ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বাধিক রান ্র সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস ্র সর্বাধিক সেঞ্চুরি, সর্বাধিক চার-ছক্কা

তামিমের ফেরার নেপথ্যে...

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২১ এপ্রিল ২০১৫

তামিমের ফেরার নেপথ্যে...

মোঃ মামুন রশীদ ॥ মাঝে অনেকটা সময় খুব খারাপ কেটেছে। রানের খরার চেয়ে ধারাবাহিকতার অভাবটাই ছিল প্রকট। এ কারণে সমালোচনার তীর নিয়মিতই বিদ্ধ করেছে বাংলাদেশের অপরিহার্য ওপেনার তামিম ইকবালকে। ব্যক্তি তামিমের গণ্ডি ছাড়িয়ে সেটা কখনও কখনও তাঁর কাছের মানুষদেরও আঘাত করেছে। সে কারণে মনের মধ্যে একটা জিদ কাজ করেছে নিজেকে ফিরে পাওয়ার। অনেক প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে সব সময় সচেষ্ট ছিলেন বদলে যাওয়া ‘টিম বাংলাদেশের’ জন্য কিছু করতে। অবশেষে পেরেছেন। টানা দুই ম্যাচে শতক হাঁকিয়ে তিনি শাহরিয়ার নাফিস ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের রেকর্ড ছুঁয়েছেন। এরপরই তিনি দীর্ঘদিন ধরে সমালোচনার বিষয়ে মুখ খুললেন। অনুরোধ জানালেন ব্যাটসম্যান তামিমকে নিয়ে সমালোচনা চললেও তা যেন কোনভাবেই পরিবারকে ছুঁয়ে না যায়। এখন সেই তামিম বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেটে সবদিক থেকেই ব্যাটসম্যান হিসেবে সেরা। সর্বাধিক রান, সর্বাধিক সেঞ্চুরি, সর্বাধিক চার ও ছক্কা এবং সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস তামিমের। অনেক আগেই নিজেকে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে অন্যতম সেরা ওপেনার হিসেবে প্রমাণ করেছেন। মাঝের খারাপ সময়টা কাটিয়ে এখন নিজেকে আবার প্রতিষ্ঠিত করলেন সেই স্থানে। ফিরে আসার পেছনে আছে কিছু ঘটনা। সেটাই এখানে তুলে ধরা হলো- তামিম অতীতে যা করেছেন সেটা সবাই জানেন। তাঁর সামর্থ্য এবং যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন নেই দেশের ক্রিকেটপ্রেমী মানুষের এবং এমনকি প্রতিপক্ষ দলেরও। কিন্তু কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছিলেন মাঝে। অনেকটা সময় ধারাবাহিকভাবে নৈপুণ্য দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন। তবে দুয়েকটি ইনিংস যে খেলছিলেন না বিষয়টা এমন নয়। কিন্তু তামিম যা পারেন সেটা নিয়মিত না পাওয়াতেই যেন মন ভরেনি দেশের ক্রিকেটপাগল মানুষের। প্রতিপক্ষ বোলারদের দুমড়ে-মুচড়ে দেয়া, প্রতিপক্ষ শিবিরে ত্রাসোদ্দীপক চেহারাটা দেখিয়ে আতঙ্ক ছড়ানো সেটা যেন হারিয়ে গিয়েছিল। সে কারণেই বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৯৫ রান করার পরের ম্যাচেই ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে যখন ২ রানে আউট হয়ে গেলেন তখনও তাঁকে সমালোচনার বিষাক্ত থাবা আঘাত করল। পরে আর হতাশায় বিশ্বকাপের বাকি ম্যাচগুলোতেও ভাল করতে পারেননি। তবে হতাশ হলেও ভেঙ্গে পড়েননি তামিম। এর কারণ দলের সতীর্থরা। সবাই মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন তামিম একটা কিছু করবেন। সেই প্রত্যাশা কোন ম্যাচেই বিন্দুমাত্র কমেনি। আর সবচেয়ে বেশি সাহস ও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা ও টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম। মন থেকে এ দুজনকে ও সতীর্থদের বিশ্বাসকে কৃতজ্ঞতা জানালেন তামিম। তিনি বলেন, ‘আমার দলের সদস্যরা সব সময় বলেছে যে তারা আমাকে বিশ্বাস করে এবং সব সময় পাশে আছে। আমার কাছে মনে হয় আমার সাফল্যের জন্য ওদেরও বড় অবদান। যদি দুজনের নাম নিতে হয় তাহলে মুশফিক ও মাশরাফি ভাইয়ের নাম নিতে হয়। এরা আসলেও অসম্ভব সমর্থন দিয়েছে। যা কল্পনা করা যায় না।’ এটাত গেল নিজ সতীর্থদের কথা। এছাড়াও ফিরে আসার পেছনে সমালোচনা অনেক বড় ভূমিকা রেখেছে। সে কথাটাও বললেন তামিম, ‘সমালোচনা আমার হাতে না। আমি মানুষকে থামাতেও পারব না। আমি ভাল খেললে ভাল বলবে খারাপ খেললে খারাপ বলবে এটা নিয়ম। আমিও এটা চাই। কিন্তু এটা ব্যক্তিগত হওয়া উচিত না। আমার জন্য আমার পরিবার কেন ভুগবে? এটা ঠিক না। আমি জানি এই সময়টা আমার জীবনে আবার আসবে। আমি আবার খারাপ খেলব। এটা আমার নিয়ন্ত্রণে থাকবে না। ক্রিকেটের ক্যারিয়ার একটা বৃত্তের মতো। যেখানে আপনি খারাপ খেলবেন, আবার ভাল খেলবেন, আবার খারাপ খেলবেন আবারও খারাপ খেলবেন, অবশেষে খুব ভাল খেলেন আবার খুব ভাল খেলেন। এভাবেই বৃত্তটা ঘুরে।’ তামিম জানিয়েছেন এ কারণে আরও তাগাদা অনুভব করেছেন দারুণ কিছু একটা করতে হবে। অবশেষে তাই করলেন। নাফিস ও মাহমুদুল্লাহর পর তৃতীয় বাংলাদেশী হিসেবে ওয়ানডেতে টানা দুই শতক হাঁকালেন। দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও (১১৬*) সেঞ্চুরি হাঁকানোর পর ওয়ানডে ক্যারিয়ারে শতক সংখ্যা হয়েছে সাকিব আল হাসানের সমান ৬টি। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বাধিক। প্রথম ওয়ানডেতে তামিম করেছিলেন ১৩২। টানা দুই শতক হাঁকিয়ে তামিম ওয়ানডেতে রান করার দিক থেকেও এখন সবাইকে ছাড়িয়ে। ১৪৩ ম্যাচে ৩১.২৩ গড়ে তাঁর রান ৪৩৭৩। তাঁর পেছনেই সাকিব ১৪৯ ম্যাচে ৩৪.৮০ গড়ে ৪২১১। ব্যাটে ঝড় তোলাতে জুড়ি নেই তামিমের। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে মাত্র ৩১ বলে অর্ধশতক হাঁকিয়ে সেটার জানান দিয়েছেন। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বাধিক চার-ছক্কার মালিকও তিনি। এখন পর্যন্ত ৪৯৬টি চার ও ৫৭ ছক্কা হাঁকিয়েছেন। ৩৭৫ চার হাঁকিয়ে সাকিব এবং ৫০ ছক্কা হাঁকিয়ে মুশফিক আছেন দুইয়ে। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসটাও বেরিয়ে এসেছে এ আক্রমণাত্মক মেজাজের ব্যাটসম্যানের উইলো থেকে। ২০০৯ সালের ১৬ আগস্ট জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে বুলাওয়েতে ১৩৮ বলে ৭ চার ও ৬ ছক্কায় করেছিলেন ১৫৪! দ্বিতীয় স্থানে সাকিবের অপরাজিত ১৩৪। তিনি সেটা করেছিলেন কানাডার বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেন্ট জনসে।
×