ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পাকিস্তানকে ভুগিয়েই ছাড়ল টাইগাররা

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ২৩ এপ্রিল ২০১৫

পাকিস্তানকে ভুগিয়েই ছাড়ল টাইগাররা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ওয়ানডে সিরিজে ভুগতেই আছে পাকিস্তান। সিরিজের দুই ওয়ানডেতে তো বাংলাদেশের কাছে পাত্তাই পায়নি পাকিরা। তৃতীয় ওয়ানডেতেও সেই ধারাই বজায় থাকল। প্রথম দুই ওয়ানডের মতো তৃতীয় ওয়ানডেতেও যেন প্রথম ইনিংস শেষ হতেই খেলা শেষ হয়ে গেছে ভাবনায় মশগুল হতে হলো। পাকিস্তান এবারও আগে ব্যাট করে অধিনায়ক আজহার আলী’র শতকে পাকিস্তান ২৫০ রান করল ঠিক, কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটিং স্তম্ভের সামনে এ রান শুরুতেই খুব বেমানান লাগল। প্রায় ৫ বছর পর আবার পাকিস্তানের কোন ওয়ানডে অধিনায়ক শতক হাঁকালেন। সেই ২০১০ সালের জুনে যে শহীদ আফ্রিদি শতক করেছিলেন, সেটিই মঙ্গলবার পর্যন্ত পাকিস্তানের ওয়ানডে অধিনায়কদের মধ্যে শেষ শতক ছিল। বুধবার আজহার শতক করে সেই খরা ঘোচালেন। করলেন ক্যারিয়ারের প্রথম শতকও। কিন্তু তাতে স্কোরবোর্ড মজবুত হলো না। বাংলাদেশের বিপক্ষে জেতার মতো স্কোর দাঁড় হলো না। প্রথম ওয়ানডেতে আগে ব্যাট করে বাংলাদেশ ৩২৯ রান করাতেই মূলত ম্যাচ শেষ হয়ে যায়। পাকিস্তান ২৫০ রানেই গুটিয়ে যায়। দ্বিতীয় ওয়ানডে তো সেই রানও করতে পারেনি পাকিস্তান। যখন ২৩৯ রানের বেশি করতে পারেনি পাকিস্তান, সেখানেই ম্যাচের রেজাল্ট বাংলাদেশের দিকেই ঝুঁকে যায়। তৃতীয় ওয়ানডেতেও কী সেই রকম কিছুই হয়ে গেল না? টি২০’র অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদি। টি২০ খেলাটি শুক্রবার। এর কয়েকদিন আগেই ঢাকায় এসে পড়লেন আফ্রিদি। সোমবারই ঢাকায় পৌঁছালেন। শুধু কী আসলেন, বুধবার তৃতীয় ওয়ানডেতে পাকিস্তান ক্রিকেটাররা খেলতে নামার আগে মঙ্গলবার অনুশীলনে ক্রিকেটারদের ব্যাটিংও শেখালেন! ভরসা দিলেন। যে ভরসা পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটারদের কাছ থেকে আজহার, হাফিজ, ওয়াহাবরা পাচ্ছেন না, সেই ভরসা আফ্রিদি দিলেন। তাকে খানিক কাজও হলো। কিন্তু ম্যাচ জেতার মতো বিশেষ কিছু ঘটল না। তবে আফ্রিদি যেন এক ঝাটকায় অনেক কিছুরই পরিবর্তন করে দিলেন। ক্রিকেটারদের মধ্যে একটা আত্মবিশ্বাস ফুটিয়ে তুললেন। যা অনেক দরকার ছিল। দুই ওয়ানডেতে টানা হারের পর তৃতীয় ওয়ানডেতে বিধ্বস্ত দলটি নিজেদের গুছিয়েই নিল। ব্যাটিংয়ে স্পষ্ট তা ধরাও পড়ল। সাঈদ আজমলের বোলিংয়ে সেই ধার আর নেই। তাই তাকে বসিয়েই রাখা হলো। এমনকি রাহাত আলী, এবার বিশ্বকাপে পাকিস্তানের হয়ে এক সেঞ্চুরি করা সরফরাজ আহমেদকেও একাদশের বাইরেই ছিটকে ফেলা হলো। শুরুতে প্রশ্ন জাগল, তাহলে পাকিস্তান খেলবেটা কী? যত সময় গড়াতে থাকল, পাকিস্তান টস জিতে ব্যাট নিয়ে সেই ধারণা ভুল প্রমাণ করল। অন্তত দুই ওয়ানডেতে যে একেবারে থুবড়ে পড়েছিল পাকিস্তানের ইনিংস, তা থেকে এবার উতরে গেল। প্রথম ওয়ানডেতে ৫৯ রানেই যেখানে প্রথম দুই উইকেট ও দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৭৭ রানেই ৫ উইকেট তুলে নিয়েছিল বাংলাদেশ, এবার এক উইকেট তুলতে বাংলাদেশ বোলারদের ঘাম ঝড়াতে হলো! ৯১ রানে গিয়ে প্রথম উইকেট তুলল বাংলাদেশ। নাসির হোসেন প্রথম উইকেটটি তুলে নিয়ে যেন ‘ব্রেক থ্রু’ এনে দিলেন। সামি আসলাম ৪৫ রান করে এমন সময়ে আউট হতেই অবশ্য দ্বিতীয় উইকেটের পতন ঘটাতে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি বাংলাদেশ বোলারদের। হাফিজ যে ব্যর্থ হয়ে চলেছেন, সেটা বজায় থাকল। ১০৫ রানে হাফিজের (৪) উইকেটটি তুলে নিলেন আরাফাত সানি। তবে এরপর আবারও অনেকটা সময় ভুগতে হলো বাংলাদেশকে। তৃতীয় উইকেটে গিয়ে ৯৮ রানের জুটিই গড়া হয়ে গেল। আজহার ও হারিস সোহেল মিলে এ বড় জুটি গড়লেন। যখন এ জুটি এগিয়ে চলছে, তখন ভয়ও ধরছিল। ‘বাংলাওয়াশ, বাংলাওয়াশে’র যে আশা মনে বুনে রাখা হয়েছে, তা হোঁচট না খায়! শেষপর্যন্ত আজহার শতকও করে ফেললেন। মনেই করা হচ্ছিল, এ ব্যাটসম্যান যদি আরও দূর এগিয়ে যেতে পারেন; তাহলে বিপদ আসতে দেরি নেই। একটা সময় তো এমন ভাবনাও হচ্ছিল, ২৮০-৩০০ রানই না করে ফেলে পাকিস্তান। তাহলে যত শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনই হোক বাংলাদেশের, ম্যাচ বের করা কঠিন হয়ে পড়বে। এমনকি হারও হতে পারে! সাকিব যে কি জিনিস তা ১৫০তম ওয়ানডে খেলতে নেমেও দেখিয়ে দিলেন। দুই ওয়ানডেতে বাংলাদেশ জিতেছে। কিন্তু সাকিবকে সেভাবে খুঁজেই পাওয়া যায়নি। তৃতীয় ওয়ানডেতে এমন কাজই করে দিলেন, যার ওপর ভর করেই পাকিস্তানের যেন এক নিঃশ্বাসে উড়ে যাওয়ার উপক্রম হলো। সাকিবের ছোড়া বলটি বুঝতে পারলেন না আজহার। ১০০ রান করার পর আর ১ রান যোগ করতেই বোল্ড হয়ে গেলেন। এখানেই ম্যাচও যেন ঘুরে গেল। এরপর শুধুই পাকিস্তানের টপাটপ উইকেট যেতে থাকল। সাকিব যে জুটি ভাঙ্গলেন, সেখানে যেন পাকিস্তান ইনিংসের ভাঙ্গনও শুরু হয়ে গেল। তখনও ১০ ওভারের বেশি বাকি। রানও পাকিস্তান স্কোরবোর্ডে ২০০’র বেশি যুক্ত হয়ে গেছে। কিন্তু আজহারকে হারানোর শোক যেন ঘিরে ধরল পাকিস্তানকে। ২০৩ রান থেকে ২৫০ রান পর্যন্ত ৪৭ রানেই শেষ ৮ উইকেটের পতন ঘটে গেল। রুবেল শেষদিকে কী ঝড়ই না তুললেন। ২ উইকেট তুলে নিলেন। আর সাকিব নিলেন আরেকটি উইকেট। ৫ ওভারে মাত্র ১৬ রান দিয়েছিলেন সাকিব। সেখানে ১০ ওভারে গিয়ে ৩৪ রান দিয়ে ২ উইকেট তুলে নিয়েছেন এ ‘গেম চেঞ্জার’। আজহারকে যে সাকিব আউট করলেন, এরপর থেকেই ভুগতেও শুরু করে দিল পাকিস্তান। ২০৭ রানে গিয়ে ৫২ রান করা হারিসকে যেই মাশরাফি আউট করলেন, পাকিস্তান ইনিংসে গোলমাল বেঁধে গেল। আসা-যাওয়ার মিছিল শুরু হয়ে গেল। পাকিস্তান ২৫০ রান করল, কিন্তু পুরো ৫০ ওভারও আবার খেলতে পারল না। ১ ওভার বাকি থাকতেই অলআউট হয়ে গেল। সেই সঙ্গে সিরিজজুড়ে ভুগতেই থাকল পাকিস্তান। পাকিস্তানকে ভোগাতেই থাকল বাংলাদেশ।
×