ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যেমন হবে আগামী বাজেট ॥ সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবে সামাজিক নিরাপত্তা খাত

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১৭ এপ্রিল ২০১৫

যেমন হবে আগামী বাজেট ॥ সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবে সামাজিক নিরাপত্তা খাত

এম শাহজাহান ॥ দারিদ্র্য বিমোচন-সামাজিক নিরাপত্তা খাত সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আগামী বাজেট প্রণয়ন করছে সরকার। বর্তমান সরকারের প্রথম লক্ষ্য হচ্ছে রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়ন করা। এই লক্ষ্য অর্জন সামনে রেখে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে। বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তর এবং ওই সময়ের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ১৩ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। শিল্পায়নের মাধ্যমে ব্যাপক কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নেয়া হবে নতুন বাজেটে। একই সঙ্গে সমাজের পিছিয়ে পড়া অসহায়-গবির মানুষদের অর্থনীতির মূলধারায় নিয়ে আসার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রণয়ন করা হয়েছে সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্র। নতুন নীতিমালার আওতায় সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ৩৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। বর্তমান এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ১১ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। জানা গেছে, সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্র বাস্তবায়নের মাধ্যমে বদলে যাবে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী। এই কৌশল পত্রের মাধ্যমে বর্তমান চলমান প্রায় ১৪৫টি কর্মসূচীকে এক ছাতার নিচে নিয়ে আসা হবে। এছাড়া আসছে ব্যাপক পরিবর্তন। আসছে জীবনচক্রভিত্তিক সমন্বিত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী। এই কর্মসূচীর আওতায় দেশ থেকে দারিদ্র্য দূর হবে বলে মনে করছে সরকার। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আগামী বাজেটকে স্বপ্ন পূরণের বাজেট হিসেবে দেখছেন। সম্প্রতি তিনি জাতীয় সংসদে জানান, জাতিসংঘের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অনুযায়ী ২০১৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশের দারিদ্র্যের হার কমিয়ে ২৮ দশমিক ৫ শতাংশে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। আমরা সেটা ২০১৩ সালেই অর্জন করে ফেলেছি। তিনি বলেন, দারিদ্র্যের হার এখন ২০ শতাংশের নিচে। পরিসংখ্যান ব্যুরো যে খানা-ব্যয় জরিপের কাজ করছে তা প্রকাশিত হলে দারিদ্র্যের হার আরও নিচে নেমে আসবে। তিনি বলেন, সে কারণেই বলছি আগামী ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট হবে স্বপ্ন পূরণের বাজেট। তিনি আরও জানান, এই সরকারের মেয়াদের আগেই পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে পদ্মা সেতুর কাজ ২০ শতাংশের বেশি শেষ হয়েছে। মেট্রোরেলের ভূতাত্ত্বিক জরিপের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। ২০১৯ সালের মধ্যে এর কাজ শেষ করতে চাই আমরা। অন্য সব মেগা প্রকল্পের কাজও বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়ে বাস্তবায়ন করা হবে। জিইডি সূত্র জানায়, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে প্রতিটি অর্থবছরে বরাদ্দ বাড়ানো হবে। যা ২০২১-২২ অর্থবছরে দাঁড়াবে ৬৬ হাজার ২০০ কোটি টাকায়। প্রস্তাবিত এ বরাদ্দের মধ্যে বিভিন্ন পেনশন, ভাতা ও বৃত্তিমূলক কর্মসূচীতে ২১ হাজার ২০০ কোটি টাকা দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে আগামী অর্থবছরে, যা ২০২১-২২ তে বেড়ে দাঁড়াবে ৪৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকায়। জীবন চক্র পদ্ধতিতে তিন ধরনের কর্মসূচীতে মোট বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে ১৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকা, যা ২০২১-২২ অর্থবছরে গিয়ে দাঁড়াবে ২১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। নতুন কৌশলপত্র অনুযায়ী সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী উৎপাদনমুখী হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিশেষ করে বন্যা, ঝড় হলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় খাদ্যশস্যভিত্তিক কর্মসূচীর ব্যবস্থা রয়েছে। এই কৌশলপত্রের মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী বাস্তবায়ন হবে তিন পর্যায়ে। প্রথম পর্যায় প্রারম্ভিক একত্রীকরণ ও সমন্বয় অংশ হবে ২০১৫ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত। বর্তমানে যে সকল মন্ত্রণালয় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে তাদেরকে পাঁচটি ক্লাস্টারে বিন্যস্ত করা হবে। প্রতিটি ক্লাস্টারের সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকবে একটি মন্ত্রণালয়। বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয় তাদের নিজস্ব কর্মসূচীগুলোর নকশা প্রণয়ন ও কার্যকরী বাস্তবায়নের জন্য দায়িত্বপূর্ণ হবে। ক্লাস্টারের থিমের সঙ্গে বলিষ্ঠ সংযোগ রয়েছে এমন একটি মন্ত্রণালয়ই ক্লাস্টার সমন্বযের দায়িত্ব পালন করবে। দ্বিতীয় পর্যায় সমন্বয় সাধন ও বাস্তবায়ন অংশ হবে ২০২১ সাল থেকে ২৬ সাল পর্যন্ত। প্রথম পর্বের মতো সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টার ভিত্তিক সমন্বয়ের মাধ্যমে কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হবে। তবে একটি আধা স্বায়ত্তশাসিত সামাজিক নিরাপত্তা সংস্থা সমন্বয় ও তদারকির দায়িত্বে থাকবে। সরকারী কর্মকর্তা, অর্থনীতিবিদ, দারিদ্র্য ও নীতি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন এ সামাজিক নিরাপত্তা সংস্থা গঠিত হবে। তৃতীয় পর্যায় জীবন চক্র কর্মসূচী ও অন্যান্য কর্মসূচীর সমন্বয় অংশ হবে ২০২৬ সালের পরবর্তী সময়ে। এ পর্যায়ে জীবন চক্র পদ্ধতি পদ্ধতি ও অন্যান্য কর্মসূচী বাস্তবায়নে জোর দেয়া হয়েছে। এ অংশে বলা হয়েছে, জীবন চক্রভিত্তিক সকল সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী বাস্তবাযনের জন্য একটি সামাজিক নিরাপত্তা মন্ত্রণালয় গঠন করা হবে। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সিনিয়র সদস্য ড. শামসুল আলম এ প্রসঙ্গে জনকণ্ঠকে বলেন, দক্ষতার সঙ্গে ও কার্যকরভাবে সম্পদের ব্যবহার, সেবা প্রদান ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ এবং অধিকতর অন্তর্ভুক্তিমূলক সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার দিকে ধাবিত হয়ে জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার সংস্কার সাধন, যা সমাজের চরম দারিদ্র্য ও সর্বাধিক ঝুঁকিগ্রস্ত সদস্যদেরকে অগ্রাধিকার দিয়ে কার্যকরভাবে জীবন চক্রের বিভিন্ন ঝুঁকি মোকাবেলা করবে। সেই সঙ্গে মধ্য আয়ের দেশে আমাদের উত্তরণ ঘটবে এটি মনে রেখেই জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্র প্রণয়ন করা হয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচন ॥ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীতে বাজেট বরাদ্দ বাড়ায় গত পাঁচ বছরে দেশ থেকেই ধারাবাহিকভাবে দারিদ্র্য মানুষের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। সরকারের দরিদ্রবান্ধব কর্মসূচী এবং পরিকল্পনার কারণে দরিদ্রের হার কমার পাশাপাশি বৈষম্যও কমেছে। ফলে মানব উন্নয়ন সূচকে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে বাংলাদেশের। বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির হার শতভাগ। শিক্ষার সর্বস্তরে নারী-পুরুষের সুযোগের সমতা সৃষ্টি হওয়ায় এখন কর্মরত শ্রম শক্তির ৩০ শতাংশের অধিক মহিলা। এছাড়া দেশের প্রায় সকল জনগণকে টিকাদান কর্মসূচী, নিরাপদ পানি সরবরাহ এবং স্যানিটেশন সুযোগের আওতায় আনা হয়েছে। অতি দরিদ্র লোকের সংখ্যা ২০০৫ সালে ৫ কোটি ৭৩ লাখ ও ৩ কোটি ৫৯ লাখ থেকে নেমে তা গত ২০১৪ সালে ৩ কোটি ৮৫ লাখ এবং ১ কোটি ৫৭ লাখে নেমে এসেছে। তবে প্রাক্কলন অনুযায়ী ডিসেম্বর ২০১৪ সালে দেশে দারিদ্র্য ও অতি দারিদ্র্যের হার দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক ৩ এবং ৯ দশমিক ৯ শতাংশে। অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, আগামী ২০২১ সালের পর দেশে কোনভাবেই অতি দারিদ্র্য বলে কিছু থাকবে না।
×