ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আটচল্লিশ ঘণ্টা পরেই শুরু হচ্ছে তিন সিটির ভোটযুদ্ধ

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২৬ এপ্রিল ২০১৫

আটচল্লিশ ঘণ্টা পরেই শুরু হচ্ছে তিন সিটির ভোটযুদ্ধ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ক্ষণ গণনা শুরু। অপেক্ষা আর ৪৮ ঘণ্টার। মঙ্গলবার সকাল থেকে ভোটযুদ্ধ শুরু। এদিকে আজ রাত ১২টায় তিন সিটি কর্পোরেশনে প্রার্থীদের প্রচার বন্ধ হচ্ছে। শেষ মুহূর্তে প্রচারের মধ্য দিয়ে ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টা চলছে। শনিবার দিনভর মাঠ চষে বেড়িয়েছেন মেয়র ও কাউন্সিলরসহ সংরক্ষিত নারী আসনের প্রার্থীরা। সবার লক্ষ্য একটাই বিজয় অর্জন করা। এজন্য ভোটারদের প্রতিশ্রুতিও দিয়ে যাচ্ছেন তারা। সবার অভাব অভিযোগের কথাও তুলে ধরছেন সংবাদ মাধ্যমের কাছে। প্রতিকার চাইছেন নির্বাচন কমিশনের কাছে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে শনিবার রাত ১২টা থেকে বুধবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এছাড়া ২৭ এপ্রিল রাত ১২টা থেকে ২৮ এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত অন্য সব ধরনের যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শনিবার রাত থেকেই তিন সিটিতে বিজিবি টহল শুরু হয়েছে। সাঈদ খোকন ॥ সবুজবাগ এলাবার ৪, ৫, ৫ ও সাত নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগ ও পথসভার মধ্য দিয়ে দিনের কর্মসূচী শুরু করেন দক্ষিণে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী সাঈদ খোকন। মানিকনগর মসজিদ পুকুরপাড়ে সংক্ষিপ্ত পথসভায় বক্তব্য রাখেন তিনি। নবাবপুরে গণমিছিলে অংশ নেন দুপুরে। বিকেলে লালবাগের ঢাকেশ্বরী বালুর মাঠেও নিজের নির্বাচনী কর্মসূচী চালান তিনি। এসব কর্মসূচীতে সকলের কাছে ভোট চেয়ে সাঈদ খোকন বলেন, আমাকে একবার সুযোগ দিন। আমি আপনাদের হয়ে বাবার মতো কাজ করতে চাই। আমার প্রতিপক্ষ প্রার্থী মির্জা আব্বাস ঢাকার মেয়র ছিলেন। মন্ত্রী ছিলেন। তাকে দেখেছেন। এবার নতুনদের নির্বাচিত করে সেবা করার সুযোগ দিন। তিনি বলেন, আপনাদের প্রতি আমার বিশ্বাস আছে। এদিকে সাঈদ খোকনের পক্ষে বাগেরহাটের সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট মীর শওকত আলী বাদশা রাজধানীর ৪৫, ৪৬ ও ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডে সাঈদ খোকনের পক্ষে জনসংযোগ করেন। ওয়ারী, সূত্রাপুর ও ধুপখোলা এলাকায় হাজারো নারী পুরুষ এতে অংশ নেন। আফরোজা আব্বাস ॥ সরকার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে সংঘাতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস। শনিবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর মীর হাজীরবাগ এলাকায় প্রচারকালে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। আফরোজা আব্বাস বলেন, আমরা মনে করেছিলাম, শান্তিপূর্ণ একটা সিটি নির্বাচন হবে। কিন্তু সরকার সংঘাতপূর্ণ আচরণ করছে। হামলা করছে, কর্মীদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। পোলিং এজেন্টদের হুমকি দেয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, গণমাধ্যম ও জনগণ আমাদের বড় শক্তি। জনগণকে নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে যেতে বলব। ভোট প্রদান করা আপনাদের অধিকার। আমরা ভোট ডাকাতিও করব না, কাউকে ভোট ডাকাতি করতেও দেব না। এ প্রচারকালে আফরোজা আব্বাসের সঙ্গে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ। তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, খালেদা জিয়ার ওপর তিনবার হামলা হলেও নির্বাচন কমিশন কোন ব্যবস্থা নেয়নি। কিন্তু যখন তিনি নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রচারণায় নেমেছেন, তখন নির্বাচন কমিশন তাকে নোটিস প্রদান করেছে। এতেই বোঝা যায়, এই নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতদুষ্ট। অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ আরও বলেন, সিটি কর্পোরেশনের এই নির্বাচন যদি সুষ্ঠু না হয়, সন্ত্রাসী কর্মকা- হয় তাহলে পরিস্থিতি কঠিন হয়ে যাবে। সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে রাজনৈতিক পরিবেশ অসুস্থ হবে। আর এজন্য দায়ী থাকবে সরকার এবং সরকারের অনুগত নির্বাচন কমিশন। নাদের চৌধুরী ॥ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী অভিনেতা নাদের চৌধুরী আগারগাঁও, শেওরাপাড়া, মনিপুরি স্কুল, মগবাজারের শাহ্ সাহেব বাড়ী মাজার, মধুবাগ বাজার, মধুবাগ কাঁচাবাজার, চেয়ারম্যান গলি, নয়া টলি, আমবাগানসহ বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ করেন। এ সকল গণসংযোগে জাসদ সাধারণ সম্পাদক শরীফ নুরুল আম্বিয়া, সহ-সভাপতি ও ঢাকা মহানগর জাসদ সমন্বয় কমিটির সমন্বয়ক মীর হোসাইন আখতার, শিরীন আখতার এমপি, মঞ্জুর আহমেদ মঞ্জু, ওবায়দুর রহমান চুন্নু, আনোয়ারুল ইসলাম বাবু প্রমুখ সঙ্গে ছিলেন। নাদের চৌধুরী বলেন, অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আয় বৃদ্ধি করে নগর কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা বৃদ্ধির কাজটি হবে আমাদের অন্যতম একটি দায়িত্ব। নগরের দুর্নীতি-চাঁদাবাজি কমিয়ে ন্যায্য আয়ের মাধ্যমে সিটি কর্পোরেশনের আয় বৃদ্ধি সম্ভব। শহরের কর প্রদানে ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক, আমলা ও অন্যান্য পেশাজীবীদের কর প্রদানে উৎসাহিত করা এবং কর আদায় করার মাধ্যমে সিটি কর্পোরেশনের আয় বৃদ্ধি করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। ফুটবল তারকারা নির্বাচনী মাঠে ॥ এককালের মাঠ কাপানো ফুটবলাররাও ঘরে বসে থাকেননি। তাদেরও দেখা গেছে নির্বাচনী মাঠে। আওয়ামী লীগ নেতা ও তারকা ফুটবলার দেওয়ান শফিউল আরেফিন টুটুলের নেতৃত্বে ফুটবলাররা দক্ষিণের আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী সাঈদ খোকনের পক্ষে ফরাশগঞ্জ ও সূত্রাপুরের ৪৩ ও ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডে ঘরে ঘরে গিয়ে ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করেন। এ সময় এককালের তারকা ফুটবলার আশরাফউদ্দিন চুন্নু, বাদল রায়, শফিকুল ইসলাম মানিক, কায়সার হামিদ, সত্যজিৎ দাশ রুপু, আব্দুল গাফফার, ইলিয়াস হোসেন, নিকু চৌধুরী, আসাদুজ্জামান বাদশাসহ একালের ফুটবলাররাও প্রচারে অংশ নেন। কাউন্সিলর প্রার্থী মোঃ সাহিদ ও সালেহ জামানের পক্ষের ভোট চান তারা। আনিসুল হক ॥ নির্বাচন কমিশন (ইসি) চাইলে নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে পারেন বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আনিসুল হক। তিনি বলেন, সেনা মোতায়েনের বিষয়ে আমার কোন দ্বিমত নেই। এটা একান্তই নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার। ইসি যদি মনে করে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ করতে সেনাবাহিনী দরকার তাহলে নামাবে, আর যদি মনে করে সেনা ছাড়াই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব তাহলে নামাবে না। এটা একান্তই ইসির বিষয়। শনিবার রাজধানীর তেজগাঁও কলেজে নির্বাচনী প্রচার সভায় তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আমাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমর্থন দিয়েছেন। তবে আমাকে মেয়র পদে নির্বাচত হতে হলে আপনাদের ভোটের দরকার। আপনাদের ভোট পেলে আমি নির্বাচিত হব। আমার মধ্যে সততা আছে। আমার কোন দুর্নাম নেই। প্রশাসন চালানোর মতো আমার অভিজ্ঞতা রয়েছে। এগুলোর দিকে তাকিয়ে আমাকে আপনারা নির্বাচিত করুন। আমি আপনাদের পাশে থাকব। তিনি বলেন, একজন মেয়র হিসেবে যা জানার দরকার। তা আমি জানি। দীর্ঘদিন ধরে আমি ঢাকায় আছি। আমি রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ভোট চাই না। আমি একজন মানুষ হিসেবে ভোট চাই। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন, সাবেক মন্ত্রী ফারুক খান, তেজগাঁও কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রশিদ, সংসদ সদস্য শাহজাহান কামাল, আফজাল হোসেন, মাইনুল হোসেন নিখিল প্রমুখ। আনিসুল হক নির্বাচনের আচরণবিধির প্রতি সম্মান দেখানোর জন্য বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেছেন, খালেদা জিয়া দেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। নির্বাচনের আচরণবিধি অনুযায়ী বিশাল বহর নিয়ে কারও পক্ষে প্রচার চালানোর নিয়ম নেই। গানে গানে মমতাজ ॥ একটা গান শুনাব, শুনেন দিয়া মন। এপ্রিল মাসের ২৮ তারিখ ঢাকায় নির্বাচন। এ গানে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনিসুল হকের পক্ষে ভোট চাইলেন সংসদ সদস্য ও কণ্ঠশিল্পী মমতাজ। মিরপুরের হারুন মোল্লা মাঠে আনিসুল হকের আয়োজিত এক নির্বাচনী সভায় মমতাজের গান ছাড়াও অনেকে বক্তব্য রাখেন। এর আগে শুক্রবার বিকেলে মহাখালীর টিএ্যান্ডটি মাঠে ‘সমাধান যাত্রার গান’ নামে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আনিসুলের জন্য ভোট চান তিনি। হারুন মোল্লার মাঠে মমতাজ ছাড়াও আরও কয়েকজন কণ্ঠশিল্পী আনিসুল হকের জন্য ভোট চান। অনুষ্ঠানে শিল্পীরা বলেন, ঢাকাকে পরিচ্ছন্ন, সবুজ ও বসবাসের উপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য আনিসুল হকই যোগ্য প্রার্থী। তারা বলেন, ঢাকার সমস্যা চিহ্নিত, এখন প্রয়োজন এসব সমস্যার সমাধান। তাবিথ আওয়াল ॥ বিএনপি সমর্থিত উত্তরের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আওয়াল শনিবার যুগান্তর কার্যালয় ও যমুনা ফিউচার পার্কে গণসংযোগ করেন। এছাড়াও বাংলাদেশ প্রতিদিন আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেন তিনি।
×