ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘ককটেলে যারা আমার ছেলেকে হত্যা করেছে তাদের ভোট দিলে বেঈমানী হবে’

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ২৮ এপ্রিল ২০১৫

‘ককটেলে যারা আমার ছেলেকে হত্যা করেছে তাদের ভোট দিলে বেঈমানী হবে’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘আমার ছেলে অভি কী দোষ করেছিল, তাকে ককটেল মেরে হত্যা করা হয়েছে। সে তো কলেজে যেতে চেয়েছিল, বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে চেয়েছিল। হরতাল-অবরোধ ডেকে আমার ছেলেকে কেন হত্যা করা হলো এভাবে? পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করে তারা কিভাবে জনগণের কাছে ভোট চাইতে আসেন। তাদের এখন ভোট দিলে আমার ছেলের আত্মার সঙ্গে বেইমানি করা হবে, তার আত্মা শান্তি পাবে না। সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আহাজারি করতে করতে কথাগুলো বলছিলেন নূরজাহান বেগম। তাঁর ছেলে সানজিদ অভি গত ১৪ জানুয়ারি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা অবরোধের সময় রাজধানীর বঙ্গবাজারের কাছে পেট্রোলবোমায় আহত হন। এক সপ্তাহ পর ২১ জানুয়ারি ছেলেটি মারা যায়। নিহত অভি ছিলেন কবি নজরুল সরকারী কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র। বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতাল-অবরোধে সহিংস ঘটনায় হতাহতদের স্বজনরা এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। নূরজাহানের মতোই পেট্রোলবোমায় হতাহতদের অনেকের স্বজনই এসেছিলেন ডিআরইউতে। তারা পেট্রোলবোমা হামলাকারীদের বিচার দাবি করেছেন। ‘খালেদা জিয়া আমার স্বজনকে কেন পোড়ালেন, জবাব দিন’, ‘খালেদা জিয়া আমার অগ্নিদগ্ধ স্বজনের দোহাই, আমাদের কাছে ভোট চাইবেন না’- লেখা ব্যানার ঝুলিয়ে স্বজনরা এই সংবাদ সম্মেলন করেন। নূরজাহান বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে কবি নজরুল সরকারী কলেজে পড়ত। কোচিং করে বাসায় ফেরার সময় বঙ্গবাজার এলাকায় দুর্বৃত্তদের ছোড়া পেট্রোলবোমায় দগ্ধ হয়। হাসপাতালে চোখের সামনে ছেলেটা আমার একটু একটু করে শেষ হয়ে গেল। আমি কিছুই করতে পারলাম না। ম্যাডাম জিয়ার কাছে অনুরোধ, আর কাউকে পেট্রোলবোমা মেরে হত্যা করবেন না।’ ‘মায়ের বুক থেকে সন্তানকে কেন চিরদিনের জন্য কেড়ে নেয়া হয়েছে? ছেলের হত্যাকা-ে জড়িত বিএনপি-জামায়াতের বিচার চাই’- কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন নূরজাহান। বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন মোহাম্মদ খোকনের বোন সালমা বলেন, ‘আমার ভাই ফুটপাথে জুতা বিক্রি করত। ২৩ জানুয়ারি যাত্রাবাড়ীতে বাসে বোমা হামলায় ভাইয়ের হাত ও চোখ নষ্ট হয়ে যায়। এখনও তিনি বার্ন ইউনিটে। আমরা এর বিচার চাই।’ আহত সালাহউদ্দিন ভূঁইয়ার স্ত্রী রুমি আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামী কিংবা আমরা তো কোন রাজনীতি করি না। তাহলে আমাদের কেন এভাবে কষ্ট পেতে হবে?’ আহত শফিকুলের বাবা আলাউদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলেটা বার্ন ইউনিটে কাতরাচ্ছে। বাবা হয়ে এ দৃশ্য সহ্য করা কঠিন।’ তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেকে পুড়িয়ে কী লাভ হলো? ছেলেটার ভবিষ্যত নষ্ট হয়ে গেছে। অসহনীয় কষ্ট নিয়ে ছেলের বাকি জীবন পাড়ি দিতে হবে!’ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার প্রতি উদ্দেশ করে ফেরিওয়ালা আলাউদ্দিন বলেন, ভোট নয়, আপনি (খালেদা) ছেলেকে দেখে যান। কী নিদারুণ যন্ত্রণায় সে কাতরাচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন ইসমাইল হোসেনের ছেলে মোহাম্মদ সুজন, রিয়াজ হোসেনের ভাই মিনহাজুল ইসলাম ও মোহাম্মদ আলীর বাবা মোহাম্মদ শফিকসহ আরও কয়েকজন বক্তব্য রাখেন।
×