন হচ্ছে নদীপাড়ের সম্পদ। আগামী বর্ষা মৌসুম আসতে এখনও দেড়মাস বাকি থাকলেও কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় ফের নদী ভাঙ্গনের আশঙ্কা এখন নদী তীরবর্তী মানুষের। রাজশাহী নগর ছাড়াও জেলার পশ্চিমের উপজেলা গোদাগাড়ী, পূর্বে চারঘাট ও বাঘা উপজেলার পাশ দিয়ে প্রবাহিত পদ্মা নদী। এর উভয় পাশে রয়েছে পবা উপজেলার জনপদ। গত কয়েক বছর ধরে বর্ষা মৌসুম শুরু হলেই সবার আগে শুরু হয় নদী ভাঙ্গন। এতে বিলীন হয় সরকারী ও বেসরকারী স্থাপনা। হারিয়ে যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মানুষের ঘরবাড়ি, ক্ষেতের ফসল ও গাছপালা। এলাকাবাসী জানায়, শুষ্ক মৌসুমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে নদীর গর্ভে এবারও বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এসব উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি নদীপাড়ের গোদাগাড়ী উপজেলা পরিদর্শন করে দেখা যায়, নদীর পাড় থেকে কয়েক শ’ গজ দূরে চর বয়ারমারী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। পাশেই রয়েছে সরকারীভাবে তৈরি করা বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র। ইতোমধ্যে ভাঙ্গনকবলিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে উপজেলার আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের চরবয়ারমারি, আমতলা খাসমহল, ডাকরিপাড়া, চর নওশেরা, হুনুমন্তনগর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার আলাতুলী ইউনিয়নের লুটারিপাড়া, সরকারপাড়া, কাইয়াপাড়া, পশ্চিম কোদালকাটি, আলাতুলী, বগচর, রানীনগর ও ছয়রশিয়া গ্রাম। গত কয়েক বছরে আলাতুলী উচ্চবিদ্যালয়, পশ্চিম কোদালকাটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ চরাঞ্চলের ১৫টি গ্রামের ৩ হাজারের বেশি বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে শুধু গোদাগাড়ী উপজেলার। ফসলী জমি ও কয়েক হাজার আমগাছসহ বিভিন্ন ফলজ ও বনজ গাছ নদীগর্ভে চলে গেছে। একই উপজেলার হুনমন্তনগর, চর নওশেরা, আমতলা খাসমহল, কোদালকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দিয়াড় মানিকচক মাদ্রাসা ও কোদালকাটি উচ্চবিদ্যালয়সহ ১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ মসজিদ, রাস্তা, গাছপালা ও শত শত একর ফসলী জমি নদীগর্ভে বিলীনের অপেক্ষায় রয়েছে। আলাতুলি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান খোয়াজ আলী বলেন, নয়টি ওয়ার্ডের মধ্যে চারটি ওয়ার্ডের অধিকাংশ এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে বিগত বছর। চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা বলেন, ভাঙ্গন রোধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় প্রতিবছর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের নদীপাড়ের মানুষ বসতভিটা হারিয়ে ভূমিহীন হয়ে পড়ছেন। গোদাগাড়ী নাগরিক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক শান্ত কুমার মজুমদার বলেন, পদ্মা নদীর দুই পাড়ে ভাঙ্গন রোধে টেকসই বাঁধ নির্মাণের পাশাপাশি ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীর গভীরতা বাড়াতে হবে। সামাজিক সংগঠন রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বর্ষার আগেই নদীর ভাঙ্গন রোধে কার্যকর ও টেকসই ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি। অরক্ষিত দেড় কি. মিটার বেড়িবাঁধ এইচএম এরশাদ কক্সবাজার থেকে জানান, কক্সবাজারে চকরিয়ার বদরখালীতে অব্যাহত নদী ভাঙ্গনের কারণে নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কায় দিন যাপন করছেন প্রায় ছয় হাজার বাসিন্দা। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে সাতডালিয়া পাড়া গ্রামের ৪ শতাধিক পরিবারের বিভিন্ন স্থাপনা। ১৯৯১ সালে প্রলয়ঙ্কারি ঘূর্ণিঝড়ের পর দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বদরখালী উপকূলের ক্ষতিগ্রস্ত বেশিরভাগ বেড়িবাঁধ সংস্কারের অভাবে এখনও অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। বিএনপি-জামায়াত সরকারের কতিপয় নেতা, ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট দফতরের একশ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা মিলেমিশে সরকারী বরাদ্দের সিংহভাগ টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নেয়ায় ওই সময় বেড়িবাঁধ সংস্কার প্রকল্পের কাজ টেকসই হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে সাতডালিয়া পাড়া এলাকার বেড়িবাঁধটি ভয়াবহ ভাঙ্গণের ফলে কয়েক বছরের ব্যবধানে অনেকটা বিলীন হয়ে গেছে। এ অবস্থার কারণে গোয়ারফাঁড়ি খালের গতিপথ বর্তমানে গ্রামের দিকে ধাবিত হচ্ছে। বদরখালী সাতডালিয়া পাড়া গ্রামের প্রায় আড়াই শ‘’ বসতবাড়ি, মসজিদ-মাদ্রাসা, কবরস্থানসহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চরম হুমকির মধ্যে রয়েছে। ভিটেবাড়ি হারানোর আতঙ্কে রয়েছে ওই গ্রামের চার শতাধিক পরিবারের ৬ হাজার মানুষ। বদলখালী ইউপি চেয়ারম্যান নূরে হোছাইন আরিফ বলেন, উপকূলের ক্ষতিগ্রস্ত বেশিরভাগ বেড়িবাঁধ সংস্কারের অভাবে অরক্ষিত থাকায় নদী ভাঙ্গনে ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। সূত্র জানিয়েছে, পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দের অভাবে ’৯১ সালে ঘূর্ণিঝড়ের ২৫ বছর পরও অরক্ষিত রয়েছে উপকূলীয় অঞ্চলের রক্ষাকবচ বহু বেড়িবাঁধের বিশাল এলাকা। কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, উপকূলীয় চকরিয়া ও পেকুয়ায় সাতটি পোল্ডারের ২০৯ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই ঝুঁকিপূর্ণ। কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের চকরিয়া উপ-বিভাগের বদরখালী শাখা কর্মকর্তা (এসও) মোহাম্মদ আলী বলেন, বদরখালী সাতডালিয়া পাড়ার ওই বেড়িবাঁধসহ চকরিয়ার একাধিক স্থানে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ মেরামতের লক্ষ্যে অর্থ বরাদ্দ চেয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে।
×