ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আজ প্রথম ওয়ানডে

পাকিস্তানের সামনে আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১৭ এপ্রিল ২০১৫

পাকিস্তানের সামনে আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ ॥ পাকিস্তানকে সিরিজ খেলতে আনতে যে বিসিবি লোকসান দিয়েছে তা বোধ হয় সার্থকই হতে চলেছে। বিশ্বকাপের পর বাংলাদেশ যে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে, পাকিস্তান যে তরুণ দল নিয়ে নতুনভাবে এগিয়ে চলার পথ বেছে নিয়েছে; তাতে বাংলাদেশেরই বাজিমাত করার সম্ভাবনা বেশি। আজ দুপুর আড়াইটায় প্রথম ওয়ানডে দিয়ে শুরু হতে যাওয়া তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশ জিতে যায় তাহলে কথাই নেই। আনন্দ, উৎসব চলতেই থাকবে। যদি তা নাও হয়, একটি ম্যাচ জিতলেও তো আনন্দের সীমা থাকবে না। ১৯৯৯ সালের পর যে দ্বিতীয়বারের মতো পাকিস্তানকে হারানো হবে। সেই সম্ভাবনা এবার বেশ জোরালো। পাকিস্তানে ২০১২ সালে সিরিজ খেলতে যাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু নিরাপত্তার জন্য আর যাওয়া হয়নি। সঙ্গে পাকিস্তানে খেলতে না যাওয়ার জন্য মামলাও হয়েছে। শেষপর্যন্ত পাকিস্তানে দুইবার যাওয়ার কথা থাকলেও খেলতে যায়নি বাংলাদেশ। এবার যখন বাংলাদেশে সিরিজ খেলার কথা পাকিস্তানের, সুযোগ বুঝে বেঁকে বসেছিল পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। এবার দ্বিপক্ষীয় সিরিজ বলে পাকিস্তান শুরুতেই সিরিজ থেকে আয়ের অর্ধেকটা দাবি করে। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) হোম সিরিজ বলে তা মেনে নেয়নি। শেষপর্যন্ত পাকিস্তানে খেলতে না যাওয়ার জন্য আড়াই কোটি টাকারও বেশি (৩ লাখ ২৫ হাজার ডলার) পাকিস্তানকে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় বিসিবি। সেই প্রতিশ্রুতি পেয়েই শেষপর্যন্ত পাকিস্তান খেলতে এসেছে। আজ সিরিজও শুরু হতে যাচ্ছে। এরপর রবিবার দ্বিতীয় ওয়ানডে, ২২ এপ্রিল তৃতীয় ওয়ানডে হবে। ২৪ এপ্রিল টি২০ ম্যাচ হওয়ার পর, ২৮ এপ্রিল থেকে ২ মে প্রথম টেস্ট ও ৬ থেকে ১০ মে দ্বিতীয় টেস্ট অনুষ্ঠিত হবে। পূর্ণাঙ্গ এ সিরিজের প্রথম টেস্ট খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে হবে। বাকি সব ম্যাচ হবে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামেই। টি২০’তে যে কে জিতে, তা বলা খুবই মুশকিল। টেস্টে মিসবাহ উল হক, ইউনুস খানদের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররা আছেন বলে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ নিয়েও উচ্চ আশা নেই। কিন্তু ওয়ানডে সিরিজ নিয়ে আছে। কেন? পাকিস্তান দলে যে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার বলতে মোহাম্মদ হাফিজ ও সাঈদ আজমলই। যেখানে বাংলাদেশ দলে ১০০ ম্যাচের বেশি খেলা খেলোয়াড়ে ছড়াছড়ি, সেখানে হাফিজ ও আজমলই শুধু ১০০’র বেশি ওয়ানডে খেলা খেলোয়াড়। তাও আবার এ দুই ক্রিকেটারেরও নৈপুণ্য দেখানোয় আছে সীমাবদ্ধতা। হাফিজ ব্যাট করতে পারলেও বল করতে পারবেন না। বোলিং এ্যাকশন যে এখনও শুধরেই নিতে পারেননি। আজমল স্পিন ঘূর্ণি ঠিকই ছুড়বেন বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের সামনে, কিন্তু তা কতটা কাজে দেবে? সেই প্রশ্ন থাকছেই। বোলিং এ্যাকশন শুধরে নেয়ার পর বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলতে নামবেন আজমল। সাত মাস আগে ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন। এতদিন পর কী আর সেই রকম বোলিং করতে পারবেন। আবার বোলিং এ্যাকশনও থাকছে না আগের মতো। তাই এ দুইজনকে নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। চিন্তা যদি করতে হয়, ভাবনা যদি ভালভাবে করতে হয়; তাহলে বোধ হয় ব্যাটসম্যান হিসেবে বিশ্বকাপে পাকিস্তানের হয়ে এক শতক করা সরফরাজ আহমেদ ও বিশ্বকাপে দুর্দান্ত বোলিং করা পেসার ওয়াহাব রিয়াজকে নিয়েই কিছুটা ভাবতে হবে। পাকিস্তানের শক্তি বলতে এ চার ক্রিকেটারই। এ চারজনকে আটকে রাখতে পারলেই হয়ে যায়। বাংলাদেশের সেই শক্তি আছে। বল হাতে মাশরাফি শুরুটা আজকের ম্যাচে না করতে পারলেও রুবেল ঝড় আবারও দেখা যেতে পারে। তাসকিন আহমেদও আছেন। এরপর স্পিন জাদু দেখাতে আরাফাত সানির সঙ্গে সাকিব, মাহমুদুল্লাহ, নাসির আছেন। ব্যাট হাতে তামিম, আজ অভিষেক হতে যাওয়া রনি তালুকদারের পর একাধারে সৌম্য সরকার, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহীম, সাকিব আল হাসান, সাব্বির রহমান রুম্মন, নাসির হোসেন তো আছেনই। বাংলাদেশের ব্যাটিং শক্তি অনেক। তা দিয়েই ম্যাচে জয় তুলে নেয়া সম্ভব। মিসবাহ, আফ্রিদি, ইউনুসরা এ সিরিজে না থাকায় যে কতটা ক্ষতি হয়ে গেছে পাকিস্তানের, তা বোধ হয় এবার হাড়ে হাড়ে বুঝবে পাকিস্তান। পাকিস্তান কোচ ওয়াকার ইউনুস কিংবা নতুন অধিনায়ক আজহার আলী যতই বলুক না কেন, ‘তরুণরাই ভাল করবে।’ আজ ম্যাচে অধিনায়ক থাকা বাংলাদেশ সহঅধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ বলেন, ‘আমরাই ফেবারিট। এবারই পাকিস্তানকে হারানোর সেরা সুযোগ। সিরিজ জিততে চাই’ বলছেন; তাতেই পাকিস্তানের ওপর, পাকিস্তান ক্রিকেটারদের ওপর চাপ তৈরি হয়ে গেছে। সেই চাপ আগে সামলাতে হবে নতুনভাবে শুরু করতে যাওয়া পাকিস্তানকে। এরপর না আত্মবিশ্বাসে ভরপুর বাংলাদেশ শিবিরে হানা দিতে হবে। নিজেদের সামলাবে বা প্রতিপক্ষ শিবিরে হানা দেবে, এ নিয়েই তো পাকিস্তানকে ব্যস্ত থাকতে হবে। সবারই জানা, দুই নৌকায় পা দিলে পিছলে পড়ার সম্ভাবনাই বেশি। পাকিস্তান এখন পিছলে পড়লেই হয়। মাঠে সাকিব, মুশফিক, তামিম, মাহমুদুল্লাহরা জিতবে; পুরো বাংলাদেশে উৎসব শুরু হয়ে যাবে। সেই উৎসবের অপেক্ষাতেই এখন সবাই। ২০১২ সালের এশিয়া কাপে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে, এরপর ফাইনালে, ২০১৪ সালের এশিয়া কাপেও জেতার এত কাছে গিয়েও জিততে পারেনি বাংলাদেশ। এবার সেই জয় ধরা দিলেই হয়ে যায়। সেই জয়ের অপেক্ষাতেই আজ প্রথম ওয়ানডে দিয়ে নতুন পাকিস্তানের বিপক্ষে বিশ্বাসী বাংলাদেশ তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের শুরু করবে।
×