ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

উপনিবেশ ও ঔপনিবেশিক মনের সমাজতত্ত্ব

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ৩০ এপ্রিল ২০১৫

উপনিবেশ ও ঔপনিবেশিক মনের সমাজতত্ত্ব

নিবন্ধটি রচিত হয়েছে মুনতাসীর মামুনের ‘ঔপনিবেশিকোত্তর ঔপনিবেশিক মন’কে ঘিরে। বইটির লেখক সুপরিচিত ইতিহাসবিদ, অধ্যাপক ও প্রাবন্ধিক। একুশে পদকপ্রাপ্ত। তিনি একজন এ্যাকটিভিস্ট, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাঁর এই দিকটি উল্লেখ করলাম এ কারণে যে, মুনতাসীর মামুনের মানসপট নির্মিত হয়েছে থিওরি ও প্র্যাকটিসকে ঘিরে। তাঁর লেখার একটি লক্ষ্য আছে যা একটি আদর্শকে ঘিরে নির্মিত। আমি মুনতাসীর মামুনের লেখার ভক্ত, বিশেষ করে ইতিহাস সম্পর্কিত তাঁর প্রবন্ধসমূহ আমাকে মুগ্ধ করে, যার কিছু কিছু গল্পের আদলে লেখা। ইতিহাসের মতো গুরুগম্ভীর বিষয়কে গল্পের মতো করে হাল্কা মেজাজে উপস্থাপন একটি শৈলী নয় কি? আলোচিত গ্রন্থকে ভিত্তি করে আরও বেশি কিছু বলার প্রচেষ্টা এই প্রবন্ধে। সমাজতত্ত্বের দৃষ্টিকোণ থেকে উপনিবেশকে বোঝা এবং উপনিবেশ যে সংস্কৃতির জন্ম দেয়, তা থেকে উৎসারিত মনের ধরন বোঝা এই প্রবন্ধের প্রয়াস। আমি বুঝতে চেষ্টা করব ঔপনিবেশিক মনকে একটি কনসেপচুয়াল ক্যাটাগরি বা প্রত্যয়গত প্রকরণ হিসেবে বিবেচনা করতে পারি কিনা এবং মামুন কি বলেছেন সে সম্পর্কে তা বিশ্লেষণ করেই এই কাজটি করার চেষ্টা করব। আরও যেটা করা হবে তা হলো, ঔপনিবেশিক মনকে একটি ইডিওলজি হিসেবে পরীক্ষা করা এবং সেমিওলজির দৃষ্টিকোণ থেকে পর্যালোচনা করা। মুনতাসীর মামুনের গ্রন্থটি প্রতিবাদী ঘরানার লেখা। এই প্রসঙ্গে জুরগেন হ্যাবারমাসের দৃষ্টিভঙ্গির কথা বলব। তিনি বললেন, মানুষের সর্বজনীন জ্ঞান নির্মাণের প্রচেষ্টায় ইমানসিপেটরি কর্মকা- অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যুগের পর যুগ সমাজে চলেছে ডমিনেশন বা আধিপত্য। সেটি শ্রেণী আধিপত্য, বর্ণ আধিপত্য, ধর্ম আধিপত্য ইত্যাদি। সেই আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য দরকার ক্রিটিক্যাল ভাবনা, যার মাধ্যমে আসবে আধিপত্য থেকে মুক্তি। সুতরাং ক্রিটিক্যাল বা তীর্যক ভাবনার মধ্যে থাকবে আধিপত্যমূলক ভাবনার পাল্টা ভাবনা। মামুন ঔপনিবেশিক মনের অধস্তনতার চরিত্রটি চিহ্নিত করে সেই পালটা ভাবনার সূচনা করেছেন। তাই এটি প্রতিবাদী ঘরানার লেখা। এই সূত্রে মিশেল ফুঁকোর দিকে তাকাব। ডিসকারসিভ বা পাল্টা ভাবনার মধ্যে দিয়ে সূত্রপাত ঘটে নতুন ডিসকোর্সের। প্রতিবাদকে ফুঁকো নতুন ডিসকোর্স তৈরির একটি পথ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। মুনতাসীর মামুনের গ্রন্থটি ঔপনিবেশিক অধস্তনতার প্রত্যাখ্যান এবং সেখান থেকেই নতুন ভাবনা বলয়ের প্রবর্তন। মানুষ যখন প্রতিবাদ করে, তখন সে নতুন বাস্তবতারও ইঙ্গিত দেয় একসঙ্গে এবং নতুন বাস্তবতাকে ঘিরে জন্ম হয় নতুন চিন্তা-ভাবনা। ‘ঔপনিবেশিক মন’ সংক্রান্ত মামুনের ভাবনা সমষ্টি ভিন্ন সমাজের কাঠামোর ইঙ্গিতও প্রদান করেছে, যেখানে নেই মনের সঙ্কোচন। কবিগুরুর ভাষায়, ‘চিত্ত যেথা ভয় শূন্য উচ্চ যেথা শির।’ সূচনা লগ্ন থেকে সমাজ বিভাজিত। কৌম সমাজ বিভাজিত ছিল লিঙ্গে ও বয়সের ভিত্তিতে। ক্রমাগতভাবে এই বিভাজন রূপান্তরিত হয় শ্রেণী বিভাজনে, সম্পদকে ঘিরে। আমরা জানতে পারি দাস সমাজের কথা যেখানে ছিল প্রভু বনাম দাস, সামন্ততন্ত্রের কথা যেখানে ছিল সামন্ত প্রভু বনাম ভূমিদাস, পুঁজিবাদী সমাজে তৈরি হয়েছিল বুর্জোয়া বনাম সর্বহারা। আমরা তো বর্ণ সমাজের কথাও বলতে পারি, যেখানে ছিল উচ্চবর্ণের ব্রাহ্মণ ও নি¤œবর্ণের শূদ্র। এভাবে চলেছে সমাজ বিভাজনের ঐতিহাসিক প্রক্রিয়া ও শোষণ। ঔপনিবেশিক শোষণ ভিন্নমাত্রার, পুঁজিবাদের পেটের মধ্যে জন্ম, কিন্তু শোষণটি সেন্টার-পেরিফেরি কিম্বা মেট্রোপলিস-স্যাটেলাইটের মধ্যে। হামজা আলাভি তাই নামকরণ করলেন ‘কলোনিয়াল মোড অব প্রোডাকশন’। উদ্বৃত্ত পাচার হয়ে যার কেন্দ্রে, তৈরি হয় পাশ্চাত্য। যৌক্তিক কারণে পাশ্চাত্যকে নির্মাণ করতে হয় এমন একটি সংস্কৃতি যাতে অধস্তন মানুষ মানসিকভাবে হীনম্মন্যতায় ভোগে। বিভিন্নভাবে ‘আদারিং’ বা তাচ্ছিল্যকরণকে খুঁচিয়ে দেয়া হয়। মুনতাসীর মামুন সেই তাচ্ছিল্যকরণের মানচিত্রটি নির্মাণ করেছেন এই গ্রন্থে। বস্তুবাদী বিশ্লেষণে সামাজিক শোষণের একটি বিজ্ঞানভিত্তিক পর্যালোচনা করা হয়েছে। কার্ল মার্কস এই পদ্ধতির পথিকৃৎ। উৎপাদন সম্পর্ককে ঘিরে তৈরি হয় বিভাজনভিত্তিক শোষণ। সম্পদকে কুক্ষিগত করে বিভিন্ন উৎপাদন ব্যবস্থায় শ্রেণীশোষণ তৈরি হয়। এই শোষণ থেকে মুক্তি পেতে দরকার শ্রেণী সংগ্রাম। তাই পরিবর্তনের দরকার বেস বা মৌল কাঠামোর। সুপারস্ট্রাকচার বা উপরিকাঠামো উৎপাদন ব্যবস্থা পাল্টানোর মধ্য দিয়ে পালটে যাবে। কিন্তু তা কি হয়? উপনিবেশ শেষ হলো, কিন্তু সেই সময়ের মন কি পাল্টালো? আলোচিত গ্রন্থ আলোকিত করেছে সেই অপরিবর্তনশীলতার। ঔপনিবেশিক পুঁজিবাদ পরিবর্তিত হয় জাতীয় পুঁজিবাদে। কিন্তু সংস্কৃতি থেকে যায় আগের! না হলে ঐ মন টিকে যায় কিভাবে? বিভিন্ন চলক বা নির্দেশক দিয়ে মুনতাসীর মামুন বিশ্লেষণ করেছেন ঔপনিবেশিক মন। উপনিবেশের বিভাজনকে পাকাপোক্ত রূপ দেয়ার জন্য ভিন্ন ধরনের স্পেস নির্মিত হয়। ঔপনিবেশিক প্রভুদের থাকার জায়গায় নাম দেয়া হয় ‘সিভিল লাইনস্ বা স্টেশন’। ঔপনিবেশিক প্রভু বা প্রশাসক থাকতেন বিস্তর জায়গা নিয়ে আর প্রজারা থাকতেন গাদাগাদি করে। উদাহরণ হিসেবে এসেছে ‘রমনা সিভিল লাইনস’। প্রভুরা যে বাসায় থাকতেন তা হলো ‘বাংলো’ যা নিশ্চিত করত প্রভুর ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য, নবাবপুর বা ঢাকার ওপাশে ন্যাটিভদের থাকার জায়গা ও মাঝে রমনা যাতে আছে ‘বাংলো’ রেসকোর্স, ক্লাব এবং সেনানিবাস। লেখক বলছেন, “...বাংলোতে যারা থাকছে তারা আলাদা। বিরাট স্পেসে তাদের বাংলো। আলো বাতাস চলাচল ও তাপরোধক ব্যবস্থা মেনে তা নির্মিত... বাংলোর দরজা থেকে জমিতে নামার সময় কয়েকটি সিঁড়ি থাকবে। এই সিঁড়ি তাৎপর্যময়। পদমর্যাদা অনুসারে কাকে কয় সিঁড়ি ভেঙ্গে অভ্যর্থনা ও বিদায় জানাবে সেটি সে কারণেই সৃষ্টি। মূল বাড়ি থেকে ঢোকার ফটকে দূরত্ব থাকবে। ঐ দূরত্বটিই নেটিভকে মনে করিয়ে দেবে রাজার কাছে এমনিতেই পৌঁছানো যায় না... পাকিস্তান আমলেও এই ধারা বজায় রাখা হয়। ইসলামাবাদ গেলে যে কারও ঠিকানা নিলেই বোঝা যাবে তিনি কোন্্ পর্যায়ের বা কোন্্ পদের (পৃ. ১৬-১৭)।” বড় বনাম ছোট এই বোধ সৃষ্টির জন্য উপনিবেশিক সংস্কৃতির প্রাণান্ত চেষ্টা, মামুনের দৃষ্টি ঐ দিকেই। অধস্তনতার সংস্কৃতি ঔপনিবেশিক মনের মূল কাঠামো আর লেখক বিভিন্ন ডাইমেনশন থেকে এটি বুঝতে চেয়েছেন। কার্ল মার্কস ঐতিহাসিক বস্তুবাদ সংক্রান্ত আলোচনায় সেই দাস ব্যবস্থা থেকে সামন্ত সমাজ ঘুরে পুঁজিবাদে ঠেকলেন শোষণ ব্যাখ্যার জন্য। মার্কসের মূল ফোকাস উৎপাদন সম্পর্কে, আর অপরাপর বিষয়গুলো যেমন ভাবাদর্শ, চেতনা বা রাজনীতিকে সুপারস্ট্রাকচার আখ্যায়িত করে সবার মাথায় বসালেন অর্থনীতিকে সমাজ অবয়ব বিশ্লেষণে। সমাজ পাল্টানোর যে সংগ্রাম তার চাবিকাঠি শ্রেণী সংগ্রামে নিহীত, যা উৎপাদন সম্পর্কের দ্বন্দ্ব হতে উৎসারিত। এই তত্ত্ব বিংশ শতাব্দীর ইউরোপে খুব খাটল না। রাশিয়ার বলশেভিক বিপ্লব বাদ দিলে অন্যান্য দেশে পুঁজিবাদী দ্বন্দ্ব প্রকটরূপ ধারণ করলেও শ্রেণী বিপ্লব ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেল। তাত্ত্বিক লুই এ্যালথুসার বুঝতে চাইলেন পুঁজিবাদ কেন সারভাইভ করছে, বললেন ইডিওলজিক্যাল প্র্যাকটিস বা ভাবাদর্শের কথা অর্থাৎ পুঁজিবাদী ভাবাদর্শকে যদি ছড়িয়ে দেয়া যায় মানুষের মননে তবে এর মধ্যেও শোষিত জনগোষ্ঠী দেখবে স্বপ্ন, বড়লোক হওয়ার স্বপ্ন! গ্রামসি এই প্রক্রিয়ার নাম দিলেন ‘হেজিমনি’ অর্থাৎ শ্রেণী দ্বন্দ্বকে ভাবাদর্শ দিয়ে ঠেকানো। মুনতাসীর মামুনের ‘ঔপনিবেশিক মন’ এমন ধারার ভাবাদর্শকে ইঙ্গিত দেয় অর্থাৎ উত্তর ঔপনিবেশিক আমলে অধস্তনতার যে শাসন ব্যবস্থা, তা টিকে আছে ঐ ঔপনিবেশিক মনের নির্যাস ছড়িয়ে দিয়ে। এই নির্যাসটির আরও কিছু দিক আমরা উল্লেখ করব। ভাষা অধস্তনতাকে টিকিয়ে রাখার একটি শক্তিশালী উপকরণ। মামুন লিখেছেন, “প্রাচীনকাল থেকেই অভিজাত ও শাসকরা এ অঞ্চলে নিজেদের ভাষা চালু করেছিলেন। এভাবে সাধারণ মানুষের ভাষা থেকে শাসক শ্রেণীর ভাষা আলাদা হয়ে গিয়েছিল, যেমন সংস্কৃত, ফরাসী, ইংরেজী এবং কিছুদিন আগে উর্দু (১৯৪৭-৭১)... যারা বিদেশী ভাষায় দক্ষ তারাই চাকরিতে অগ্রাধিকার পেত অর্থাৎ অধিকাংশ ক্ষেত্রে এলিটদের সন্তানরা। বাংলা চালু হলে এই সুবিধা হ্রাস পেত যাতে তারা রাজি ছিল না... এই যে ঔপনিবেশিক মনোবৃত্তি, তার জন্মও কিন্তু ভাষা সম্পর্কে গ্লানিবোধ জাগিয়ে দেয়ার পর” (পৃ. ৪১-৪৯)। ঔপনিবেশিক মন নিজেই নিজেকে তাচ্ছিল্য করে আদারিং অর্থে, মামুন সেটিই বোঝাতে চেয়েছেন। এই মনের আরও ফর্ম আছে। অন্যতম পোশাক। ইংরেজরা স্যুট-প্যান্ট চালু করলেন, সেটি হলো মানপোশাক। মামুন লিখছেন, “...আমলাদের ফর্মাল পোশাক হয়ে দাঁড়ায় স্যুট পরা এবং এখনও সেই ট্র্যাডিশন বজায় আছে। আমাদের এখানে কেউ কোন পদে গেলে বা সরকারী অনুষ্ঠানে গেলে স্যুট পরা, নিদেনপক্ষে টাই পরে যাওয়া যেন বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটিও সেই স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখা বা পদমর্যাদা প্রকাশ” (পৃ. ৩৬)। উপনিবেশ বিভাজন তৈরি করে। একইভাবে শোষণমূলক সমাজ কাঠামোও বিভাজন তৈরিতে সিদ্ধহস্ত। বর্ণ সমাজে ব্রাহ্মণদের ভাবা হতো ব্রহ্মার মাথা থেকে জন্ম, ক্ষত্রীয় বুক থেকে তাই সাহসী, বৈশ্য ব্যবসা করে শুধু লোভ তাই পেট থেকে, আর শূদ্র ব্রহ্মার পা থেকে, শুধু কাজ আর কাজ। এর চেয়ে চমৎকার চাতুরি আর কি হতে পারে শ্রম সরবরাহ নিশ্চিত করার। গ্রীক দাস ব্যবস্থাকেও দার্শনিক প্লেটো একটি আদর্শিক ভিত্তি দিয়েছেন। মুনতাসীর মামুনের ‘ঔপনিবেশিক মন’ প্রত্যয়টি বুঝতে গেলে ভাবাদর্শ বা ইডিওলজিক্যাল প্র্যাকটিসের দৃষ্টিকোণ থেকে বুঝতে হবে। মানুষকে যদি তার মননে অধস্তন না করা যায় তবে শোষণ বেশিদিন চালানো যায় না। ‘ঔপনিবেশিক মন’ সেই অধস্তনতার ভাবাদর্শ। যারা সেমিওলজি বা চিহ্নতত্ত্ব নিয়ে ভাবেন, উত্তর-আধুনিক সমাজে তারা প্রতীক বা সিম্বলের মধ্যে মূর্ত বাস্তবতার কাল্পনিক প্রতিরূপ খুঁজে পান, বদরিয়া যাকে ‘হাইপার রিয়্যাল’ আখ্যায়িত করেছেন। উপনিবেশের সিম্বল যেগুলো মামুন উল্লেখ করেছেন তার রয়েছে প্রতীকী মূল্য, যা বাস্তবতাকে ভিন্নভাবে নির্মাণ করে। পাশ্চাত্য ঔপনিবেশিক শাসন হয়ত শেষ করেছে কিন্তু নতুন সাম্র্রাজ্যবাদ তৈরি করেছে প্রতীকদের জগতে, টিকিয়ে রাখছে ভাষা দিয়ে, পোশাক দিয়ে বা ডিগ্রী দিয়ে। মানুষের মন তৈরি হয় সমাজে, প্রাত্যহিক কর্মকা-ের মধ্যে দিয়ে এই সমাজে টিকে থাকা। ঔপনিবেশিক প্রতীকগুলোকে যদি টিকিয়ে রাখা যায় (ভাষা, পোশাক, সম্বোধন) তবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঔপনিবেশিক মন তৈরি হবে। এই সূত্রটি পাশ্চাত্য যেমন অনুসরণ করে, পাকিস্তানও করেছিল, তাই দরকার ছিল একটি মুক্তিযুদ্ধের। কিন্তু মনের শিকড় আরও গভীরে, লেভি স্ট্রাউসের ‘ডিপ স্ট্রাকচার’ উপড়ানো কঠিন। ফেনন করেছিলেন ভায়োলেন্স দিয়ে এই উপড়ানোর চেষ্টা, সাইদ করেছেন লেখনি দিয়ে ‘ওরিয়েন্টালিজম তত্ত্বকে’ আক্রমণ করে আর মুনতাসীর মামুন তৈরি করেছেন একটি প্রত্যয়, ‘ঔপনিবেশিক মন’ একে তাত্ত্বিক গুরুত্ব দেয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে একটি সুদৃঢ় বাংলাদেশ নির্মাণে যারা বাধা দিচ্ছেন তাদের রাজনীতি প্রতিহত করা সম্ভব স্বাতন্ত্র্যবিশিষ্ট মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ নির্মাণের মধ্য দিয়েই। লেখক : শিক্ষক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
×