ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আশুলিয়া ব্যাংক ডাকাতি জামায়াত-শিবিরের পরিকল্পিত নাশকতা

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২৩ এপ্রিল ২০১৫

আশুলিয়া ব্যাংক ডাকাতি জামায়াত-শিবিরের পরিকল্পিত নাশকতা

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ ঢাকার পোশাক শিল্পপল্লী খ্যাত সাভারের আশুলিয়ার কাঠগড়া বাজারস্থ বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের শাখায় দিনেদুপুরে ফিল্মি কায়দায় দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জনতার হাতে ধরা পড়া দুই ডাকাত বোরহান ও সাইফুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ ডাকাত বোরহান সম্পর্কে জানতে পেরেছে, সে নিজে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং তার পরিবারটিও জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। অপর ডাকাত সাইফুল সম্পর্কে খোঁজ খবর নিচ্ছে পুলিশ কর্মকর্তারা। দুই ডাকাত ধরা পড়া ছাড়াও গণপিটুনিতে সুমন নামে অপর এক ডাকাত নিহত হওয়ার ঘটনার পর তার সম্পর্কে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। ডাকাত দলটি অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র, গ্রেনেড, বোমার ব্যবহার করেছিল, যা সাধারণত যুদ্ধে ব্যবহার করে থাকে সামরিক বাহিনী। ডাকাতির এই ঘটনাকে বড় ধরনের নাশকতার উদ্দেশ্যে ঘটানো হয়েছে বলে মনে করছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। ডাকাতদের হাতে হতাহত ও ডাকাতি এবং গণপিটুনিতে এক ডাকাত নিহত হওয়ার ঘটনায় আটক ডাকাত সাইফুল ইসলাম সুমনসহ ১২ ডাকাত ও অজ্ঞাতনানাম ৩শ’ জনকে আসামি করে দুইটি পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছে সাভারের আশুলিয়া থানায়। ডাকাতির ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জনতার হাতে আটক হওয়া বোরহান মিজান নামে এক ডাকাত জামায়াত-শিবির কর্মী বলে পরিচয় পেয়েছে পুুলিশ কর্মকর্তারা। ডাকাতদের গুলি, বোমা ও ছুরিকাঘাতে নিহতদের প্রত্যেককে ১ লাখ টাকা করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পুলিশের তদন্তের পাশাপাশি ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় তদন্ত কমিটি করেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ডাকাতের হাতে গুলিবিদ্ধ গুরুতর আহত ১৬ জনের মধ্যে অনেকের অবস্থাই এখনও আশঙ্কাজনক। ডাকাতদের হাতে হতাহতের ঘটনায় হাসপাতালে আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে আর্তনাদ আহাজারীতে হৃদয় বিদারক ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে। পোশাক শিল্পপল্লী খ্যাত সাভারের আশুলিয়ায় ডাকাতির পুনরাবৃত্তি রোধকল্পে নিরাপত্তা জোরদার করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। যা বলেছেন ডিআইজি ॥ সাভারের আশুলিয়ায় কমার্স ব্যাংকে দুর্ধর্ষ ডাকাতি ও আট খুনের ঘটনা নিছক ডাকাতির উদ্দেশ্যই নয়, নাশকতা ও জনমনে ভয় ভীতি সঞ্চারের জন্য ঘটানো হয়েছে। এ ঘটনা দেশের অপরাধমাত্রায় নতুন সংযোজন ও ঘটনার সঙ্গে জঙ্গী ছাড়াও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সম্পৃক্ততা রয়েছে। বুধবার দুপুরে সাভার মডেল থানায় আশুলিয়ার ব্যাংক ডাকাতি মামলার তদন্তের অগ্রগতি প্রসঙ্গে আয়োজিত পুলিশের বিশেষ বিফ্রিংয়ে এ কথা বলেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি এসএম মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান। ডিআইজি বলেন, ছিনতাই-লুটপাট-ডাকাতি অনেক হয় তবে এভাবে মানুষ হত্যা করার নজির নেই। টাকার লোভেই যে এ ঘটনা ঘটেছে তা মনে করছি না। কমার্স ব্যাংকে যে ঘটনা ঘটেছে তা মারাত্মক ধরনের অপরাধ এবং বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনা এভাবে ইতোপূর্বে ঘটেনি। ডাকাতির ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ডাকাতরা ইচ্ছে করলে ভল্ট খুলে কোটি কোটি টাকা নিতে পারত। কিন্তু সেদিকে যায়নি তারা। ডাকাতদের কথামতো আত্মরক্ষার্থে সবাই মেঝেতে শুয়েছে। তারপরও ডাকাতরা নির্বিচারে গুলি ও এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ব্যাংকের ম্যানেজারসহ অন্যদের হত্যা করেছে। ডাকাতির নামে আসলে তাদের মূল উদ্দেশ ছিল হত্যা করা, নাশকতা সৃষ্টি করা। তারা যে ধরনের অস্ত্র ও বিস্ফোরক ব্যবহার করেছে তা বাংলাদেশে আগে ব্যবহার হয়নি। র‌্যাবের বম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের কর্মকর্তা মেজর খালিদের সঙ্গে কথা বলেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, তিনি আমাদের জানিয়েছেন, বিদেশ থেকে বিস্ফোরক উপাদান এনে ইম্প্রোভাইজ ডিভাইস তৈরি করা হয়েছে। যে বোমা তারা ছুড়েছে তা অত্যাধুনিক। এগুলো কিন্তু বাইরে থেকে কেনা সম্ভব নয়। সে দিকে এটি একটি নতুন ডাইমেনশন বলে জানান ডিআইজি নূরুজ্জামান। লুট করা ৬ লাখ ৮৭ হাজার ১৯৩ টাকার মধ্যে ৬ লাখ ৭ হাজার ২৫৫ টাকা উদ্ধার করার কথা জানিয়ে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি আরও বলেন, এখানে উল্লেখ করার বিষয়টি হলো স্থানীয় জনসাধারণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে এসেছে এবং ডাকাতদের প্রতিহত করার চেষ্টা করেছে। বিক্ষুব্ধ জনতা ৩ জনকে ধরেছে। একজনকে গণপিটুনি দিয়ে মেরেছে। জনগণের এই প্রতিরোধ ভাল লক্ষণ। কারণ জনগণ এই ধরনের নাশকতা কখনও গ্রহণ করেনি এবং করবেও না বলে জানান তিনি। ডিআইজি নুরুজ্জামান বলেন, আমরা ইতোমধ্যে একজনের পরিচয় নিশ্চিত করেছি। তার নাম বোরহান মৃধা। সে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী থানার বাসিন্দা। বোরহান শিবিরের কর্মী। তার গোটা পরিবারই শিবিরের সাথে সংযুক্ত। তদন্ত চলছে। ব্যবহৃত পাঞ্জাবিতে রক্ত লাগার পর সে বেশ পরিবর্তনের চেষ্টা করে। তার কাছ থেকে আমরা কিছু শিবিরের জিহাদী বই পেয়েছি। আটক অপরজনের বাড়ি জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে বলে উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, যেহেতু সূত্র পাওয়া গেছে, সঠিক তদন্তের আর অসুবিধা হবে না। ডাকাতি করার উদ্দেশ্যে এলে তারা কিন্তু মানুষ মারত না। যারা বাংলাদেশের পতাকা, মানচিত্র মানে না, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর মানুষের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যারা যুদ্ধ কিংবা জিহাদ ঘোষণা করেছে, সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে তারাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, উদ্ধার হওয়া লুণ্ঠিত টাকা, বেশ কিছু জিহাদী বই ও ডাকাতির ঘটনার ব্যবহৃত একটি ছোরা প্রদর্শন করা হয়। বুধবার সাভার থানায় আয়োজিত প্রেস ব্রিফিং উপস্থিত ছিলেন ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম, সাভার মডেল থানার সহকারী পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান, আশুলিয়া থানার সহকারী পুলিশ সুপার রাসেল শেখ, ওসি মোস্তফা কামাল, সাভার মডেল থানার ওসি কামরুজ্জামান। ডাকাতির তদন্ত শুরু ॥ ডাকাতির সময়ে বিক্ষুব্ধ জনতার হাতে ধরা পড়া দুই ডাকাতের মধ্যে এক ডাকাতের নাম বোরহান মৃধা ও অপর ডাকাতের নাম সাইফুল ইসলাম। সাইফুলের বাড়ি জয়পুরহাটের পাঁচবিবির হরেন্দ্রবাজার গ্রামে ও বোরহানের বাড়ি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি থানার সংকরপাশা গ্রামে। এর মধ্যে বোরহান শিবিরকর্মী। তাঁর পুরো পরিবার জামায়াত শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। সাইফুলের পরিচয়ের ব্যাপারটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তদন্তকারী কর্মকর্তা। সাভারের আশুলিয়ায় ব্যাংকে যে ডাকাতির ঘটনাটি ঘটেছে তাতে তদন্ত করে দেখা গেছে এটা শুধুই যে ডাকাতি তা মনে হচ্ছে না। কারণ ডাকাত দল ব্যাংকে এসে ডাকাতি করে টাকা পয়সা লুণ্ঠিত করে চলে যাবে। ডাকাত দলকে বাধা দিলে তারা হতাহত করতে অস্ত্র ব্যবহার করবে। কিন্তু এই ডাকাতির ঘটনাটি তেমন নয়, এখানে ডাকাত দলটি ব্যাংকে প্রবেশ করেই এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ, বোমাবাজি, চাপাতি-চাকু দিয়ে কোপানো শুরু করেছে। শুধু তাই নয়, ডাকাত দল তাদের সঙ্গে নিয়ে এসেছে পেট্রোল ও গ্রেনেড। ঘটনাস্থল থেকে পেট্রোল ও গ্রেনেড উদ্ধার করেছে পুলিশ। ডাকাতির ঘটনার হামলায় ব্যবহৃত বোমা-গ্রেনেড বিদেশী সরঞ্জাম দিয়ে তৈরি। বাজারে এসব অস্ত্র পাওয়া সম্ভব নয়। এসব অস্ত্র ব্যবহার করে থাকে কেবল সামরিক বাহিনী। সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা ফুটেজ ॥ ডাকাতির ঘটনা তদন্তে ব্যাংকের সিসিটিভির ফুটেজগুলো পরীক্ষা করা হচ্ছে। সাত-আটজন হামলা চালায় সামনে থেকে। তাদেরকে সহায়তা করার জন্য লোক দেখা যাচ্ছে পেছনে। পেছনের লোক জড়িত বলে মনে করা হচ্ছে। বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পেরেছেন-এমনটা দাবি করেছেন ডিআইজি নুরুজ্জামান। ডাকাতির ঘটনার সময়ে ধারণ করা ভিডিও ফুটেজগুলোতে ডাকাতির ঘটনার অনেক দৃশ্য ক্যামেরাবন্দী হয়ে আছে। মামলা দায়ের ॥ বুধবার আশুলিয়া থানায় মামলা হয় দুইটি। একটি মামলার বাদী হয়েছেন উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাকারিয়া। অপর মামলাটির বাদী হয়েছেন বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক শাখার সিনিয়র অফিসার ফরিদুল ইসলাম। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের করা মামলায় সাতজনকে হত্যা এবং ব্যাংকের ভল্ট খুলে ৬ লাখ ৮৭ হাজার ১৯৩ টাকা লুটের অভিযোগ আনা হয়েছে। গ্রেফতার দুই ডাকাত সদস্য সাইফুল ও বোরহান উদ্দিনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১০/১২ জন ডাকাতকে আসামি করা হয়েছে মামলার এজাহারে। পুলিশের দায়ের করা অপর মামলায় এক ডাকাত সদস্যকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় অজ্ঞাত পরিচয় ২০০/৩০০ গ্রামবাসীকে আসামি করা হয়েছে। মঙ্গলবার বেলা ২টার দিকে আশুলিয়ায় বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের কাঠগড়া শাখায় অস্ত্র ও বোমা নিয়ে ডাকাতরা হানা দেয়। তারা ব্যাংকের ব্যবস্থাপক, নিরাপত্তারক্ষীসহ তিনজনকে হত্যা করে ক্যাশ থেকে টাকা নিয়ে পালানোর সময় স্থানীয়রা প্রতিরোধ করে। এ সময় ডাকাতদের গুলি ও বোমায় আরও তিনজন নিহত হন। জনতার ধাওয়ার মুখে সন্দেহভাজন ডাকাতদের দুজন মোটর সাইকেল থেকে পড়ে গেলে গণপিটুনিতে নিহত হন তাদের একজন। ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ডাকাতরা ৬ লাখ ৮৭ হাজার ১৯৩ টাকা লুট করে নিয়ে যাচ্ছিল। এর মধ্যে ৬ লাখ সাত হাজার ২৫৫ টাকা ঘটনার পর পরই উদ্ধার করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামির নামে হয়রানি করা হবে না ॥ গণপিটুনিতে ডাকাত নিহত হওয়ার ঘটনায় অজ্ঞাতনাম ২০০/৩০০ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে মামলা করলে সাধারণত নিরীহ নির্দোষ মানুষজনকে হয়রানি করা হয়। দুর্নীতিবাজ এক শ্রেণীর পুলিশ কর্মকর্তারা সুযোগ নিয়ে সামারি করে। বুধবার সাভার মডেল থানায় এক সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয় নিরীহ নির্দোষ সাধারণ মানুষজনকে কোন ধরনের হয়রানি করা হবে না বলে জানিয়েছেন ডিআইজি নুরুজ্জামান। সন্দেহভাজন একজনকে গ্রেফতার ॥ সাভারের আশুলিয়ায় ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় জড়িত সন্দেহে সোহেল রানা নামে ব্যাংকের এক নিরাপত্তাকর্মীকে মঙ্গলবার গভীর রাতে আশুলিয়ার দুর্গাপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কারণ আধা ঘণ্টা আগে সে বাসায় গিয়েছিল। কেন বাসায় গিয়েছিল এবং ডাকাতির ঘটনা সম্পর্কে তার সম্পৃক্ততা আছে কিনা জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ডাকাতদের গ্রেফতারের জন্য আশুলিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশ, র‌্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক দল অভিযান চালাচ্ছে বলে জানা গেছে। ব্যাংকের ৫ কর্মকর্তাকে পুলিশ হেফাজতে ॥ আশুলিয়ায় বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের কাঠগড়া বাজার শাখায় ডাকাতির ঘটনায় ব্যাংকের ৫ কর্মকর্তাকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে। বুধবার সকালে যাকে আটক করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কারণ ঘটনার আধঘণ্টা আগে সে ব্যাংক থেকে বাসায় গিয়েছিল। এ ঘটনার সঙ্গে তার কোন যোগসাজশ আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন আশুলিয়া থানার কর্তব্যরত কর্মকর্তা। অনুদান ও ক্ষতিপূরণ ॥ বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের আশুলিয়া শাখায় ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি করেছেন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়াও ডাকাতির ঘটনায় যারা নিহত ও আহত হয়েছেন তাদেরকে ক্ষতিপূরণ ও চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করা হবে। সাভারের আশুলিয়ার বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের কাঠগড়া বাজার শাখায় ডাকাতের হামলায় নিহতদেরকে প্রাথমিকভাবে ১ লাখ টাকা করে অনুদান দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। বুধবার কমার্স ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে পাঠানো এক চিঠিতে এ অনুদানের কথা বলা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সামাজিক দায়বদ্ধতা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তহবিল থেকে এ অর্থের সংস্থান করা হবে। আশুলিয়ার কাঠগড়া বাজার এলাকায় অবস্থিত নজিমুদ্দিন সুপার মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে ডাকাতির এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ডাকাতদের গুলি ও বোমা হামলায় ৭ জন এবং গণধোলাইয়ে ১ ডাকাতসহ ৮ জন নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ২০ জন। নিহতদের মধ্য রয়েছেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপক ওয়ালি উল্লাহ (৪৫), ব্যবসায়ী ব্যাংক গ্রাহক পলাশ (৪৮), নিরাপত্তাকর্মী বদরুল ইসলাম (৩৮), মার্কেটের দোকানদার জিল্লুর রহমান (৪০) ও ঝাল-মুড়ি বিক্রেতা মনির হোসেন (৫৫), ব্যবসায়ী জমির উদ্দিন (২৬) ও নূর মোহাম্মদ (৪৫)। মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন ॥ সাভারের আশুলিয়ার বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের কাঠগড়া বাজার শাখায় ডাকাতের হামলায় ৮ জন নিহত হওয়া ছাড়াও এখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন আরও গুলিবিদ্ধ ১৬ জন। তাদেরকে গুরুতর আহত অবস্থায় এনাম মেডিক্যালের নিবিড় পর্যবেক্ষণকেন্দ্র আইসিইউতে প্রাণরক্ষার লড়াই করে যাচ্ছেন। গুলিবিদ্ধ আহতদের এক এক করে আইসিইউ থেকে বের করে অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হচ্ছে। অপারেশন শেষে আবার আইসিইউতে লাইফ সাপর্টে রাখা হচ্ছে। গুলিবিদ্ধ আহতরা হচ্ছেন, মো. পারভেজ (১৯), মোঃ নুর ইসলাম (৬০), মোঃ আয়ুব আলী (৮৪), মোঃ শফিকুল ইসলাম (৩৫), সাজ্জাদ আলী (৩৫) মোঃ সাইফুল (২৭), মোঃ রমজান (৫০), শাহজাহান (২৮), মমিনুল (৩৫), আইয়ুব আলী (৭০), মোঃ হামিদ আলী (৫০), মো. শাহাদাত (৩০), মোঃ রফিক (২০), আব্দুল ছালাম (৪০), আব্দুল হক(৪৫), ডাকাত মোঃ সাইফুল (৩০)। আহতদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। স্বল্প আয়ের শফিক, রফিকসহ অনেকের জীবনেই নেমে এসেছে অন্ধকার জীবন। ময়নাতদন্ত সম্পন্ন ॥ নিহতদের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে। লাশ হস্তান্তর প্রক্রিয়া চলছে। এনাম মেডিক্যাল পরিদর্শন করেছেন ঢাকা জেলার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তারা। স্বজনদের আহাজারি ॥ সাভারে কমার্স ব্যাংকে ডাকাতির ঘটনায় নিহতদের লাশ রাখা হয়েছে এনাম মেডিক্যালের মর্গে। লাশ দেখতে নিহতের স্বজনরা অশ্রুশিক্ত চোখে। নিহতের স্বজনদের আহাজারিতে এনাম মেডিক্যাল এলাকার বাতাস ভারি হয়ে উঠে। নিহত ব্যাংক কর্মকর্তা ওয়ালি উল্লার স্ত্রী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘সকালে বাসা থেকে ব্যাংকে এসেছেন। দুপুরে একবার কথা হয়েছে। তার পরই শুনতে পাই ব্যাংকে ডাকাতি হয়েছে। এ আমার কি হলো। আমি এখন কি করব।
×