ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

সুরে সুরে শাহীন সামাদের সঙ্গীত জীবনের পঞ্চাশ বছর

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৯ এপ্রিল ২০১৫

সুরে সুরে শাহীন সামাদের সঙ্গীত জীবনের পঞ্চাশ বছর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মাত্র ১৩ বছর বয়সে সঙ্গীতের সঙ্গে গড়েছিলেন সখ্য। সুরের কাছে সমর্পণ করেছিলেন নিজেকে। কণ্ঠে সেই সুরকে ধারণ করে মাতৃভূমি রক্ষার জন্য গেয়েছিলেন গান। একাত্তরের রণাঙ্গনে সুর আর বাণীর শাণিত শক্তিতে উদ্দীপ্ত করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের। যোগ দিয়েছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে। শরণার্থী শিবিরের অসহায় মানুষদের মনে সাহস যোগাতে গেয়েছেন বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রামী শিল্পী সংস্থার পক্ষে। মা, মাটি ও মানুষের প্রতি দায়বদ্ধ এই কণ্ঠসৈনিক হলেন শাহীন সামাদ। সময়ের স্রোতে পূর্ণ হলো এই খ্যাতিমান নজরুলসঙ্গীত ও গণসঙ্গীতশিল্পীর সঙ্গীত জীবনের ৫০ বছর। আর সঙ্গীত জীবনের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হলো তাঁর একক সঙ্গীতসন্ধ্যা। অনবদ্য কণ্ঠের মহিমায় সুরের আনন্দধারায় সিক্ত করলেন শ্রোতাদের। শনিবার বৈশাখী সন্ধ্যায় জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে বসেছিল এ সঙ্গীতাসর। শিল্পীর সঙ্গীত জীবনের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে গান হোক অশুভের বিরুদ্ধে শৈল্পিত প্রতিবাদ সেøাগানে সঙ্গীতানুষ্ঠানটির আয়োজন করে আমরা সূর্যমুখী। সঙ্গীত পরিবেশনের আগে দাঁড়িয়ে শিল্পীকে সম্মান জানানো হয়। এরপর বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তির ফুলেল শুভেচ্ছা গ্রহণ শেষে শাহীন সামাদ বলেন, সুর ও গানকে সঙ্গী করেই দীর্ঘ একটা জীবন পাড়ি দিয়ে যাচ্ছি। পেয়েছি শ্রোতাদের হৃদয় উৎসারিত ভালবাসা। আর আমার আজকেই এই অবস্থানের পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে ছায়ানট। কৈশোর থেকেই বেড়ে উঠেছে ছায়ানটের ছায়ায়। জীবনে এই অর্জনের সবটুকুই পেয়েছি এই সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণে। কথা শেষে মিলনায়তনজুড়ে সুরেলা কণ্ঠে সুরধ্বনি ছড়িয়ে দেন শিল্পী। রাগ ভৈরবীর আশ্রয়ে প্রথমেই গেয়ে ‘পোহালো পোলো নিশি খোলো গো আঁখি’। এরপর তিনি একে একে পরিবেশন করেন ‘আমি ভাই খ্যাপা বাউল’, ‘স্বপনে এসেছিল মৃদুভাষিনী’, ‘একবার গালভরা মা ডাকি’, ‘জোছনা করেছে আঁড়ি’, ‘প্রিয় এমনও রাত যেন’, ‘তুমি কি এখন দেখিছ স্বপন’সহ রবীন্দ্র-নজরুল, লোকগীতি, দেশাত্মবোধকসহ নানা আঙ্গিকের বেশকিছু গান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী। ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, বঙ্গবন্ধুর সহকারী প্রেস সচিব কাইয়ুম রেজা চৌধুরী, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, মহিলা বঙ্গবন্ধু পরিষদ সভাপতি ডাঃ খালেদা বেগম ও আমরা সূর্যমুখীর সমন্বয়ক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম সেলিম। বেঙ্গলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে কাজী গিয়াসউদ্দিনের চিত্র প্রদর্শনী ॥ দেশের অগ্রণী শিল্প-প্রদর্শনালয় বেঙ্গল গ্যালারি অব্ ফাইন আর্টস গত ১৪ এপ্রিল পূর্ণ করেছে প্রতিষ্ঠার ১৫ বছর। আর এই পঞ্চদশ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ধানম-ির বেঙ্গল শিল্পালয়ে শুরু হলো জাপান প্রবাসী ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পী কাজী গিয়াসউদ্দিনের সাম্প্রতিক চিত্রকর্মের একক চিত্রকলা প্রদর্শনী। শিরোনাম নোটেশন.রিকনস্ট্রাক্টেড। শনিবার সন্ধ্যায় বেঙ্গল শিল্পালয়ে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি ছিলেন দৈনিক প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান। অতিথিদ্বয় যৌথভাবে প্রদর্শনীটি উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের। বক্তব্য রাখেন কাজী গিয়াসউদ্দিন ও বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী। দীর্ঘদিন জাপানে বসবাস করছেন শিল্পী কাজী গিয়াসউদ্দিন। তবে চেতনে-অবচেতনে জন্মভূমির প্রতি শিল্পীর যে গহন ভালবাসা, পরদেশে সৃষ্ট চিত্রপটেও তার চিত্তগ্রাহী ছাপ দৃশ্যমান হয়। জাপানের চিত্রকলা বা সংস্কৃতি তাঁকে প্রভাবান্বিত করলেও নিজ দেশের চিরায়ত মাধুর্যই তাঁর চিত্রচর্চার অন্তিম অনুপ্রেরণা। অনুমিতভাবেই অনিঃশেষ অনুপ্রেরণার উৎস-প্রকৃতি কাজী গিয়াসের এই প্রদর্শনীর বেশিরভাগ ছবির প্রধান নিয়ামক। প্রকৃতি থেকে আহরিত চিরচেনা মোটিফ আর অবয়বগুলো তিনি পুনর্নির্মাণ করেছেন তাঁর চিত্রপটে। কয়েক স্তরের অসমতল জমিনে রঙের স্থিতধী ব্যবহার, ব্রাশস্ট্রোকের ধারালো আঁচড়, রেখার ঐন্দ্রজালিক উপস্থাপন আর মোটিফের নিঃশব্দ আবেদন শিল্পীর চিত্রকর্মকে সুরের অনির্বচনীয় আধারে রূপায়িত করেছে। প্রদর্শনীতে চিত্রকর্মের সংখ্যা ৪০টি। প্রদর্শনী চলবে আগামী ২৬ মে পর্যন্ত। প্রতিদিন বেলা ১২টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকবে। জাদুঘরে হাসান আজিজুল হকের পা-ুলিপি হস্তান্তর ॥ শনিবার কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক তাঁর লেখা সাবিত্রী উপাখ্যান পা-ুলিপি সংরক্ষণের জন্য জাতীয় জাদুঘরে হস্তান্তর করেন। পা-ুলিপি গ্রহণ করেন জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী। জাদুঘরের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ সভাকক্ষে আয়োজিত হস্তান্তর অনুষ্ঠানে জাদুঘরের মহাপরিচালক বলেন, পূর্ব বাংলায় যে কয়জন সাহিত্যিককে নিয়ে গর্ব করা যায় অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক তাঁদের মধ্যে অন্যতম। তাঁর পা-ুলিপি সংরক্ষণ জাদুঘরের সংগ্রহ তালিকায় নতুন মাত্রা যোগ করবে এবং এক সময় ইতিহাসের বড় অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে। হাসান আজিজুল হক বলেন, সাবিত্রী উপাখ্যান উপনাসটি ২০১৩ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। এই উপন্যাসে সমাজের অবক্ষয় এবং একজন নারীর লাঞ্ছিত হওয়ার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ইতিহাসের উপাদান হিসেবে সাহিত্যকর্মের অবদান রয়েছে। সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি সেই সময়ের সামাজিক এবং রাজনৈতিক অবস্থা। তাই প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শনের পাশাপাশি সাহিত্য উপদান সংগ্রহ যুগোপযোগী ও সময়ের দাবি। চারুনীড়ম টেলিভিশন কাহিনীচিত্র উৎসব ॥ দেশের টিভি চ্যানেলগুলোতে এক ঘণ্টার নাটক নিয়মিত প্রচারের দাবি ও লক্ষ্য নিয়ে এ বছরের চারুনীড়ম টেলিভিশন কাহিনীচিত্র উৎসব উদ্বোধন হয় শনিবার। সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে ৫ দিনব্যাপী এ উৎসবের আয়োজক চারুনীড়ম ইনস্টিটিউট। নবীন ও প্রবীণ নির্মাতাদের ২০টি এক ঘণ্টার কাহিনীচিত্র নিয়ে সাজানো হয়েছে উৎসব। সন্ধ্যায় প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে উৎসব উদ্বোধন করেন অভিনয়শিল্পী আবুল হায়াৎ। এর আগে গ্রন্থাগার চত্বরে সংগঠনটির পক্ষ থেকে একুশে পদকপ্রাপ্ত এই শিল্পীকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে শ্রেষ্ঠ ১০ জন নবীন কাহিনীচিত্র পরিচালককে ‘চিত্র কুসুম’ পুরস্কারস্বরূপ রঙিন কাপড় পরিয়ে স্বাগত জানানো হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অভিনয়শিল্পী সৈয়দ হাসান ইমাম, নাট্যজন আতাউর রহমান, অভিনেত্রী চিত্রলেখা গুহ প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্যে সংগঠনটির কর্ণধার গাজী রাকায়েত বলেন, আমাদের দেশের অধিকাংশ চ্যানেলে ২০০৮ সালে এক ঘণ্টার নাটক নিয়মিতভাবে প্রচার বন্ধ হয়ে যায়। এ নাটককে নিয়মিত প্রচারের দাবিতে ‘এক ঘণ্টার নাটক বাঁচাও’ কর্মসূচী হাতে নেয় চারুনীড়ম এবং এক ঘণ্টার নাটক নিয়ে চারুনীড়ম টেলিভিশন কাহিনীচিত্র উৎসব ও পুরস্কার প্রদান শুরু করে। সেই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালে প্রচারিত নতুন ও পুরাতন নির্মাতাদের ২০টি এক ঘণ্টার নাটক নিয়ে ৭মবারের মতো এ উৎসবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। অনুষ্ঠানে ১০ জন নবীন কাহিনীচিত্র পরিচালকদের রঙিন কাপড় দিয়ে স্বাগত জানানো হয়। এরপর অভিনেতা আবুল হায়াৎকে সম্মাননা জানানো হয়। উদ্বোধনী দিন সন্ধ্যায় চারটি এক ঘণ্টার নাটক প্রদর্শিত হয়। এগুলো হলো- রশীদ হায়দারের গল্প আবুল হায়াতের চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় ‘সাক্ষাতকার’, অনিমেষ আইচের গল্প ও চিত্রনাট্যে সামিয়া আফরিনের পরিচালনায় ‘টাকা’, গাজী রাকায়েতের গল্প চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় ‘তোমায় দেখতে লাগে ভাল’ এবং সাইফ সুমনের গল্প চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় ‘খেলা’। আগামী ২২ এপ্রিল পর্যন্ত চলমান উৎসবে প্রতিদিন চারটি করে নাটক প্রদর্শিত হবে সন্ধ্যা ৬টা থেকে। আজ রবিবার প্রদর্শিত হবে না বলা কথা, কণক, সোনার ডিম ও গুম শিরোনামের চারটি নাটক। মহিলা পরিষদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান ॥ বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার বিকেলে আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম, ইউএনইউমেনের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ক্রিস্টিন সুশান হান্টার ও সাংবাদিক শাহনাজ মুন্নী। আলোচনাসভায় সভাপতিত্ব করেন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডাঃ ফাওজিয়া মোসলেম। মিলনায়তনের বাইরের চত্বরে জাতীয় সঙ্গীত ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যদিয়ে শুরু হয় উদ্বোধনী পর্ব। পরে ৪৫টি বেলুন উড়িয়ে ও ৪৫টি মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করে অতিথিরা অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এরপর মিলনায়তনে শুরু হয় আলোচনা ও সাংস্কৃতিক পর্ব। রোকেয়া সদনের শিক্ষার্থীরা সম্মেলক কণ্ঠে পরিবেশন করে ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে’, ‘ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা’ ও ‘বকুল ফুল বকুল ফুল’ শীর্ষক তিনটি গান। আলোচনাসভা স্বাগত বক্তব্য রাখেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাখী দাশ পুরকায়স্থ। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন আদিবাসী নারী মুনমুন নকরেক, কৃষাণী হেনা বেগম ও শ্রমিক হেপী রানী।
×