ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে মধ্যম আয়ের পথে

প্রকাশিত: ০৪:২৮, ২১ এপ্রিল ২০১৫

দেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে মধ্যম আয়ের  পথে

সমুদ্র হক ॥ মাঠপর্যায়ের চিত্র পরিষ্কার বলে দেয় দেশ মধ্যম আয়ের দেশের দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে এবং ২ হাজার ২১ সালের কিছুটা আগেই তা পূরণ হবে। ইতোমধ্যে মিলিনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল বা এমডিজির (সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) কয়েকটি টার্গেট নির্ধারিত সময়ের আগে বাস্তবায়িত করা গেছে। এ জন্য বাংলাদেশ জাতিসংঘ পুরস্কারও পেয়েছে। বর্তমানে এগিয়ে চলার ধারা বাধাগ্রস্ত না হলে রাজনীতিক স্থিতিশীলতা ঠিক থাকলে ২ হাজার ৪১ সালের আগেই বাংলাদেশ ধনী দেশের তালিকায় উঠবে। এমন মন্তব্য দেশ-বিদেশের অর্থনীতির বিশ্লেষকগণের। এরই সূত্র ধরে বগুড়া-১ আসনের আওয়ামী লীগদলীয় সংসদ সদস্য মোঃ আব্দুল মান্নান একটি ব্যাংকের বিশেষ অনুষ্ঠানে জানালেন, মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার প্রথম সূচক হলো মাথাপিছু আয় দেড় হাজার ডলার। চলতি বছরে এই হার বেড়ে ঠেকেছে ১ হাজার ২শ’ ডলারে। মাঠপর্যায়ে অর্থনৈতিক কর্মকা- দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় আগামী কয়েক বছরে মাথাপিছু আয় পৌঁছবে দেড় হাজার ডলারে। একই সঙ্গে দারিদ্র্যতার হার কমে আসবে। বর্তমানে দেশে দারিদ্র্যতার হার ২৬ শতাংশে নেমে এসেছে। ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় এ হার ছিল ৪১ শতাংশ। চরম দারিদ্র্যতার (আল্ট্রা পুওর) হার ছিল ২৬ শতাংশ। তা নেমে এসেছে ১১ শতাংশে। জিডিপির (গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট) বা প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশই রয়ে গেছে। বলা হয়েছে, পার্শ্ববর্তী অনেক দেশেই প্রবৃদ্ধির হার ৩ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে। সেই হিসাবে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে রয়েছে। কৃষিপ্রধান উত্তরাঞ্চলের মাঠের চিত্র বলে দেয় ধান এখন আর এক বা দুই সিজনের জন্য নয়। সারাবছরই ধান ফলছে। এ বিষয়ে বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (আরডিএ) মহাপরিচালক এমএ মতিন, ইরিগেশন ও পানি ব্যবস্থাপনার পরিচালক মাহমুদ হোসেন খান ও কৃষি বিজ্ঞানের পরিচালক এম জাকারিয়া বলেন, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) সকল ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করতে পারে এমন জাতের ধানের উদ্ভাবন এবং আরডিএর গবেষণার সমন্বয়ে গ্রাম এখন এগিয়েই যাচ্ছে। এই গতি রোধ করার সাধ্য কারও নেই। আরডিএ প্রতিটি ‘কি পয়েন্টে’ সকল ধরনের সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে গ্রামের কোন্ কৃষককে কখন কী করতে হবে, তার পরামর্শ দিতে হয় না। এ ধারার ওপর বেজ করে আরডিএ সফল উদ্যোক্তা গড়ে তুলছে। উদাহরণ দিয়ে বলা হয়, বগুড়ার মোকামতলার খামারপাড়ার সুজাউল ইসলাম ২০০৯ সালে কয়েক হাজার টাকা নিয়ে কন্ট্রাক্ট ফামিং শুরু করেন। আরডিএর সহযোগিতায় ফিলিপাইন থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি সবজি আবাদ করে বর্তমানের মূলধন অর্ধ কোটি টাকায় নিয়ে গেছেন। আটাইলের মোঃ আল আমিন ২০০৯ সালে ১ লাখ টাকা মূলধন নিয়ে ২০ মেট্রিক টন উন্নত বীজের প্রসেসিং শুরু করেন। ৬ বছরে তিনি ৩শ’ মেট্রিক টন উন্নত বীজ সরবরাহ করেন। চলতি মূলধন প্রায় ২ কোটি টাকা। তার অধীনে কর্মচারীর সংখ্যা ৩৪ জন। কাজীপুরের নদী ভাঙ্গনকবলিত এলাকার নারী জাহানারা বেগম বসতভিটা হারিয়ে আশ্রয় নেন বগুড়ার শেরপুরে। ২ হাজার টাকার মূলধন নিয়ে নার্সারি ব্যবসা করে তিনি এখন কোটিপতি। একজন অর্থনীতিবিদ বলেন, বাংলাদেশ আক্ষরিক অর্থেই ধনী। মাটির ওপরে ও মাটির নিচে রয়েছে অফুরন্ত সম্পদের ভা-ার। শুধু রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার সঙ্গে সুশাসন থাকলে দেশ এগিয়ে যেতে সময় লাগবে না। এ বিষয়ে সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান বলেন, বর্তমান সরকার বহু বছর পর যে শিক্ষানীতি চালু করেছে তা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আগে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় এককেন্দ্রিক ছিল।
×