ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংবাদ সম্মেলনে ব্যাখ্যা

প্রধানমন্ত্রীর অফিসে ‘রানা প্লাজা’ নামে কোন তহবিল নেই

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২৪ এপ্রিল ২০১৫

প্রধানমন্ত্রীর অফিসে ‘রানা প্লাজা’ নামে কোন তহবিল নেই

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সাভারের রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আলাদা কোন তহবিল নেই এবং অতীতেও ছিল না। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে রানা প্লাজায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) কবির বিন আনোয়ার এ তথ্য জানান। ২০১৩ সালে রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য অর্থ বণ্টন নিয়ে স্বচ্ছতার অভিযোগ তুলে সম্প্রতি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের এক প্রতিবেদন ও এর সূত্র ধরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ব্যাখ্যা দিতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রীর দুটি তহবিল রয়েছে। একটি প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল। অপরটি প্রধানমন্ত্রীর স্বেচ্ছাধীন তহবিল। এর বাইরে আর কোন তহবিল নেই। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে সারা বছর কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষসহ সমাজের দুস্থ ও পীড়িত মানুষদের আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়ে থাকে। দানশীল ব্যক্তিবর্গ ও প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সময় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকেন। কোন দুর্যোগ হলে এ দানের পরিমাণটা বেশি থাকে। এ তহবিলে কোন সরকারি বাজেট বরাদ্দ থাকে না। অপরদিকে স্বেচ্ছাধীন তহবিলে সরকারী আর্থিক বরাদ্দ থাকে এবং এ তহবিল থেকেও বিভিন্ন সহায়তা অনুদান প্রদান করা হয়। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) সম্প্রতি তার একটি প্রতিবেদনে বলেছে, রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় হতাহতদের জন্যে গঠিত প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে সংগৃহীত অর্থের পরিমাণ প্রায় ১২৭ কোটি টাকা। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য এ পর্যন্ত ব্যয় করা হয়েছে মাত্র ১৯ কোটি টাকা। এই তহবিলের ১২৭ কোটি টাকা এখনও অব্যবহƒত রয়ে গেছে, যা ক্ষতিগ্রস্তদেরই প্রাপ্য। এর ব্যাখ্যায় প্রাধানমন্ত্রীর কার্যালয় বলেছে, রানা প্লাজা নামে কোন তহবিল নেই বা কখনো ছিল না। রানা প্লাজা ক্ষতিগ্রস্তদের প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে সহায়তা দেয়া হয়। কিন্তু রানা প্লাজার নামে কোন বিশেষ তহবিল নেই। মহাপরিচালক জানান, রানা প্লাজায় ক্ষতিগ্রস্তদের প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে এ পর্যন্ত ২২ কোটি ৯৩ লাখ ৫৮ হাজার ৭২০ টাকার সহায়তা দেয়া হয়েছে। যে কোন বিষয়ে রিপোর্ট করার ক্ষেত্রে সন্দেহ ও বির্তকের অবসান ঘটাতে সঠিক তথ্য তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কারও কোন কিছু জানার থাকলে আমাদের কাছ থেকে জেনে নিতে পারেন। সে জন্য আমরা সব সময় প্রস্তুত রয়েছি। তাছাড়া তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ীও তাদের তথ্য পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে আর্থিক সহায়তা দেয়ার ক্ষেত্রে কঠোরভাবে আর্থিক অনুশাসন মেনে চলা হয় এবং তহবিলগুলোর নিয়মিত অডিট হয়ে থাকে। রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের অনেকের সহায়তা না পাওয়া প্রসঙ্গে শ্রম সচিব মিকাইল শিপার বলেন, রানা প্লাজায় নিহতদের মধ্যে ১৬৬ জনকে শনাক্ত করা যায়নি। ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে তাদের শনাক্ত করা হচ্ছে। এই ১৬৬ জন সম্পর্কে জানতে ৪৮টি জেলার জেলা প্রশাসনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে ৩৯টি জেলা থেকে ১০৪ জনের তথ্য পাওয়া গেছে। বাকি ৬২ জনের তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। এসব জেলাগুলো থেকে তথ্য আসলে তাদের বিষয়ে জানা যাবে। বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন সবাইকে প্রপাগান্ডার বিষয়ে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, রানা প্লাজার ঘটনার পর থেকে দেশের ভিতরে ও বাইরে একটা প্রপাগান্ডা চলছে। এতে আমাদের দেশের বাইরের প্রতিযোগীদের সুবিধা হচ্ছে। বিজিএমই এ সভাপতি আতিকুল ইসলাম টিআইবির প্রতিবেদনের সমালোচনা করে বলেন, কিসের ভিত্তিতে তারা এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে? তারা কোথায় পেয়েছে এসব তথ্য? সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় ২ হাজার ৪৩৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। এরমধ্যে ১৮ জন হাসপাতালে মারা যান। ধ্বংস স্তূপ থেকে ১ হাজার ১১৭টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ দুর্ঘটনায় সব মিলে ১ হাজার ১৩৫ জন মারা যান।
×