ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মুক্তিযোদ্ধার নীরব প্রয়াণ

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ১৭ এপ্রিল ২০১৫

মুক্তিযোদ্ধার নীরব প্রয়াণ

মুক্তিযোদ্ধা কূটনীতিক রাষ্ট্রদূত কে এম শেহাবউদ্দিন মৃত্যুবরণ করেছেন ১৫ এপ্রিল বিকেল সাড়ে পাঁচটায় রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে। রাতে টেলিভিশনে বা পরদিন খবরের কাগজে তাঁর মৃত্যুসংবাদ দেখিনি। সকালে আমার ফোনে তাঁর কন্যা সারাহ্র শোক বার্তাটি দেখলাম- ‘আমাদের প্রিয় পিতা প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত কে এম শেহাবউদ্দিন ১৫ এপ্রিল মারা গেছেন। আজ দুপুরে বাদ জোহর তাঁর জানাজা হবে গুলশানের আজাদ মসজিদে। অনুগ্রহ করে আপনারা মোনাজাতে তাঁকে ও আমাদের পরিবারকে স্মরণ করবেন।’ বার্তাটি দেখে সঙ্গে সঙ্গে সারাহ্কে ফোন করে আমাদের গভীর সমবেদনা ও সহমর্মিতা জানিয়েছি। জানতে চেয়েছি তারা গণমাধ্যমে কেন জানাননি। সারাহ্ বললেন, তাদের পক্ষে যতটুকু সম্ভব জানানো হয়েছে। মাত্র দুটি ইংরেজী কাগজে খবরটি বেরিয়েছে। এরপর আমি ফোন করেছি মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক সচিব, কূটনীতিক ও বিশিষ্ট কলাম লেখক মহিউদ্দিন আহমেদকে। তিনি কাল সন্ধ্যায় খবর পেয়েই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রেস উইংকে বলেছেন এটি গণমাধ্যমকে জানাবার জন্য। এখনকার তরুণ সাংবাদিকদের ভেতর মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানার আগ্রহ ততটুকুই যতটুকু সংবাদ হিসেবে এর গুরুত্ব। আত্মবিমুখ এই মহান মুক্তিযোদ্ধা সম্পর্কে আজকের তরুণরা খুব একটা জানে বলে মনে হয় না। তবে ’৭১-এ যাঁরা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন কিংবা পরবর্তীকালে যাঁরা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লিখেছেন তাঁদের কাছে কে এম শেহাবউদ্দিন একটি কিংবদন্তি। যে কোন দেশের মুক্তিযুদ্ধে বহুমাত্রিকতা থাকে। শত্রুর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধÑ হতে পারে গেরিলা যুদ্ধ অথবা সম্মুখযুদ্ধ, নিঃসন্দেহে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক। তবে এই যুদ্ধ কাদের নেতৃত্বে, কী উদ্দেশ্যে, কাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত হচ্ছে সেটি রাজনৈতিক দিক, যা অন্তিমে নির্ধারণ করে মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত সাফল্য। শুধু রণাঙ্গনের সশস্ত্র যুদ্ধে কোন দেশ বা জাতি কখনও জয়ী হতে পারে না যদি না এর সঙ্গে যুক্ত হয় সর্বাত্মক কূটনৈতিক যুদ্ধ। রাজনৈতিক, সামরিক ও কূটনৈতিক যুদ্ধের সাফল্য নির্ভর করে উপযুক্ত প্রচারের ওপর, যাকে বলা হয় সাংস্কৃতিক ফ্রন্টের যুদ্ধ। মাত্র নয় মাসের ভেতর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিশাল বিজয় অর্জন সম্ভব হয়েছিল সব ফ্রন্টে সাফল্যের সঙ্গে যুদ্ধ পরিচালনার কারণে; যার দায়িত্ব ছিল সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও তাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে গঠিত স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের, যা মুজিবনগর সরকার হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে দেশে ও বিদেশে গত ৪৪ বছরে প্রায় চার হাজার বই লেখা হয়েছে, যার সিংহভাগ হচ্ছে রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসিকতা এবং সাফল্য সম্পর্কে। এরপর লেখা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক দিক সম্পর্কে। সবচেয়ে কম লেখা হয়েছে কূটনৈতিক ও সংস্কৃতি ফ্রন্টের যুদ্ধ সম্পর্কে। এর একটি বড় কারণ হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের পর পরই সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের পৃথকীকরণ প্রক্রিয়া। মুক্তিযুদ্ধের পর সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন খেতাব দেয়া হয়েছে, যদিও এ নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। অভিযোগ রয়েছে, বহু যোগ্য ব্যক্তি খেতাব পাননি, অথচ অযোগ্য বহু ব্যক্তি পেয়েছেন। সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের খেতাব প্রদানের ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা ছিল মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল ওসমানী এবং উপপ্রধান সেনাপতি এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকারের। সেই সময় ৭ নং সেক্টরের অধিনায়ক লে. কর্নেল (অব) কাজী নূরুজ্জামান তাঁর বীরউত্তম খেতাব গ্রহণ করেননি; বলেছেন, এর দ্বারা মুক্তিযোদ্ধাদের ভেতর বিভাজন সৃষ্টি করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ একটি গণযুদ্ধ। রণাঙ্গনের কয়েকজন সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাকে খেতাব দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে জনগণের অংশগ্রহণ ও অপরিসীম ত্যাগের বিষয়টি উপেক্ষা করা হয়েছে। ১৯৭৫-এ মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এবং স্বাধীন বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদানকারী তাঁর প্রধান সহযোগীদের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের অবমূল্যায়নের যে ধারা সৃষ্টি হয়েছে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর কিছুটা দুর্বল হলেও তা এখনও প্রবহমান। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য সরকার সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা, স্বাধীনতা পদক প্রবর্তন করেছে তিন যুগেরও আগে। দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, স্বাধীন বাংলাদেশে অধিকাংশ সময় ক্ষমতায় ছিল প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধ শক্তি। জিয়া, এরশাদ বা খালেদা-নিজামীদের শাসনকালে বহু স্বাধীনতাবিরোধীকে স্বাধীনতা পদক দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করা হয়েছে। শেখ হাসিনার আমলে তুলনামূলকভাবে যোগ্যদের স্বাধীনতা পদক দেয়া হলেও অযোগ্য ও বিতর্কিতরা এখনও রাষ্ট্রীয় পদক পাচ্ছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী দূতাবাসে শত্রু পরিবেষ্টিত থাকাকালে বাংলাদেশের পক্ষে আনুগত্য প্রকাশ ছিল ভয়ঙ্কর দুঃসাহসিক কাজ। তখন আমাদের সশস্ত্র বাহিনী কিংবা সরকারের অন্যান্য বিভাগে কর্মরত যাঁরা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন তাঁদের সাহস, ত্যাগ ও দেশপ্রেমের প্রতি ষোলআনা শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, বিদেশে পাকিস্তানের দুর্গে অবস্থান করে যে কূটনীতিক ও অন্য স্টাফরা স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন তাঁদের অবদান কখনও সেভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি। ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে কূটনৈতিক ফ্রন্টে যাঁরা যুদ্ধ করেছেন তাঁদের ভেতর মাত্র তিন জনকে স্বাধীনতা পদক প্রদান করা হয়েছে। এঁরা হচ্ছেন এনায়েত করিম, হোসেন আলী ও শাহ এ এম এস কিবরিয়া। আমি মনে করি মুক্তিযুদ্ধের সময় যে শতাধিক কূটনীতিক ও অন্যান্য স্টাফ পাকিস্তানী দূতাবাস থেকে বেরিয়ে এসে কূটনৈতিক ফ্রন্টে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন তাঁদের তালিকায় সব সময় সবার উপরে থাকবে রাষ্ট্রদূত কে এম শেহাবউদ্দিনের নাম। এরপর আসবে তাঁর সহকর্মী আমজাদুল হকের নাম। যখন আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়নি, বাংলাদেশের সরকার গঠিত হয়নি তখন ১৯৭১-এর ৬ এপ্রিল দিল্লীতে পাকিস্তান দূতাবাসে কর্মরত দ্বিতীয় সচিব কে এম শেহাবউদ্দিন আহমেদ ও প্রেস সচিব আমজাদুল হক বাংলাদেশে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর গণহত্যার প্রতিবাদ করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে আনুগত্য প্রকাশ করেছিলেন। এ বিষয়ে কূটনীতিক মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন আহমেদ তাঁর একাধিক লেখায় উল্লেখ করেছেনÑ তখন বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়নি, ভারত সরকার বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে কতটুকু যুক্ত হবে তা স্পষ্ট নয়, সম্পূর্ণ অনিশ্চিত ও বিপদসঙ্কুল পথে পা বাড়িয়েছিলেন শেহাবউদ্দিন ও আমজাদুল হক। দিল্লীতে তাঁদের একমাত্র সুহৃদ ছিলেন টাইমস অব ইন্ডিয়ার সাংবাদিক দিলীপ মুখার্জী। মহিউদ্দিন আহমেদ লিখেছেন, পরে কে এম শেহাবউদ্দিন তাঁর আত্মজীবনী ‘দেয়ার এ্যান্ড ব্যাক এগেইন’-এ লিখেছেন সেই শ্বাসরুদ্ধকর দিনগুলোর কথা। আমজাদুল হক নিজে এখনও কিছু লেখেননি। তিনি মহিউদ্দিন আহমেদকে বলেছেন, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান গ্রহণের ঝুঁকি সম্পর্কে তিনি কে এম শেহাবউদ্দিনের সহধর্মিণীকে বলেছিলেন। তরুণ কূটনীতিক শেহাবউদ্দিন আহমেদের তরুণী স্ত্রী, দুই শিশুসন্তানের জননী বুলবুল শেহাবউদ্দিন উত্তরে বলেছিলেন, যদি আমরা হেরে যাই দুই মেয়েকে বিষ খাইয়ে মেরে আমরা দুজন আত্মহত্যা করব। বিদেশের গণমাধ্যমে যখন পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর গণহত্যা এবং বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ছাড়া বাংলাদেশের অন্য কোন খবর ছিল না তখন ৬ এপ্রিল পাকিস্তানী দূতাবাসের দুই তরুণ বাঙালী কর্মকর্তা গণহত্যার প্রতিবাদে বিদ্রোহ ঘোষণা করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান গ্রহণ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে এক উজ্জ্বল অধ্যায় সৃষ্টি করেছে, যে অধ্যায়ের নাম কূটনৈতিক ফ্রন্টে মুক্তিযুদ্ধ। কে এম শেহাবউদ্দিন ও আমজাদুল হকের বিদ্রোহ ঘোষণার চার দিন পর ১০ এপ্রিল মুজিবনগর থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র জারি এবং প্রথম সরকার গঠিত হয়, যার রাষ্ট্রপতি ও সর্বাধিনায়ক ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ। ১৭ এপ্রিল কুষ্টিয়ার মেহেরপুরের আম্রকাননে এই সরকার দেশী-বিদেশী শত শত সাংবাদিকের উপস্থিতিতে শপথগ্রহণ করে। এর পরদিন ১৮ এপ্রিল কলকাতায় পাকিস্তানী উপ-দূতাবাসের প্রধান হোসেন আলী তাঁর সকল বাঙালী সহকর্মীকে নিয়ে পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে দূতাবাস ভবনে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। মুক্তিযুদ্ধকালে এই ভবনটি বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এর আট দিন পর ২৬ এপ্রিল নিউইয়র্কে পাকিস্তানী মিশনের দ্বিতীয় প্রধান বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। কূটনৈতিক ফ্রন্টে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করেছেন কে এম শেহাবউদ্দিন, আমজাদুল হক, হোসেন আলী ও মাহমুদ আলী। পরে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য দেশের পাকিস্তানী দূতাবাসে কর্মরত বাঙালী কূটনীতিক ও স্টাফদের অনেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জনমত গঠন এবং মুক্তিযুদ্ধে বিজয় ত্বরান্বিত ও অনিবার্য করেছে। অনেক বাঙালী তখন অনিশ্চয়তা, ঝুঁকি এবং পাকিস্তানপ্রীতির কারণে পাকিস্তান দূতাবাসে থেকে গেছেন, যাঁদের প্রায় সবাই স্বাধীন বাংলাদেশেও দাপটের সঙ্গে চাকরি করেছেন এবং মুক্তিযোদ্ধা কূটনীতিকদের মাথায় ছড়ি ঘুরিয়েছেন। স্বাধীন বাংলাদেশে কে এম শেহাবউদ্দিন বহু গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক দায়িত্ব অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে পালন করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট স্বাধীন বাংলাদেশে একবারই এসেছিলেন যখন কে এম শেহাবউদ্দিন সে দেশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। সফল রাষ্ট্রদূতদের পুরস্কৃত করার রীতি আমাদের না থাকতে পারে; কিন্তু কে এম শেহাবউদ্দিনের মতো মহান মুক্তিযোদ্ধাকে স্বাধীনতা পদক না দেয়ার লজ্জা গোটা জাতিকে বহন করতে হবে। স্বাধীনতা পদকের তালিকায় মরণোত্তরের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রয়াতদের সম্মান জানাতে হবে ভুল স্বীকারের জন্য কিন্তু এ ধরনের সম্মান পাওয়া উচিত জীবদ্দশায়। প্রয়াতদের স্বজনরা অনেক সময় এ সম্মানে ক্ষুব্ধ হন। তবু সরকারের প্রতি আমার একান্ত অনুরোধÑ আগামী বছরের স্বাধীনতা পদকের তালিকায় প্রথম নামটি যেন থাকে কে এম শেহাবউদ্দিনের। কূটনৈতিক যুদ্ধের প্রথম চার যোদ্ধার ভেতর একমাত্র হোসেন আলী স্বাধীনতা পদক পেয়েছেন। আমার বিবেচনায় হোসেন আলীর আগে এ পদক শেহাবউদ্দিন ও মাহমুদ আলীর পাওয়া উচিত ছিল। স্বাধীনতা পদক নিয়ে আমাদের অনেক লজ্জা আছে। আমরা মুক্তিযুদ্ধের কুখ্যাত দালাল এবং হানাদার বাহিনীর সহযোগীদেরও স্বাধীনতা পদক দিয়েছি। আমি জানি না, যারা এ সম্মাননার তালিকা প্রস্তুত করেন তাদের যোগ্যতা কতটুকু। সম্ভবত এ কারণে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ এ বছর পদক প্রত্যাখ্যান করেছেন। রাজধানী ঢাকায় অনেক মুক্তিযোদ্ধার নামে সড়কের নামকরণ হয়েছে যেখানে রাজনৈতিক বিবেচনা ছিল মুখ্য বিষয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বা শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নামে গুরুত্বপূর্ণ দুটি সড়কের নামকরণের জন্য বহু বছর ধরে লিখছি। এবার বলতে চাই, মুক্তিযোদ্ধা কে এম শেহাবউদ্দিনের নামে ঢাকার কূটনীতিকপাড়ায় একটি সড়কের নামকরণ করা হোক। দেশ ও জাতির কাছ থেকে এই সম্মান ও শ্রদ্ধা তাঁর মতো একজন মহান মুক্তিযোদ্ধার একান্ত প্রাপ্য। ১৬ এপ্রিল ২০১৫
×