ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

২৬-২৯ এপ্রিল রিজার্ভ ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে তিন ব্যাটালিয়ন সেনা মোতায়েন থাকবে

তিন সিটি নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২২ এপ্রিল ২০১৫

তিন সিটি নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে রিজার্ভ ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে যাচ্ছে ইসি। আগামী ২৬ এপ্রিল থেকে ভোটের পরদিন ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত মোট চার দিনের জন্য তিন সিটিতে তিন ব্যাটালিয়ন সেনা মোতায়েন করা হবে। নির্বাচন কমিশনার মোঃ শাহনেওয়াজ মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, তিন সিটিতে নির্বাচনের দিনসহ মোট চার দিনের জন্য সেনা মোতায়েনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, গত ১৯ এপ্রিল নির্বাচনের সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করা হয়েছে। বৈঠকে বিভিন্ন বাহিনীর পক্ষ থেকে মাঠের পরিস্থিতি ভাল বলে জানানো হয়েছে। তারপরও নির্বাচন নিয়ে যাতে জনমনে কোন ভীতি কাজ না করে এজন্য সেনা মোতায়েনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ভোটকেন্দ্রের বাইরে ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনা মোতায়েন থাকবে। সুষ্ঠু ও ভাল নির্বাচনের স্বার্থে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সেনা মেতায়েনের সিদ্ধান্ত জানিয়ে মঙ্গলবার তিন ব্যাটালিয়ন সেনা চেয়ে সশস্ত্রবাহিনী বিভাগকে চিঠি দেয়া হয়েছে। এ নির্বাচনে সেনা সদস্যরা রিজার্ভ এবং স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে। তিনি সিটিতে সেনা মোতায়েনের বিষয়ে গত রবিবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক শেষে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে কমিশন বৈঠকে বসে। বৈঠকে সেনা মোতায়েনের পক্ষে জোরালো মত থাকলেও কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই এ বৈঠক শেষ হয়। এরপর গত সোমবার দুপুরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীনসহ কমিশনের সদস্যরা পুনরায় বেঠকে বসেন। কিন্তু বৈঠকে সেনা মোতায়েনের বিষয় নিয়ে তাঁদের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এ নিয়ে কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়। মঙ্গলবারের বৈঠকে সেনা মোতায়েনর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। গত সোমবার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ইসি সচিব মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন, আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে সেনা মোতায়েনের বিষয়টি এখনও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে উল্লেখ করেন। নির্বাচনে সেনা মোতয়েন করা হবে কিনা তা ঘোষিত সময়ের মধ্যে জানিয়ে দেয়া হবে বলে উল্লেখ করেন। ইসি সচিব বলেন, সেনা মোতায়েনের বিষয়টি কমিশনই সিদ্ধান্ত নেবে। তবে এখন পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত হয়নি এ বিষয়ে। পুরো বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। আরও দু-একদিন পরে সেনা মোতায়েনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে উল্লেখ করেন। গত ১৯ এপ্রিল রবিবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকে বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়, নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি ভাল রয়েছে। ওই বৈঠকে সেনা মোতায়েনের বিষয় নিয়েও তেমন কোন আলোচনা হয়নি। তবে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, সিটি নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয়া হলে কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দায়িত্ব পালনের প্রস্তুত রয়েছে তারা। ওই বৈঠক থেকে বেরিয়ে এসে র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি) কর্নেল জিয়াউল আহসান বলেন, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সব প্রার্থীই জয়ের বিষয়ে আশাবাদী। তাই কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে না। সরকারী দল হোক আর বিরোধী দল হোক, যারাই এ নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে তারাই ধরা খাবে। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সেনাবাহিনী নামানোর কোন প্রয়োজন নেই। বৈঠকে বেশিরভাগ সদস্যই সেনা নামানোর বিপক্ষে রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, সেনাবাহিনীকে মানুষ নামে ভয় পায় আর কাজে ভয় পায় র‌্যাবকে। তবে তিনি বলেন, নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে কিনা, সেটা কমিশনের ব্যাপার। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশ ও র‌্যাব যথেষ্ট। এছাড়া বিজিবিও থাকবে। জ্বালাও-পোড়াও, পেট্রোলবোমা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। তবে বৈঠক শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন বলেন, নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন। এখন পর্যন্ত ভোটের সার্বিক পরিস্থিতি ভাল রয়েছে। তবে তিনি উল্লেখ করেন, এটা ঝড়ের আগে থমথমে অবস্থাও হতে পারে। আমরা কোনরকম ঝুঁকি নিতে পারি না। সেনা মোতায়েন হয় ভোটের কয়েক দিন আগে। সবাই যাতে প্রস্তুত থাকে তার জন্য বলেছি। সেনাবাহিনী মোতায়েন হবে কিনা সে বিষয়ে দু-এক দিনের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলেছি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখতে। কেউ বল প্রয়োগ করলে দ্বিগুণ বল প্রয়োগের মাধ্যমে তাকে প্রতিহত করতে হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বেশি ফোর্স, বেশি অস্ত্র সরঞ্জাম দিতে চেয়েছে। আমরা বলেছি বেশি জিনিস দিলেই হবে না। কার্যকর ব্যবস্থা দিতে হবে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে বিএনপির পক্ষ থেকে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়ে আসছিল। এছাড়া বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থীরা প্রায় প্রতিদিনই নির্বাচনী প্রচারে নেমে অভিযোগ করেন, এখনও নির্বাচনের লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড সৃষ্টি হয়নি। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে তাঁরা সেনা মোতায়েনের দাবি তোলেন। এছাড়া বিএনপির পক্ষ থেকেও একাধিকবার সংবাদ সম্মেলনে করে সেনা মোতায়েনের দাবি তোলা হয়। কমিশনের সঙ্গে দেখা করে তাঁরা সেনা মোতায়েনের দাবি তোলেন। এছাড়া কমিশন গত ১১ এপ্রিল চট্টগ্রাম, ১২ এপ্রিল ঢাকা উত্তর ও ১৩ এপ্রিল ঢাকা দক্ষিণের প্রার্থীদের নিয়ে মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। এতে উপস্থিত মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর প্রার্থীর বেশিরভাগ সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সেনা মেতায়েনের দাবি তোলেন। ওই দিন সিইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করা হবে কিনা সে ব্যাপারে ১৯ এপ্রিলের বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এছাড়াও জানা গেছে, নির্বাচনী প্রচারের শেষ মুহূর্তে এসে বিএনপি চেয়ারপর্সন বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচনী প্রচারের নামেন। প্রথম দিন প্রচারে নেমেই তিনি উত্তরায় বাধার সম্মুখীন হন। এছাড়া গত সোমবার বিকেলে রাজধানীর কাওরান বাজারে নির্বাচনী প্রচারের সময়ও তিনি প্রচ- বাধার মুখে পড়েন। এ সময় তাঁর বহরে থাকা গাড়ি ভাংচুর করা হয়। তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত সদস্যরা আহত হন। হামলার সময় তাঁর গাড়িতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও লাঠিসোঠা নিয়ে আক্রমণ চালালে খালেদা জিয়ার গাড়ির গ্লাস ভেঙ্গে যায়। জানা গেছে, গত সোমবার ইসির বৈঠকে সেনা মোতায়েন নিয়ে দ্বিধাবিভক্তি দেখা দেয়। ফলে কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয় ওই বৈঠক। সেদিন ইসি মোঃ জাবেদ আলী সীমিত পরিসরে এবং শাহনেওয়াজ পর্যাপ্ত পরিসরে সেনা মোতায়েনের পক্ষে মত দিয়ে নথিতে সই করেন। কিন্তু এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত না হওয়ায় মঙ্গলবার আবারও বৈঠকে বসে ইসি। জানা গেছে, বৈককে নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নেয়া হয়। বৈঠকে সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরে শাহনেওয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, রিজার্ভ ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনাবাহিনী নির্বাচনে তাদের দায়িত্ব পালন করবে। এর আগে বর্তমান নির্বাচন কমিশন রাজশাহী, খুলনা, সিলেট ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন পরিচালনা করে। সে নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরাই জয়লাভ করেন। তবে ওই সব নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে বিএনপির পক্ষ থেকে বার বার সেনা মোতায়েনের দাবি করা হলেও নির্বাচন কমিশন তাদের দাবির প্রতি কর্ণপাত করেনি। ওই সব নির্বাচন সেনা মোতায়েন ছাড়াই অবাধ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্যভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হয় এবং নির্বাচনে অধিকাংশ সিটি কর্পোরেশনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা জয়লাভ করেন। তবে হুদা কশিশনের সময় নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের নিদ্ধান্ত নিলেও শেষ পর্যন্ত সরকারের নির্বাহী আদেশ না থাকায় সেনা মোতায়েন করা সম্ভব হয়নি। যদিও ওই নির্বাচন সেনাবাহিনী ছাড়াই সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়। সেনা মোতায়েন চেয়ে হুদার কমিশন সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের কাছে চিঠি দিলেও সে সময় ইসির চিঠির কোন সাড়া দেয়া হয়নি। এবার ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে শেষ পর্যন্ত কমিশন মঙ্গলবার সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিলেও এ নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করা হবে কিনা তা নিয়ে এখনও যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। গত সোমবার আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, ইসির হুকুমে সোবাহিনী আসবে এটা ঠিক নয়। জানা গেছে, নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতয়েনের সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও সেনা সদস্যরা বিশেষ বাহিনী হিসেবে ভোটকেন্দ্রের বাইরে দায়িত্ব পালন করবেন। আইন অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য না হওয়ায় তাঁরা ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না।
×