ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

তাবিথের জন্য ভোট চাইতে মাঠে নামলেন বেগম জিয়া

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১৯ এপ্রিল ২০১৫

তাবিথের জন্য ভোট চাইতে মাঠে নামলেন বেগম জিয়া

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অবশেষে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচার চালাতে সরাসরি মাঠে নামলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। শনিবার বিকেলে বাসা থেকে বের হয়ে গুলশান, বাড্ডা ও বনানী এলাকায় গণসংযোগ করে নিজ হাতে লিফলেট বিতরণ ও জনে জনে কথা বলে দলীয় মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের জন্য ভোট প্রার্থনা করেন তিনি। এভাবে ভোট প্রার্থনার জন্য যেখানেই যান খবর পেয়ে দলীয় নেতাকর্মীরা জড়ো হয়ে হাততালি ও সেøাগান দিয়ে খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানান এবং দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে ভোট চান। খালেদা জিয়ার হাত থেকে লিফলেট নিতে সাধারণ মানুষও ভিড় করেন। এদিকে, খালেদা জিয়া নির্বাচনী প্রচারে মাঠে নামায় ঝিমিয়ে পড়া বিএনপির নেতাকর্মীরা চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন বলে জানা গেছে। উল্লেখ্য, বেশ ক’দিন আগে থেকেই বিএনপি নেতারা বলে আসছিলেন আসন্ন তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ের লক্ষ্যে সরাসরি মাঠে নেমে ভোট চাইবেন খালেদা জিয়া। পহেলা বৈশাখের দিনে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে তাঁদের ভোট দিয়ে বিজয়ী করার আহ্বান জানান। আর শনিবার তিনি দলীয় প্রার্থীদের জন্য ভোট চাইতে সরাসরি মাঠে নেমে যান। তবে ঝামেলা এড়াতেই খালেদা জিয়া দলের নেতাকর্মীদের গণসংযোগের বিষয়ে আগাম জানাননি। বাসা থেকে বের হয়ে বিকেল সাড়ে চারটায় প্রথমেই তিনি গুলশান-২ নম্বরের পিংক সিটি মার্কেটে যান। সেখানে কয়েকটি দোকানে গিয়ে বাস প্রতীক সংবলিত লিফলেট বিতরণ করে দলীয় প্রার্থীদের জন্য ভোট প্রার্থনা করেন। এরপর পৌনে পাঁচটায় তিনি গুলশান-১ নম্বরে সিটি কর্পোরেশন মার্কেটে যান। সেখানে উপস্থিত জনতার সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি তাদের মাঝে লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে তিনি দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ভোট চান। পরে গুলশান নাভানা শপিং মার্কেটে গণসংযোগ করেন তিনি। তাবিথ আউয়ালের বাস প্রতীক সংবলিত লিফলেট হাতে হাতে ধরিয়ে দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, আপনারা সবাই বাস প্রতীকে ভোট দিয়ে তাবিথ আউয়ালকে জয়যুক্ত করবেন। এ সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা সেøাগান-হাততালি দিয়ে তাদের প্রিয় নেত্রীকে এ কাজে উৎসাহ দেন। গণসংযোগকালে প্রায় ১০টি গাড়ির বহর নিয়ে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যাওয়ার সময় খালেদা জিয়া গাড়িতে বসে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা জনতার উদ্দেশে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান। এ সময় দলের নেতাকর্মীরাও সেøাগান দিয়ে তাঁকে স্বাগত জানান। ভোট প্রার্থনাকালে বিএনপি চেয়ারপার্সনের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ‘সিএসএফ’ সদস্যরা কঠোর নিরাপত্তা বলয় সৃষ্টি করেন। গুলশানের পর বাড্ডা লিংক রোডে গণসংযোগ করেন খালেদা জিয়া। এরপর বাড্ডা ও নতুন বাজার হয়ে মার্কিন দূতাবাসের পাশ দিয়ে গুলশান-২ নম্বরের ডিসিসি মার্কেটে গিয়ে গণসংযোগ করেন তিনি। গুলশান ডিসিসি মার্কেট থেকে বনানী কাঁচাবাজারে গিয়ে লিফলেট বিতরণ করে তাবিথ আউয়ালের জন্য ভোট চান খালেদা জিয়া। এরপর সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে বনানী ১১ নম্বর রোডে গণসংযোগ করেন খালেদা জিয়া। এ সময় বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে শরিক হন। এখান থেকে প্রচার শেষ করে তিনি মহাখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করে রাতে বাসায় যান। মাঠে নেমে ভোট প্রার্থনার সময় খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, ঢাকা উত্তরের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল, বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সামসুল আলআমিন ডিউ ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপিদলীয় কাউন্সিলর প্রার্থী ফারুক হোসেন উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, গুলশান কার্যালয়ে দীর্ঘদিন অবস্থান করে সরকারবিরোধী আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে আবার বাসায় ফিরে গিয়ে রাজনৈতিকভাবে চরম বেকায়দায় পড়েন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। এ অবস্থার অবসানে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নিয়ে দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ী করার মধ্যদিয়ে তিনি রাজনৈতিক ইমেজ ফিরিয়ে আনার কৌশল নিয়েছেন। এ কৌশলের অংশ হিসেবেই দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারে মাঠে নেমেছেন। এর আগে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক বছরপূর্তির দিন ৫ জানুয়ারি রাজধানী ঢাকায় বড় ধরনের সমাবেশ করে সরকারবিরোধী আন্দোলন চাঙ্গা করার প্রস্তুতি নেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। ২০ দলীয় জোটের ব্যানারে এ কর্মসূচী সফল করতে দু’দিন আগে অর্থাৎ ৩ জানুয়ারি রাতেই তিনি গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান নেন। এখানে থেকেই তিনি ২০ দলীয় জোটের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকেন। এর আগে থেকেই বিএনপির যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থান করতে থাকেন। ৩ জানুয়ারি রাত এগারোটার দিকে গুলশান কার্যালয়ে অবস্থানকালে খালেদা জিয়ার জানতে পারেন নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থানরত রুহুল কবির রিজভী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তখন খালেদা জিয়া রিজভীকে দেখতে গুলশান কার্যালয় যেতে চান। কিন্তু খালেদা জিয়া ৫ জানুয়ারির কর্মসূচীকে সামনে রেখে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে থেকে যাবেন এমন আভাস পেয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গুলশান কার্যালয়ের বাইরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে এবং তাঁকে সেখান থেকে বের হওয়ার ব্যাপারে বাধা দেয়। সেই সঙ্গে রাতেই রিজভীকে এ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়। ৪ জানুয়ারি খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় দু’পাশে ব্যারিকেড দিয়ে র‌্যাব-পুলিশের বিপুলসংখ্যক সদস্য সেখানে অবস্থান করে। একপর্যায়ে খালেদা জিয়ার বাসাসংলগ্ন ৮৬ নম্বর সড়কের দু’পাশে আড়াআড়িভাবে ১২টি ইট, বালি ও মাটিভর্তি ট্রাক, দুটি প্রিজনভ্যান, একটি সাঁজোয়াযান ও একটি জলকামান রেখে কার্যালয়টি অবরুদ্ধ করা হয়। ৫ জানুয়ারি দুপুরে খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়। বিকেলে গুলশান কার্যালয় থেকে বের হয়ে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। গাড়িতে চড়ে বসলেও পুলিশ গেট খুলে না দেয়ায় গুলশান কার্যালয়ে থাকা মহিলা দলের নেতাকর্মীরা গেটে লাথি মেরে চিৎকার চেঁচামেচি করতে থাকেন। একপর্যায়ে পুলিশ তাঁদের ওপর পিপার স্প্রে ছুড়ে মারে। পরে খালেদা জিয়া গাড়ি থেকে নেমে গুলশান কার্যালয়ের ভেতরে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে সারাদেশে টানা অবরোধ কর্মসূচী পালনের ঘোষণা দেন। অবশ্য ২ ফেব্রুয়ারি থেকে হরতালও পালন করেছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। গুলশান কার্যালয়ে অবস্থানকালে এক মিনিটের জন্যও খালেদা জিয়া বাইরে যাননি। ১৯ জানুয়ারি জিয়াউর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে তাঁর মাজারে এবাং ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারেও যাননি খালেদা জিয়া। প্রতিবছর বিশ্ব এজতেমায় গেলেও এবার টানা অবরোধ দিয়ে তিনি ঘরে বসেছিলেন। এমনকি ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পরও খালেদা জিয়া গুলশান কার্যালয় থেকে বের হননি। কোকোর মরদেহকেও শেষ বিদায় জানিয়েছেন এখান থেকেই। কোকোর কুলখানি না হলেও তাঁর আত্মার মাগফেরাত কামনায় মিলাদ পড়ানো হয়েছে গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়েই। অন্যান্যবারের মতো এবার ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসেও খালেদা জিয়া জাতীয় স্মৃতিসৌধে যাননি। তবে ৫ এপ্রিল গুলশান কার্যালয় থেকে বেরিয়ে আদালতে হাজিরা দিয়ে জামিন নিয়ে তিনি সরাসরি গুলশানের বাসায় চলে যান। এরপর পহেলা বৈশাখের দিন বাসা থেকে বেরিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার পাশাপাশি সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে তাঁদের জন্য ভোট প্রার্থনা করেন খালেদা জিয়া।
×