ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নূর হোসেনকে এখনও ভারত থেকে ফিরিয়ে আনা যায়নি

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২৭ এপ্রিল ২০১৫

নূর হোসেনকে এখনও  ভারত থেকে ফিরিয়ে আনা যায়নি

রুমন রেজা ও খলিলুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ থেকে ॥ নারায়ণগঞ্জে আলোচিত ৭ খুনের ঘটনায় এক বছর পূর্তি আজ। সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে শুরু হয়েছে হত্যাকারীদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর প্রক্রিয়া। নৃশংস এ হত্যাকা-ের ঘটনায় তদন্ত শেষে র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তা, নূর হোসেনসহ ৩৫ জনকে অভিযুক্ত করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন। সাত খুনের ঘটনায় তদন্তের ক্ষেত্রে সরকারের অবস্থান ও পুলিশের ভূমিকা বিভিন্ন মহলে প্রশংসিত হলেও ভারতের কারাগারে আটক নূর হোসেনকে দেশে ফেরত না এনে এবং এজাহারভুক্ত ৫ আসামিকে অব্যাহতি দিয়ে অভিযোগপত্র দাখিল করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের স্ত্রী কাউন্সিলর সেলিনা ইসলাম বিউটি। হত্যাকা-ের এক বছরেও র‌্যাবের অভিযুক্ত ৮ সদস্যসহ ১৩ জন এখনও গ্রেফতার হয়নি। এদিকে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম প্রিয়জনকে হারিয়ে অভাব অনটনে দিশেহারা পরিবারগুলো। অর্থ কষ্টে অমানবিক জীবন যাপন করছে কয়েকটি পরিবার। এদিকে ৭ খুনের মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেন সিটি কর্পোরেশনের পর পর ছটি মাসিক সভায় অনুপস্থিত এবং অবৈধভাবে বন্য প্রাণী সংরক্ষণের দায়ে তার এক বছরের সাজা হলেও তার কাউন্সিলর পদ বহাল রয়েছে। জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল দুপুরে নারায়ণগঞ্জ আদালতে একটি মামলায় হাজিরা দিয়ে ঢাকার বাসায় ফেরার পথে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিঙ্করোডের ফতুল্লার লামাপাড়ায় প্রাইভেটকারের গতিরোধ করে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র ও ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিরল নজরুল ইসলাম, বন্ধু সিরাজুল ইসলাম লিটন, সহযোগী মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, স্বপনের প্রাইভেটকার চালক জাহাঙ্গীরকে অপহরণ করা হয়। এ ঘটনা দেখে ফেলায় সিনিয়র আইনজীবী চন্দন সরকার ও তার প্রাইভেটকার চালক ইব্রাহিমকেও অপহরণ করা হয়। এরপর ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদীর বন্দর থানা কলাগাছিয়া থেকে প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকার, মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর ও ইব্রাহিমের লাশ উদ্ধার হয়। পরদিন ১ মে নজরুলের বন্ধু সিরাজুল ইসলাম লিটনের লাশ উদ্ধার হয়। ঘটনার পর পরই নজরুল ইসলামের শ্বশুর শহিদুল ইসলাম ওরফে শহীদ চেয়ারম্যান অভিযোগ তোলেন, ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর হোসেন র‌্যাবকে দিয়ে ৬ কোটি টাকা দিয়ে নজরুলকে হত্যা করিয়েছে। এ ঘটনায় নিরীহ আরও ৬ জনকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি নূর হোসেন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন মিয়া, হাসমত আলী হাসু, আমিনুল ইসলাম রাজু, আনোয়ার হোসেন আশিক ও ইকবাল হোসেনকে অভিযুক্ত করে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। জেলা ও পুলিশ প্রশাসনে গণবদলি করা হয়। অপরদিকে নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে ফতুল্লা মডেল থানায় অপর একটি মামলা দায়ের করেন। ঘটনার পর পরই সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকাবাসী ও নারায়ণগঞ্জ বারের আইনজীবীরা ঘটনার জন্যকে নূর হোসেন ও র‌্যাব-১১ এর উর্ধতন তিন কর্মকর্তাকে দায়ী করে আন্দোলনে নামে। এলাকাবাসী কয়েক দফা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ রাখে এবং অন্যদিকে আইনজীবীরা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংকরোড অবরোধ ও আদালত বর্জন শুরু করে। পরে অভিযুক্ত র‌্যাবের তিন কর্মকর্তা লে. কর্নেল (অব্যাহতি) মোহাম্মদ তারেক সাঈদ, মেজর (অব্যাহতি) আরিফ হোসেন ও লে. কমান্ডার (অব্যাহতি) এম এম রানাকে প্রথমে নিজস্ব বাহিনীতে ফেরত নেয়ার পর তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়। পরে তাদের ৭ খুনের ঘটনায় ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারা হত্যকা-ের কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিকমূলক জবানবন্দী প্রদান করেন। তাদের জবানবন্দীতে র‌্যাব-১১ অন্যান্য সদস্যদের সম্পৃক্ততার বিষয় উঠে আসলে তাদেরও পর্যায়ক্রমে গ্রেফতার করা হয় এবং তারাও ৭ খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী প্রদান করেন। এ ঘটনায় র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ১৭ সদস্য এবং নূর হোসেনের ৫ সহযোগীসহ মোট ২২ জন গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে কারাগারে আটক রয়েছেন।
×