ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভোট দিয়ে সাংবাদিকদের প্রধানমন্ত্রী আরও বললেন-জীবন নিয়ে আর কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেয়া হবে না

বিএনপি-জামায়াত ফের সহিংসতা শুরু করলে কঠোর ব্যবস্থা

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২৯ এপ্রিল ২০১৫

বিএনপি-জামায়াত ফের সহিংসতা শুরু করলে কঠোর ব্যবস্থা

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত আবারও সহিংসতা শুরু করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। জনগণের জানমাল রক্ষা করা সরকারের দায়িত্ব। জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সবকিছুই করা হবে। জনগণের জীবন নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেয়া হবে না। জ্বালাও-পোড়াও এবং ধ্বংসাত্মক রাজনীতি ছেড়ে গণতন্ত্রের পথে আসতে ও জনগণের পাশে দাঁড়াতে বিএনপিকে পরামর্শ দেন তিনি। মঙ্গলবার সকাল ৮টা ৫মিনিটে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে ঢাকা সিটি কলেজ কেন্দ্রে ভোট প্রদান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীরা পরাজিত হলে তারা ফের আন্দোলনে নামবে বলে বিএনপির হুমকি সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেনÑ এর মানে হচ্ছে যে, বিএনপি জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দেয় না। তারা নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেবে না। কারণ, জনগণের রায়ের প্রতি তারা শ্রদ্ধাশীল নয়। এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেনÑ বিএনপির বলা উচিত, জনগণ যে মতামত ও রায় দেবে এবং যে সব প্রার্থী বিজয়ী হবে, দল তা মেনে নেবে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, তাদের (বিএনপি) প্রার্থী জয়ী হলে ভাল, আর তা না হলে আন্দোলন, এটা কি ধরনের মনোভাব? তিনি বলেন, আমার পরামর্শ হচ্ছে বিএনপির উচিত কল্যাণমুখী রাজনীতির ধারা অনুসরণ করা। দলটির রাজনীতি ব্যক্তিগত ও নিজ স্বার্থসিদ্ধি বা জ্বালাও-পোড়াও বা জনগণের দুর্ভোগ সৃষ্টির জন্য হওয়া উচিত নয়। অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী হাসতে হাসতে বলেন, আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা অর্থাৎ তিনি যাদেরকে ভোট দিয়েছেন তারা বিজয়ী হলে ভাল লাগবে। তবে তিন সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক না কেন, আওয়ামী লীগ তা মেনে নেবে। কারণ আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য রাজনীতি করে এবং তিন সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে জনগণের রায় আমরা অবশ্যই মেনে নেব। কয়েক বছর আগে অনুষ্ঠিত পাঁচ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই সময় তাঁর দল নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিয়েছিল। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছিলেন। তিনি বলেন, জনগণ তাদের পছন্দ অনুযায়ী ভোট দেবেন। এ ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই। বিএনপি-জামায়াত সাম্প্রতিক আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের রাজনীতি হচ্ছে হত্যা ও মানুষ পোড়ানো। এভাবে তারা আর কত প্রাণ কেড়ে নেবে এবং কত মানুষের জীবন নিয়ে খেলবে? তিনি বলেন, মানুষ হত্যায় বিএনপি অভ্যস্ত। সামরিক জান্তা জিয়াউর রহমান আমার বাবা, মা ও ভাইদের এবং ছোট্ট রাসেলকে হত্যা করেছেন। একইভাবে খালেদা জিয়া ও তাঁর পুত্র তারেক জিয়া ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে আইভি রহমানসহ আওয়ামী লীগের ২২ জন নেতাকর্মীকে হত্যা এবং আমার প্রাণনাশের চেষ্টা করেছেন। শেখ হাসিনা বলেন, কেবল একবার নয় আমাকে হত্যা করতে বার বার হামলা চালিয়েছে বিএনপি। তাদের একমাত্র অভিসন্ধি হচ্ছে আমাদের চিরতরে নির্মূল করা। তারা এ ধরনের হুমকি অনেকবার দিয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপির আন্দোলনে কোন জনসম্পৃক্ততা নেই। তারা কেবল জনগণকে হত্যা ও পোড়াতে জানে। মানুষ হত্যা ছাড়া তারা আর কিছুই বোঝে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক মুহূর্তের জন্য চিন্তা করুন, তারা নৃশংসভাবে কত মানুষ হত্যা করেছে? যারা বিএনপির সমর্থক তাদের হাত একটি জ্বলন্ত মোমবাতির ওপর রেখে আগুনের দগ্ধ হওয়ার জ্বালা অনুভব করে ওই পথ ত্যাগ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদি তাদের হাত জ্বলন্ত মোমবাতিটির ওপর ধরে রাখা যায়, তবেই তারা অগ্নিদগ্ধ মানুষের কষ্ট ও আর্তনাদ বুঝতে পারবেন। তিনি বলেন, মানব জাতি হচ্ছে আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত চক্র আন্দোলনের নামে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে সৃষ্টির সেরা এই জীবকে হত্যা করছে। এটা কোন্্ ধরনের রাজনীতি? জনগণ কখনও এমন আন্দোলন মেনে নেবে না। ভোটের আগের দিন রাতে ভোটারদের মাঝে টাকা বিতরণকালে বিএনপির কয়েকজন সমর্থককে গ্রেফতার করা সম্পর্কে একজন সাংবাদিক প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি ভাল করেই জানে যে, ভোটাররা তাদের প্রার্থীকে ভোট দেবে না। এজন্য তারা টাকার বিনিময়ে ভোট কেনার চেষ্টা করেছে। তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রী তাঁর দলের লোকদের কেউ টাকা দিতে চাইলে ভোটের বিনিময়ে টাকা নিতে বলেছেন। পরের সম্পদ হরণের বিষয়ে তারা ভালই বোঝেন। কারণ, তারা এতিমদের টাকাও আত্মসাত করেছেন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া টাকার বিনিময়ে সবকিছুই করতে পারেন। তাঁর দল ক্ষমতায় থাকাকালে লুটপাট ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জনগণকে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেনÑ আমি আশা করি, আপনারা শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিয়ে আপনাদের মতামত ব্যক্ত করবেন, যা জনগণের সেবার পাথেয় হবে। তিনি বলেন, ভোট আমার সাংবিধানিক ও নাগরিক অধিকার। অনেক ত্যাগের বিনিময়ে এ অধিকার পেয়েছি, এটাই বাস্তবতা। তিনি বলেন, ’৭০ সাল থেকে ভোট দিয়ে আসছি। আজ যখন ভোট দিলাম তখন মনে হলো আমি আমার নাগরিক অধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছি। আমার পছন্দ মতো প্রার্থীকে ভোট দিতে পারলাম, এজন্য আমি অত্যন্ত আনন্দিত। নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হোক, জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিক এবং ভোটের অধিকার প্রয়োগ করুক এটাই আমি চাই। ইলিশ, ঘুড়ি ও পানপাতায় ভোট দিলেন প্রধানমন্ত্রী ॥ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর দল সমর্থিত প্রার্থীদের অর্থাৎ ‘ইলিশ’, ‘ঘুড়ি’ ও ‘পানপাতা’ প্রতীকে ভোট দিয়েছেন। মঙ্গলবার সকাল ৮টা ৫মিনিটে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ধানম-ির ঢাকা সিটি কলেজ কেন্দ্রে (১৫ নম্বর ওয়ার্ড) গিয়ে ভোট প্রদান করেন। তিনি সকাল ৮টা ৫মিনিটে এ ভোট কেন্দ্রে আসেন এবং ১ নম্বর ভবনে ২ নম্বর মহিলা কেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। তিনি ছিলেন এ ভোট কেন্দ্রের প্রথম ভোটার। ভোট প্রদান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি মেয়র প্রার্থী সাঈদ খোকনের ইলিশ, কাউন্সিলর প্রার্থী জাকির হোসেন স্বপনের ঘুড়ি ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে শিরিন গাফ্ফারের পানপাতা প্রতীকে ভোট দিয়েছেন। এ সময় তিনি ইলিশ, ঘুড়ি ও পানপাতার উপকারিতা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ভোট দেয়া সাংবিধানিক ও নাগরিক অধিকার। এ অধিকার প্রয়োগ করতে পেরে আমি খুশি। সকল ভোটারকে ভোট দেয়ারও আহ্বান জানান তিনি। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা-১০ সংসদীয় আসনের ধানম-ি আবাসিক এলাকার ভোটার।
×