ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তিন সিটি নির্বাচন বর্জন বিএনপির পূর্ব পরিকল্পিত

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২৯ এপ্রিল ২০১৫

তিন সিটি নির্বাচন বর্জন বিএনপির পূর্ব পরিকল্পিত

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ নিশ্চিত পরাজয় জেনে ভবিষ্যতে আন্দোলনের ইস্যু তৈরি করতেই সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ ছাড়া বিএনপি তিন সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন বর্জন করেছে বলে দাবি করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। দলটির দাবি, নির্বাচন বর্জনের বিষয়টি বিএনপির পূর্ব পরিকল্পিত ছিল। বিএনপি নিশ্চিত ছিল যে, তিন সিটিতেই তাদের প্রার্থীরা পরাজিত হবেন। বিগত ৯২ দিনে যেভাবে তারা পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করেছে, জনগণ ব্যালটের মাধ্যমে তাদের প্রত্যাখ্যান করবে। এটা বুঝতে পেরেই বর্জনের নাটক করেছে। মঙ্গলবার বিকেলে ভোট গ্রহণ শেষে ধানম-ির আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের পক্ষ থেকে আয়োজিত আনুষ্ঠানিক সাংবাদিক সম্মেলনে এ দাবি করেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ। তিনি বলেন, সিটি নির্বাচন বর্জনের কারণ হিসেবে বিএনপি যে অভিযোগ করেছে, এ ধরনের কোনও ঘটনা ঘটেনি। আর ভোট বর্জন ও কারচুপির অভিযোগ বিএনপির নতুন কিছু নয়। এটা পূর্ব পরিকল্পিত। হানিফ বলেন, ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারির পরে সরকার পতনের আন্দোলনের নামে খালেদা জিয়া ৩ মাস দেশের মানুষকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন। সন্ত্রাস ও পেট্রোলবোমায় মানুষ হত্যার মাধ্যমে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু জনরোষের শিকার হয়ে কর্মসূচী থেকে বের হওয়ার জন্য কৌশল হিসেবে নির্বাচনে এসেছিলেন। এটা তার কূটকৌশল ছিল। তিনি বলেন, সিটি নির্বাচন শুরু হওয়ার পর থেকেই বিএনপি ষড়যন্ত্র শুরু করেছিল। সরকারের কৌশলের কারণে তারা ষড়যন্ত্রে সফল হয়নি। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে মেয়র মঞ্জুর আলমের সঙ্গে বিএনপি চরম বেঈমানী করেছে। পরাজিত নিশ্চিত জেনেও মঞ্জুর আলমকে বলির পাঁঠা বানিয়েছিল বিএনপি। সে কারণে পোলিং এজেন্টের তালিকা তৈরি করেও তা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দেয়নি দলটির নেতারা। ফলে কেন্দ্রগুলো পোলিং এজেন্ট এমনকি নেতাকর্মীদের না পেয়ে রাগে ক্ষোভে মনজুর ভোট থেকেই শুধু সরে দাঁড়াননি, রাজনীতি থেকেও অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন। অন্যদিকে ঢাকা উত্তরে প্রথমে শুনেছিলাম বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টু নির্বাচন করবে। কিন্তু তিনি মনোনয়নপত্রে এমন একজন সমর্থকের স্বাক্ষর নিয়েছিলেন, যিনি উত্তরের ভোটারই না। আর দক্ষিণে আবদুস সালাম শক্তিশালী প্রার্থী হলেও সমর্থন দেয়া হয়েছিল মির্জা আব্বাসকে। যিনি অনেক মামলার আসামি। ফলে প্রার্থিতা নিয়েও বিএনপির মধ্যে অসন্তোষ ও দ্বন্দ্ব ছিল। দলের পক্ষ থেকে মাহবুবউল আলম হানিফ আরও বলেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া নির্বাচনী প্রচারে নেমে নাটক শুরু করেছিলেন। তার সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী হামলা করে, গুলি করে সাধারণ মানুষের ওপর। এসব করে একটি নাটক সাজাতে চেয়েছিলেন তিনি। নির্বাচনী প্রচারে নেমেও দলীয় নেতাকর্মীদের পাশে পাননি বিএনপি নেত্রী। সিটি নির্বাচনে যে সব প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন, জনগণের রায় মেনে নিতে তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে হানিফ বলেন, গত তিন মাসের অপকর্মের জন্য বিএনপির নেতাকর্মীরা পাশে নেই। এ জন্য তারা পোলিং এজেন্ট দেয়ার মতো অবস্থায়ও নেই। তারা ইচ্ছে করেই পোলিং এজেন্ট দেয়নি। মূল কথা হচ্ছে, নাটকীয় পরিবেশ সৃষ্টি করে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেছে। তারা কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দেখাতে পারেনি। কোন একটি অনিয়মের তথ্য দিতে পারেনি বিএনপি। ভোট দিয়ে বেরোনোর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদের ‘বিব্রতকর’ প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়া প্রসঙ্গে হানিফ বলেন, যারা তিন মাস মানুষ পুড়িয়েছে, তার পক্ষ নিলে জনগণের রোষানলের শিকার হবেন- এটাই স্বাভাবিক। এর দায়-দায়িত্ব সরকারের নয়। সাংবাদিক সম্মেলনে এ সময় দলটির কেন্দ্রীয় নেতা আবদুর রহমান, আহমদ হোসেন, মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, আবদুস সোবহান গোলাপ, বদিউজ্জামান ভুইয়া ডাবলু, অসীম কুমার উকিল, আফজাল হোসেন, একেএম এনামুল হক শামীম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। জনমত সঙ্গে নেই জেনেই বিএনপির নির্বাচন বর্জন- ড. রাজ্জাক ॥ এদিকে, দুপুরে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ঢাকা দক্ষিণে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী সাঈদ খোকনের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, জনমত তাদের সঙ্গে নেই সেটা বুঝতে পেরেই বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেছে। ৯২ দিনের সহিংসতার পর দেশের মানুষ যে তাদের পাশে নেই এটা প্রমাণিত হয়েছে। আর সেটা বুঝতে পেরেই তারা ভোট বর্জনের নাটক করেছে। ভোট বর্জন করে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট আবারও সহিংস আন্দোলন শুরু করলে তাদের ‘যথাযথ’ জবাব দেয়া হবে জানিয়ে ড. আবদুর রাজ্জাক আরও বলেন, বিএনপি তিন মাস অবরোধ-হরতাল দিয়ে মানুষ হত্যা করে গণবিচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। এখন কর্মী বিচ্ছিন্ন হয়ে সিটি নির্বাচন বর্জন করেছে। তারা বুঝতে পেরেছে তাদের সহিংসতার কারণে জনগণ ভোট দেবে না। তিনি বলেন, নগরবাসী লাইন ধরে স্বতঃফূর্তভাবে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিচ্ছে। কিন্তু বিএনপি কিছু কিছু কেন্দ্রে কর্মী সঙ্কটের করণে এজেন্ট দিতে পারেনি, সে দোষ তো আমাদের না। তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। যেসব নেতারা সাংবাদিক সম্মেলন করে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিলেন, তারা এতদিন কোথায় ছিলেন? সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আবদুর রাজ্জাক বলেন, বিএনপি সহিংতা করতে পারে, কিন্তু সফল হবে না। তারা সমূলে নির্মূল হবে। সহিংসতাকারীদের জনগণ ছাড় দেবে না। প্রেস ব্রিফিংকালে এ সময় দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী সাঈদ খোকন ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন- মুকুল বোস, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, এ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস এমপি, সুজিত রায় নন্দী, নজরুল ইসলাম বাবু এমপি, এ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, এবি রিয়াজুল কবির কাওছার, মাহমুদ হাসান রিপন প্রমুখ।
×