ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত বাঁধ পানির চাপে ভেঙ্গে যায়

সাতক্ষীরায় বেড়িবাঁধে ভাঙন ॥ গ্রাম ও মৎস্য ঘের প্লাবিত

প্রকাশিত: ০৪:১০, ২৩ এপ্রিল ২০১৫

সাতক্ষীরায় বেড়িবাঁধে ভাঙন ॥ গ্রাম ও মৎস্য ঘের প্লাবিত

স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা ॥ সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার চাকলায় কপোতাক্ষ নদের ভেঙ্গে যাওয়া প্রায় ২শ’ ফুট বেড়িবাঁধ এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে মেরামত করলেও বুধবার বিকেলে জোয়ারের পানির চাপে বাঁধের অংশ ফের ধসে পড়েছে। বর্তমানে ভাঙ্গনকবলিত অংশ দিয়ে প্রবল বেগে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। এর আগে মঙ্গলবার রাত ১টার দিকে উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের চাকলা পয়েন্টে প্রথমে ভাঙ্গন দেখা দেয়। বাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয় একটি গ্রাম ও ২শ’ বিঘা মৎস্য ঘের। স্থানীয় চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে দুই শতাধিক গ্রামবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে ফের বাঁধ সংস্কারের চেষ্টা করছেন। স্থানীয় বাসিন্দা আকবর ঢালী জানান, মাঝরাতে প্রবল জোয়ারে চাকলা গ্রামের কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে নদীগর্ভে ধসে পড়ে। স্থানীয় প্রতাপনগর ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন জানান, কপোতাক্ষ নদের চাকলা পয়েন্টের বেড়িবাঁধ দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় ছিল। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বার বার বলা সত্ত্বেও সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। রাতে প্রায় ২শ’ ফুট এলাকা ভেঙ্গে নদীগর্ভে বিলীন হলে দুই শতাধিক এলাকাবাসীকে নিয়ে রিং বাঁধ দিয়ে সংস্কারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। রিং বাঁধ সংস্কার করা না গেলে পরবর্তী জোয়ারে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ডিভিশন-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল মালেক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানান, এলাকাবাসীর সহযোগিতায় সেখানে রিং বাঁধ সংস্কারের চেষ্টা চলছে। রিং বাঁধ নির্মাণ করার জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। জোয়ারে প্লাবিত উপকূল লাখো মানুষের দুর্ভোগ স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা থেকে জানান, অমাবস্যার প্রভাবে প্রতিদিন দফায় দফায় প্লাবিত হচ্ছে পটুয়াখালীর দক্ষিণের উপজেলা রাঙ্গাবালী ও গলাচিপার বিস্তীর্ণ নি¤œাঞ্চল। গত পাঁচদিনে অন্তত দশবার ৫০টিরও বেশি চরাঞ্চলের লাখো মানুষকে জোয়ারে ভাসতে হয়েছে। ডুবে গেছে ঘরবাড়ি, ক্ষেত-খামার, পুকুর-ডোবা। বহু জায়গায় ভেসে গেছে মাটির রাস্তা। নষ্ট হয়েছে বাঙ্গি-তরমুজসহ রবিশস্য। বিশেষ করে বেড়িবাঁধবিহীন চর ও দ্বীপাঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার নিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী ও ক্ষতিগ্রস্তরা এসব তথ্য জানিয়েছে। শনিবার ১৮ এপ্রিল মধ্য রাত থেকে শুরু হয়েছে অমাবস্যার প্রভাব। ফুলে ফেঁপে উঠেছে নদী, সাগর ও খাল। জোয়ারের উচ্চতা কোথাও কোথাও স্বাভাবিকের চেয়ে চার-পাঁচ ফুট পর্যন্ত বেড়ে গেছে। গলাচিপা ও রাঙ্গাবালীর ৫০টিরও বেশি চর এবং দ্বীপ রয়েছে, যেগুলো স্বাভাবিক জোয়ারেই জনজীবন হুমকির মুখে পড়ে। তার ওপরে এবারে জোয়ারের উচ্চতা বাড়ায় সবগুলো চর-দ্বীপ প্লাবিত হতে শুরু করে। বুধবার দুপুর পর্যন্ত পাঁচদিনে নি¤œাঞ্চলের এসব চর দশবার প্লাবিত হয়েছে। একেকবার জোয়ারের স্থায়িত্ব চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা হওয়ায় চর-দ্বীপগুলোর বাসিন্দাদের চরম দুর্ভোগের মুখে পড়তে হয়েছে। জোয়ারের পানিতে ডুবে গেছে হাজার হাজার ঘরবাড়ি। ফসলের বিশেষ করে বহু তরমুজের ক্ষেত ভেসে গেছে। মরিচ, ডাল, তিল, তিসিসহ রবিশষ্যেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ভেসে গেছে পুকুর ডোবার মাছ। এসব চর-দ্বীপ এখন পর্যন্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধের আওতায় না আসায় এ দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। চরবাংলা, চরনজির, চরবড়মায়া, চরছোটমায়া, চরকাসেম, চরহেয়ার, চরআগুনমুখা, চরকারফারমাসহ এসব ছোট ছোট চর-দ্বীপগুলোতে বসবাসরত এক লাখেরও বেশি মানুষকে প্রতিটি জোয়ারেই রীতিমতো ভাসতে হয়েছে। দুর্যোগ মৌসুম শুরুর মাত্র এক মাসের মাথায় জোয়ারের এমন সর্বগ্রাসী রূপ আতঙ্কিত করে তুলেছে সাগরপাড়ের মানুষদের। এলাকাবাসী জানিয়েছে, জোয়ারের এ দুর্যোগ থেকে রক্ষায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ নির্মাণ, মেরামত ও সংস্কার জরুরী হলেও এতে কর্ণপাত নেই সংশ্লিষ্টদের। ফলে জোয়ারের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিছুতেই এ অঞ্চলের মানুষদের পিছু ছাড়ছে না। প্রতিটি মুহূর্ত কাটছে চরম দুরবস্থায়।
×