ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাওয়াশের দিন আজ পাকিস্তানকে

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২২ এপ্রিল ২০১৫

বাংলাওয়াশের দিন আজ পাকিস্তানকে

মিথুন আশরাফ ॥ আদর, সোহাগ করে এরপর ধোলাই যাকে বলে, পাকিস্তান ক্রিকেট দলকে তাই করা হচ্ছে। বাংলাদেশে খেলতে আসতেই চাচ্ছিল না পাকিস্তান। শর্তের ওপর শর্ত দিচ্ছিল। অবশেষে সব শর্ত মেনে পাকিস্তানকে খেলতে এনেছে বিসিবি। এনে কী করছে। শুধুই ওয়াশ করছে। ক্রিকেট মাঠে শুধুই হারছে পাকিস্তান। আজ যে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দুপুর আড়াইটায় সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে শুরু হবে, বাংলাদেশ জিতলেই বাংলাওয়াশ হবে পাকিস্তান। আর উৎসব! সেটার জন্য আজকের ম্যাচটি শেষ হওয়ার অপেক্ষাই শুধু। বাংলাদেশ হারলেও সমস্যা নেই। এক ম্যাচ হাতে রেখেই যে সিরিজ জয় হয়েছে, সেই শিরোপা তো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে পাবেনই মাশরাফি। শুধু ক্রিকেটপ্রেমীরা কিংবা পুরো জাতিই নয়, ক্রিকেটাররাও উৎসব করার অপেক্ষায় আছেন। দুই ওয়ানডে জিতে যে উৎসব হয়নি, আজ পাকিস্তানকে বাংলাওয়াশ করতে পারলেই সেই উৎসব হবে। নাসির হোসেন তো বলেই দিলেন, ‘আমাদের সবার বিশ্বাস, আমরা পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করব।’ তা করতে পারলেই আনন্দ, উৎসবে ভাসবে দেশ! মাঠের বাইরে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) সঙ্গে দক্ষতার সঙ্গে খেলেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। এর আগে নিরাপত্তার জন্য পাকিস্তানে দুটি সিরিজ খেলতে যায়নি বাংলাদেশ। এজন্য পাকিস্তানের লোকসান হিসেবে ৩ লাখ ২৫ হাজার ডলার দিচ্ছে বিসিবি। ক্রিকেটারদের থাকা, খাওয়া, আসা-যাওয়ার খরচও বিসিবিই বহন করছে। লক্ষ্য কী, বিশ্বকাপে দুর্দান্ত খেলা বাংলাদেশ মাঠে পাকিস্তানকে ১৯৯৯ সালের পর ১৬ বছর পর হারিয়ে দেয়া। যে সুযোগটি মিলেছে তা কাজে লাগাক। কাজে লাগিয়েছেনও মাশরাফিরা। মাঠের বাইরে বিসিবির জয় হয়েছে। মাঠে পাকিস্তান ক্রিকেটারদের সঙ্গে খেলেছে বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা। তাতেও জয় মিলেছে। সবদিক দিয়ে জয় হয়েছে বাংলাদেশেরই। এবার চূড়ান্ত বিজয়ের পালা। প্রথম ওয়ানডেতে ৭৯ রানে ও দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৭ উইকেটে জিতেছে বাংলাদেশ। দুটি ম্যাচেই বড় জয় মিলেছে। পাকিস্তানকে সহজেই হারিয়েছে বাংলাদেশ। এবারও সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখার পালা। আর তা রাখলেই হয়ে যায়। এখন পর্যন্ত যে চূড়ান্ত বিজয়ের আনন্দ দেখা যায়নি, তা মিলে যাবে। দ্বিতীয় ওয়ানডেতেই বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার ১৫০তম ওয়ানডে খেলা হয়ে গেছে। এবার তৃতীয় ওয়ানডেতে সাকিব সেই মাইলফলক স্পর্শ করবেন। এমন ম্যাচে জয়টি খুব বেশি দরকার। শুধু যে বাংলাওয়াশ করা যাবে, এজন্যই নয়; র‌্যাংকিংয়ে উপরে ওঠার ক্ষেত্রে রেটিং পয়েন্টও মিলবে। সেই সঙ্গে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করার গৌরবও অর্জন করা যাবে। আর ১৯৮৬ সাল থেকে আন্তর্জাতিক ওয়ানডে খেলে এখন পর্যন্ত টানা দুই সিরিজে টেস্ট খেলুড়ে দলকে যে হোয়াইটওয়াশ করতে পারেনি বাংলাদেশ, সেই অর্জনও যুক্ত হবে। আর দশমবারের মতো হোয়াইটওয়াশ করার কৃতিত্বও যুক্ত হয়ে যাবে। এমন ম্যাচে আবার একটু বিপদেও পড়তে হতে পারে বাংলাদেশকে। ম্যাচটিতে মোহাম্মদ হাফিজ বল করার সুযোগ পেয়ে গেছেন। বোলিং এ্যাকশন শুধরে গেছে তার। অলরাউন্ডারের ভূমিকায় আবারও দেখা যাবে হাফিজকে। এ সংবাদ হাফিজের জন্য আনন্দ বয়ে আনতেই পারে। তা পারফরম্যান্সেও প্রভাব ফেলতে পারে। সেই সঙ্গে আগামী মাসেই যে পাকিস্তানে খেলতে যাবে জিম্বাবুইয়ে, আবারও ২০০৯ সালের পর পাকিস্তানের মাটিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হবে, সেই সুসংবাদও পাকিস্তানের পারফরম্যান্সে ইতিবাচক সাড়া এনে দিতে পারে। সেই পালাবদলের আশাতেই আছে এখন পাকিস্তান। তবে আজকের ম্যাচের আগে যে পাকিস্তান স্পিন বোলিং কোচ মুশতাক আহমেদ ‘তৃতীয় ওয়ানডে নিয়েও চিন্তা আছে’ বলেছেন, সেটি এখন পাকিস্তান দলের ক্রিকেটারদের মাঝেও ছড়িয়ে গেলে বাংলাদেশের জন্যই ভাল হবে। প্রথম দুই ওয়ানডে তো বাংলাদেশকে আটকে দেয়ার চিন্তা থেকেই হেরেছে পাকিস্তান। বাংলাদেশের কোন ব্যাটসম্যানকে ছেড়ে কোন ব্যাটসম্যানকে আটকাবে, সেই পরিকল্পনাই তো করতে পারেনি এখনও পাকিস্তান। তারপর আবার নতুন পাকিস্তান দলটিকে নিয়ে হচ্ছে তুমুল সমালোচনা। যেখানে তরুণ একটি দল নিয়ে এগিয়ে যেতে চাচ্ছেন কোচ ওয়াকার ইউনুস, সেখানে সমালোচনা চলছেই। কেউ পাকিস্তান ক্রিকেটের পাশে নেই এখন। শুধুই সমালোচনা চলছে। সাবেক পাক ক্রিকেটাররা তো পাকিস্তান দলের সমালোচনার সঙ্গে বাংলাদেশ দলকেও বাহবা দিচ্ছেন। এ সমালোচনায় পাক ক্রিকেটাররাও তো ব্যথিত হবেন, এটাই স্বাভাবিক। আর তাতেই মন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাচ্ছে পাক ক্রিকেটারদের। যা বাংলাদেশেরই কাজে দেবে। যেখানে পাক তরুণ ক্রিকেটাররা এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে এগিয়ে চলতে চাচ্ছেন, এজন্য কঠোর পরিশ্রমও করছেন। খেলা থাকুক আর নাই থাকুক, মিরপুরে এসে ঘাম ঝরাচ্ছেন। সেখানে বাংলাদেশের তরুণ ক্রিকেটাররা দলকে এগিয়েই নিয়ে যাচ্ছেন। যেদিন খেলা, তার আগের দিন শুধু অনুশীলন করছেন। বাকি সময়টুকু খোশমেজাজেই কাটাচ্ছেন। যে মেজাজ ক্রিকেটারদের আরও আত্মবিশ্বাসী করে তুলছে। সাব্বির রহমান রুম্মন তো বলেই দিয়েছেন, ‘আশা করি পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করতে পারব।’ সাব্বির, নাসিরদের এমন আত্মবিশ্বাস সব ক্রিকেটারের মাঝেই আছে। আর তাই তো যে দলকে ১৬ বছর হারানো যায়নি, তাদের বিপক্ষে ৩ দিনেই ২ জয় মিলেছে। আজ জিতলে ৬ দিনে ৩ জয় মিলবে। সেই সঙ্গে পাকিস্তানকে বাংলাওয়াশ করার গৌরবও যুক্ত হবে। সেই দিনটি আজ।
×