ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘ফোকলোর চর্চার ক্ষেত্রে বিশ্বকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ’

প্রকাশিত: ০৫:১২, ২০ এপ্রিল ২০১৫

‘ফোকলোর চর্চার ক্ষেত্রে বিশ্বকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ফোকলোর চর্চার ক্ষেত্রে বিশ্বের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। এরই প্রেক্ষিতে ফোকলোরের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ। এ দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য-সমাজ-সংস্কৃতি ফোকলোরকে নিবিড়ভাবে ধারণ করে আছে। বাংলাদেশের ফোকলোর বা লোকাচারবিদ্যার গুরুত্ব তুলে ধরে এমন মন্তব্য করেছেন ভারতের মহিশূর রাজ্যের প্রখ্যাত ফোকলোরবিদ অধ্যাপক জওহরলাল হান্ডু। বাংলা একাডেমি আয়োজিত সপ্তাহব্যাপী ‘দ্বিতীয় ফোকলোর সামার স্কুল’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক ফোকলোর কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রবিবার বিকেলে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক ফোকলোর কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ভারতের মহিশূর রাজ্যের প্রখ্যাত ফোকলোরবিদ অধ্যাপক জওহরলাল হান্ডু ও শ্রীলঙ্কার প্রখ্যাত ফোকলোরবিদ ড. লিয়ানেজ অমরাকীর্তি। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন কর্মশালার সমন্বয়কারী ফোকলোরবিদ ড. ফিরোজ মাহমুদ। সমাপনী বক্তব্য রাখেন একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন একাডেমির ফোকলোর, জাদুঘর ও মহাফেজখানা বিভাগের পরিচালক শাহিদা খাতুন। সভাপতিত্ব করেন একাডেমির সভাপতি এমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, ফোকলোর মোটেও অতীতের বিষয় নয়। বর্তমান ও ভবিষতকে ধারণ করে বহমান ঐতিহ্যের এক বিশেষ বিদ্যাশাখার নাম ফোকলোর। ফোকলোর গবেষকরা বাংলা একাডেমির এই সামার স্কুলে অংশ নিয়ে দেশের ফোকলোর গবেষণাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত করবেন বলে আমি আশা করি। শ্রীলঙ্কান ফোকলোরবিদ ড. লিয়ানেজ অমরাকীর্তি বলেন, বাংলাদেশে ইউজিসির মাধ্যমে সারাদেশের প্রধান প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ে ফোকলোর বিভাগ চালু করা প্রয়োজন। কারণ ফোকলোর আমাদের স্থানিকতা, আন্তর্জাতিকতা, ধর্মনিরপেক্ষাতা, পরিগ্রহণ ক্ষমতা ইত্যাদির সমন্বিত শিক্ষা প্রদান করে। সভাপতিত্ব বক্তব্যে আনিসুজ্জামান বলেন, বাংলা একাডেমি দীর্ঘদিন যাবত ফোকলোরের নানা ক্ষেত্রে কাজ করে আসছে। সদ্যসমাপ্ত ফোকলোর সামার স্কুলের মাধ্যমে এই কর্মসূচী নতুন নির্দেশনা পাবে বলে আশা করা যায়। সমাপনী ভাষণে শামসুজ্জামান খান বলেন, বাংলা একাডেমি আয়োজিত দ্বিতীয় ফোকলোর সামার স্কুল ইতোমধ্যে বেশ সাড়া জাগিয়েছে। বাংলা একাডেমি ভবিষ্যতেও ফোকলোর বিষয়ক এই আন্তর্জাতিক কর্মশালার ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে। সামার স্কুলের প্রশিক্ষকদের পক্ষে ড. নিয়াজ জামান ও ড. শাহীনুর রহমান বলেন, বাংলা একাডেমি তিন দশকেরও অধিক সময় যাবত ফোকলোর বিষয়ে গভীরতাবাহী গবেষণা করে চলেছে। তত্ত্ববিদ্যা ও মাঠকর্মের সমন্বয়ে ফোকলোরকে জীবন্ত করে রাখতে ফোকলোর সামার স্কুলের মতো কর্মশালার কোন বিকল্প নেই। ভবিষ্যতে এই কর্মশালায় আরও বিস্তৃত করা প্রয়োজন। অনুষ্ঠানে কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী ১৪ জন প্রশিক্ষণার্থীর মধ্যে সনদপত্র বিতরণ করেন অনুষ্ঠানের অতিথিরা। মঞ্চস্থ প্রাচ্যনাট প্রযোজনা মায়ের মুখ ॥ রবিবার বৈশাখী সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হলো নাট্যদল প্রাচ্যনাটের প্রযোজনা মায়ের মুখ। ব্রিটিশ নাট্যকার আর্নল্ড ওয়েস্কারের ‘ফোর পোর্ট্রটে অব মাদার্স’ অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে নাটকটি। দলের ২৪তম প্রযোজনাটির নাট্যরূপ দিয়েছেন মুম রহমান। নির্দেশনা দিয়েছেন তৌফিকুল ইসলাম ইমন। নাটকের গল্পে চারজন মায়ের গল্পের মাধ্যমে নাট্যকার যেন বিশ্বের সকলের মায়ের প্রকৃতি তুলে ধরেছেন। রুথ একজন অবিবাহিত মা। তাঁর ছোট কন্যাকে নিয়ে সে বেড়াতে যাবে পাহাড়ে। রুথ তাঁর নিজের সুটকেস গোছাচ্ছে কিন্তু মেয়েটি ঘর থেকে বেরুচ্ছে না। তাঁকে বার বার ডাকা সত্ত্বেও মেয়েটি বাবার অভাব বোধ করছে। রুথের একক সংলাপ থেকে তার অতীত এবং এই সমাজে অবিবাহিত সন্তানের জননী হওয়ার অসুবিধাগুলো উঠে আসে। নাটকের দ্বিতীয় মা নাওমি। সত্তর বছর বয়সী ইহুদী এই নারী কোনদিন মা হতে না পারলেও নিজেকে মা হিসেবে ভাবতে ভালবাসে। একাকী এই নারীর সময় কাটে পুরনো একটি ছেঁড়া বই পড়ে, টিভি দেখে কিংবা সদ্য কোনো সংবাদের জন্য উদগ্রীব হয়ে। তার জীবনযাত্রার অনেক কিছুই অগোছালো। তাকে ফোন করে ভাতিজা ড্যানি। ড্যানির সঙ্গে টেলিফোন সংলাপ দিয়েই এ অংশটি রচিত। শেষ সংলাপে সে বলে, আহা! কেবল ড্যানিটা যদি আমার ছেলে হতো। নাটকের তৃতীয় নারী মিরিয়াম একজন ব্যর্থ মা, যে নিজের সন্তানদের মানুষ করতে পারেনি। সে সন্তানদের অনেক ভালবাসে, স্বামীকে ওদের শাসন করতে দিতে চায় না। এক মনোচিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলতে বলতে সে নিজের ভুলগুলো অনুধাবন করতে পারে। নাটকের চতুর্থ মা ডেবরা। অন্য তিন মায়ের থেকে সে একেবারেই আলাদা। সে সফল সার্থক মা। জীবনকে সে পূর্ণভাবে উপভোগ করে। এক সুপার শপে কেনাকাটা করতে করতে সে পরিষ্কার জানিয়ে দেয়, পারলে সে আরও সন্তানের জননী হতো। সে মুক্ত ও স্বাধীন। তার মতে পুরুষরাই বরং বন্দী জীবনযাপন করে। এই চার মায়ের স্বগত সংলাপের মাধ্যমে ব্রিটিশ নাট্যকার ওয়েস্কার যেন বিশ্বের সব মায়ের চিত্র তুলে ধরেছেন। নাটকে চার মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন লুসি তৃপ্তি গমেজ, ঋতু সাত্তার, জয়িতা মহলানবিস ও সাদিকা পারভীন স্বর্ণা।
×