ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

৩০০ রানই যথেষ্ট?

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ২৯ এপ্রিল ২০১৫

৩০০ রানই যথেষ্ট?

স্পোর্টস রিপোর্টার, খুলনা থেকে ॥ পাকিস্তানকে চাপে ফেলতে কত রান দরকার? নিশ্চয়ই সেটি ৪০০ রানের নিচে নয়। অথচ প্রথম টেস্টের প্রথমদিনে ৮০ রান করা মুমিনুল হক বলছেন, ‘প্রথম ইনিংসে ৩০০ রানই যথেষ্ট!’ প্রথমদিনটিতে নিয়ন্ত্রণ ছিল বাংলাদেশেরই। দিনের শেষ বলে এসে সেই নিয়ন্ত্রণ এখন সমানে-সমান হয়ে গেছে। শেষ বলে মুমিনুল হক আউট হয়ে যাওয়াতেই এমনটি হয়েছে। তা না হলে পুরো দিনটিতে আধিপত্য ছিল বাংলাদেশেরই। রান যদিও স্কোরবোর্ডে প্রথমদিনে উঠেছে ২৩৬। তবে উইকেট পড়েছে ৪টি। সেই উইকেট সংখ্যায় থাকত ৩ লেখা। কিন্তু দিনের শেষ বলে জুলফিকার বাবরের বলে এলবিডাব্লিউ হয়ে যান দিনের সেরা ব্যাটসম্যান মুমিনুল। নিয়ম অনুযায়ী, দিনটিতে যে ব্যাটসম্যান বা বোলার ভাল করেন, বিশেষ কোন সমস্যা না থাকলে সংবাদ মাধ্যমের সামনে তাকেই হাজির করা হয়। সেই নৈপুণ্য দেখানো ক্রিকেটারটি দলের অবস্থান জানান। মুমিনুলকেও তাই হাজির করা হয়েছিল। তিনিও দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। কিন্তু একটি কথাতেই যেন সবার চোখ কপালে উঠে যায়। টানা ১০ টেস্টে অর্ধশতক করা মুমিনুল বলেন, ‘দিন শেষে আমরাই ভাল অবস্থানে থাকতাম। যদি আমি আউট হয়ে না যেতাম। তবে এখন ৩০০ রানই যথেষ্ট।’ পাকিস্তান দলে মিসবাহ, ইউনুস, আজহার, হাফিজ, সরফরাজদের মতো ব্যাটসম্যানরা আছেন। এরপরও মুমিনুল বলছেন, এত কম রানই পাকিস্তানকে চাপে ফেলতে যথেষ্ট। কেন যথেষ্ট, সেই যুক্তিও দিলেন মুমিনুল। বললেন, ‘এখানে রান তোলা অনেক কষ্ট। যতই বল ব্যাটে আসুক। বোলার লাইন-লেন্থ বজায় রাখলে ব্যাটসম্যানরা রান তুলতে পারবে না। সেই হিসেবে আমাদের পেসার, স্পিনাররা অনেক ভাল। তারা অনেক ভাল বল করে। সেই বোলিংয়ে পাকিস্তানকে চাপে ফেলা যাবে।’ কিন্তু মুমিনুলের এই ব্যাখ্যা কারোরই মনে ধরল না। বাংলাদেশ এরইমধ্যে ২৩৬ রান করে ফেলেছে। হাতে আছে ৬ উইকেট। ৩০০ রান হতে ৬৪ রান লাগে। ব্যাট হাতে আছেন সাকিব। ব্যাটিংয়ে নামবেন মুশফিক, সৌম্য ও শুভাগত হোম। এরপর তাইজুল, রুবেল, শহীদও আছেন। এখন চারজন ব্যাটসম্যান আছেন, যারা দলকে ৪০০ রানে নিয়ে যেতে পারবেন। অথচ মুমিনুল কিনা ৩০০ রান নিয়েই পড়ে আছেন! মুখ দিয়ে এমন এক কথা বের করলেন, সাংবাদিকরাও তাই প্রশ্নের ওপর প্রশ্ন ছুড়তে দেরি করল না। মুমিনুলও খানিক ইতস্তত বোধ করলেন। শুধু সাংবাদিক সম্মেলনে এমন কথা বলে সবাইকে হতভম্ব করে দেননি মুমিনুল, তার আউটের রিভিউ নিয়েও অবাক করেছেন। স্পষ্ট বোঝা গেছে বাবরের বলটি পায়ে লেগে এলবিডাব্লিউ হচ্ছেন মুমিনুল। অথচ রিভিউ একটি নষ্ট করলেন। তবে দিন শেষে ১৬২ বলে ৮ চারের সাহায্যে যে ৮০ রান করেছেন মুমিনুল, তিনিই দিনের হিরো। আর তাই শতক না করার আফসোস আছে কিনা, জানতে চাওয়া হলে মুমিনুলও বলেন, ‘আফসোসতো আছেই।’ প্রথমদিনে বাংলাদেশের রান তোলার গতিটা একটু প্রশ্নবিদ্ধই থাকে। সেই সঙ্গে একাদশে ৮ ব্যাটসম্যান খেলানোও দৃষ্টিকটু লেগেছে। তাতে বোঝা গেছে দল ড্র’র জন্যই যেন খেলতে নেমেছে। ব্যাটসম্যানরাও দুর্দান্ত ব্যাটিংই করেছেন। উইকেটে বেশি রান না তুললেও উইকেট আঁকড়ে থেকেছেন। দিনটিও শেষ করেছেন। বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের সামনে বিন্দুমাত্র বাধার দেয়াল তুলে দাঁড়াতে পারেনি পাকিস্তানী বোলাররা। কিন্তু, আক্ষেপ হয়ে থাকল শেষ ওভারে মুমিনুলের উইকেট। এখানে সবচেয়ে বড় অবদানটা অবশ্যই মুমিনুলের। আউট হওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৮০ রান। সাকিব আল হাসান ১৯ রানে অপরাজিত আছেন। ওয়াহাব রিয়াজ, মোহাম্মদ হাফিজ, ইয়াসির শাহ ও জুলফিকার বাবর একটি করে উইকেট নেন। টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ শুরু থেকেই ছিল সতর্ক। ৫২ রানের উদ্বোধনী জুটিতে ২৭ ওভার লাগিয়ে ফেলেন তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস। তামিম ২৫ রানে আউট হয়ে গেলেও ইমরুল কায়েস পেয়ে যান ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি। ৯২ রানে দুই উইকেট পতনের পর জুটি বাঁধেন মুমিনুল ও রিয়াদ। তাদের জুটিটা ছিল ৯৫ রানের। তবে, দ্বাদশ হাফ সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ১ রান দূরে থাকতে আউট হন রিয়াদ। মুমিনুল অষ্টম হাফ সেঞ্চুরি পেয়ে যান। কিন্তু পঞ্চম সেঞ্চুরির স্বপ্ন অবশ্য পূরণ হয়নি তার! তা পূরণ না হলেও টানা ১০ ম্যাচে অর্ধশতক করার রেকর্ড ঠিকই গড়েছেন মুমিনুল। তা গড়ে ৩০০ রানই যথেষ্ট বলেও দিয়েছেন।
×