ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পহেলা বৈশাখ কোটি মানুষের ঢল রাজপথে;###;মানুষ খুনের জঙ্গীবাদের জবাব দিল বাঙালী

জঙ্গীদের জবাব

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১৬ এপ্রিল ২০১৫

জঙ্গীদের জবাব

মোরসালিন মিজান ॥ তপোবহ্নির শিখা জ্বালো জ্বালো/নির্বাণহীন নির্মল আলো/অন্তরে থাক্ জাগি। মঙ্গল চিন্তা আর মানবিকতার বোধকে আবারও সবার উর্ধে স্থান দিল বাঙালী। বাংলাদেশ ও বাঙালীর অন্তরাত্মার মাঙ্গলিক ধ্বনি শুনল গোটাবিশ্ব। ধর্মীয় মৌলবাদী গোষ্ঠীর হুমকি, মুক্তচিন্তার ওপর বর্বর আক্রমণ, মানুষ হয়ে মানুষ খুনের নির্মম নিষ্ঠুর সময়টিকে আবর্জনা জ্ঞানে ছুড়ে ফেলা হলো। নিকট অতীতে যারা সম্প্রীতির সমাজ নষ্ট করতে চেয়েছিল, আনন্দের উপলক্ষ কেড়ে নিতে চেয়েছিল যারা, সেই জঙ্গীদের কঠিন জবাব দিল বাঙালী। বর্ষবরণ উৎসবে উগ্রবাদী জঙ্গী মানসিকতার বিনাশ চেয়ে মানুষের পক্ষে জয়ধ্বনি করা হলো। অগ্নিদগ্ধ দিন পেছনে ফেলে আলোর পথে যাত্রার ঘোষণা দেয়া হলো সারাদেশ থেকে। সবাই মিলে উদ্যাপন করল ১৪২২ বঙ্গাব্দের শুরুর দিন পহেলা বৈশাখ। মঙ্গলবার দেশজুড়েই ছিল উৎসব অনুষ্ঠান। সত্য সুন্দরের পক্ষে মানুষের স্রোত নেমেছিল। দেখে মনে হয়েছে এই বঙ্গদেশের সকল জরা কেটে গেছে। জীর্ণ পুরাতন আর নেই। অশুভ অসুন্দরকে পেছনে ফেলে বাঙালী আবাহন করেছে নতুনেরে। লোকায়ত জীবন আর নিজস্ব কৃষ্টির কাছে বিনা শর্তে নত হয়েছে শহুরে মানুষও। পূর্বপুরুষের সকল দান স্বীকার করে নিয়েছে। স্মরণ করেছে কৃতজ্ঞচিত্তে। কোটি প্রাণের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীনতাকে অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে বুকে ধারণ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে আরও একবার। ধর্ম, গোত্র ভেদ ভুলে, সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে প্রিয় স্বদেশ গড়ার শপথ নিয়েছে। বাঙালীর এই স্বপ্ন, এই উজ্জীবনের কথা জানিয়ে দিয়ে গেছে পহেলা বৈশাখ। সোমবারের প্রথম প্রভাতে প্রথম রবির কিরণে ১৪২২ বঙ্গাব্দকে স্বাগত জানায় গোটা দেশ। ৫৬ হাজার বর্গমাইলে ছড়িয়ে পড়ে বর্ষবরণের আনন্দ। তবে প্রধান প্রধান আয়োজনগুলো ছিল রাজধানী ঢাকায়। পহেলা বৈশাখ খুব চেনা শহর যথারীতি বদলে গিয়েছিল। সূর্য তখনও উঁকি দেয়নি পুব আকাশে অথচ জেগে উঠেছিল ইট-পাথরের শহর। ঘরে ঘরে ঘর ছেড়ে বের হওয়ার তাড়া। ছোট-বড় নেই। সবাই, সকলে ব্যস্ত। স্নান সেরে তড়িঘড়ি সেজে নিয়েছিলেন। পথে নেমে এসেছিলেন। হাজার হাজার লাখ লাখ মানুষ। সবাই বাঙালী। তাঁদের উপস্থিতিতে ঢাকার বড় সড়কগুলো জনসমুদ্রে রূপ নেয়। যেদিকে চোখ যায়, লাল-সাদা রং। বিশেষ করে লাল রং খুব চোখে পড়েছে। মেয়েদের শাড়িতে, জামায় ছিল উজ্জ্বল লাল। ছেলেরা সাদা পাঞ্জাবি পরে বের হয়েছিলেন। কারোর সাদা-লালের মিশেল। সুন্দর সেজে দীর্ঘপথ হেঁটে নগরবাসী যাচ্ছিলেন রমনার দিকে। আর তার পর শাহবাগ থেকে দোয়েল চত্বর ও এর আশপাশের এলাকা। কোথাও তিল ধারণের জায়গা ছিল না। বিশাল রাস্তার দুই ধারে ছিল মানুষ আর মানুষ। ছায়ানটের অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর সেখানকার মানুষ চারুকলার দিকে আসতে শুরু করেন। বাকিরা তারও আগে থেকে সমবেত হচ্ছিলেন। কেউ দলবেঁধে। কারও সঙ্গে স্ত্রী-সন্তান। বন্ধুরা, প্রেমিক-প্রেমিকরা ঘুরে বেড়িয়েছেন। পায়ে পা লাগছিল। গায়ে গা। তবে কেউ কারও যন্ত্রণার কারণ হননি বরং সব ভুলে মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল বাঙালী। মঙ্গল শোভাযাত্রা শেষ হলেও এলাকাজুড়ে এর রেশ রয়ে গিয়েছিল। তাই অনেক রাত অবধি মুখর ছিল গোটা এলাকা। এ সময় কারও হাতে ছিল বাঁশি। কারও হাতে একতারা। অনেকেই ঢোল বাজিয়ে বর্ষবরণের আনন্দ প্রকাশ করেছেন। নাচছিলেন কেউ কেউ। রাস্তাজুড়ে বসেছিল বৈশাখীমেলা। একই রকম দৃশ্য চোখে পড়েছে শহর ঢাকার অন্য সব রাস্তা, পার্ক, উদ্যানে। সব মিলিয়ে অন্যরকম একটি দিন। এই আনন্দ এই হাসিরাশি বাঙালীর সব ঘরে পৌঁছে যাক। অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক। এমন সুন্দর বেঁচে থাকার বাংলাদেশ হোক। এগিয়ে যাক। দিনভর শোনা গেছে এমন প্রত্যাশা। ছায়ানটের সঙ্গে শুরু ॥ বহু বছরের ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় রাজধানীর রমনা বটমূলে ভোরে আয়োজন করা হয় বর্ষবরণের প্রধান উৎসব। এবার ৪৭তম আয়োজন। সাম্প্রতিক সময়টি বিবেচনায় রেখে উৎসবের প্রতিপাদ্য করা হয়Ñ শান্তি, মানবতা ও মানুষের অধিকার। নববর্ষ আবাহন শুরু হয় সেতার বাদনের মধ্য দিয়ে। ১৪ মিনিটের প্রভাতী রাগ শেষে শুরু হয় সম্মেলক পরিবেশনা। ছিল একক গানও। বাঙালীর অন্তরাত্মার ধ্বনি তুলে প্রথমেই শিল্পীরা গানÑ ও আলোর পথযাত্রী, এ যে রাত্রী, এখানে থেমো না...। রবীন্দ্রসঙ্গীত ছাড়াও, নজরুল লালন সলিল চৌধুরী ও রশিদউদ্দীনের গানে প্রকাশিত হয় বাঙালীর স্বপ্ন। বিশাল মঞ্চে পাঁচ সারিতে বসেছিলেন ১৩০ জনের মতো কণ্ঠ ও যন্ত্রসঙ্গীতশিল্পী। সম্মেলক পরিবেশনায় অংশ নেন ৯৫ জন গায়ক-গায়িকা। ছায়ানটের চতুর্থ ও পঞ্চম সমাপনী বর্ষের বাছাইকৃত শিক্ষার্থীরা গায়। ছিল প্রারম্ভিক শিশু প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের চমৎকার অংশগ্রহণ। এককসঙ্গীত পরিবেশন করেন খায়রুল আনাম শাকিল, মিতা হক, লাইসা আহমদ লিসা, চন্দনা মজুমদার, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী, নাসিমা শাহীন ফ্যান্সি, সুকান্ত চক্রবর্তী, সিফায়েতউল্লাহ মুকুল, বিমান চন্দ্র বিশ্বাসসহ ১৩ জন। দুই ঘণ্টাব্যাপী আয়োজনে মোট ২৬টি গান পরিবেশিত হয়। সম্মেলক পরিবেশনা ছিল ১২টি। ১৩টি একক পরিবেশনা। যথারীতি ছিল জাতীয় সঙ্গীত। দেশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে শিল্পীরা, আগত দর্শক-শ্রোতা সবাই দাঁড়িয়ে গানÑ আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি...। এ সময় দারুণ আবেগঘন হয়ে ওঠে গোটা পরিবেশ। এর আগে অনুষ্ঠানে সমকালীন অভিজ্ঞতার আলোকে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন ছায়ানট সভাপতি ও বাঙালীর সাংস্কৃতিক আন্দোলন সংগ্রামের পুরোধা ব্যক্তিত্ব সন্্জীদা খাতুন। সংস্কৃতির এই সেবক বলেন বলেন, ধর্ম আমাদের ধারণ করে রাখে, এ কথা আমার আপনার সবারই জানা আছে। ধর্ম আবার মানুষের স্বভাবও বটে। এই স্বভাবধর্মের নীতিবোধ আমাদের শান্তির পথে আহ্বান করে। নীতিবিহীন আচরণ, ভাই-বন্ধু-সমাজ-দেশ আর বিশ্বের শান্তির প্রতিবন্ধক। আমরা শান্তি চাই, সম্প্রীতি চাই। চাই মানুষ হিসেবে আমাদের সকল অধিকারের সুরক্ষা। সুখে-শান্তিতে বাঁচবার মানবিক অধিকার চাই। চাই মানুষ হিসেবে আমাদের সকল অধিকারের সুরক্ষা। মানুষের শান্তিপূর্ণ জীবনযাত্রাবিরুদ্ধ যাÑ কিছু, তা বস্তুত আর্বজনা। এর পর সেই প্রিয় সুর কণ্ঠে তুলে তিনি বলেনÑ এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ এসো।/ তাপসনিশ্বাস বায়ে মুমূর্ষরে দাও উড়ায়ে,/ বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক। গানের রেশ থাকতে থাকতে তিনি যোগ করেন, আমরা চাই নববর্ষের প্রভাতে সকল আর্বজনা দূর হয়ে যাক। সামনের দিনগুলো স্বাধিকার-সমৃদ্ধ প্রশান্ত জীবনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে আসুক। মনে রাখতে হবে, সেই পরিবেশ সৃষ্টির দায়ও আমাদের সকলের। পরবর্তী প্রজন্মকে নতুন উদ্যমে জাগিয়ে তুলবার দায়িত্ব আপনাদের, আমাদের। তারা যেন আলোর পথের যাত্রী হয়ে উঠতে পারে। উপযোগী মানবিক সমাজ গড়তে হবে আমাদেরই। মানবযাত্রীকে সত্য, ন্যায়, কল্যাণের পথে চলে প্রকৃত মানুষ হবার সাধনা করতে হবে। সেই অভিযাত্রার শপথ নেবার দিন আজ। সেই আলোর পথে চলবার শপথ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য শেষ করেন সন্জীদা খাতুন। চারুকলায় মঙ্গল শোভাযাত্রা ॥ ছায়ানটের অনুষ্ঠান শেষ হতে না হতেই মানুষের স্রোত নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের দিকে। বর্ষবরণের সবচেয়ে বর্ণাঢ্য আয়োজনে যোগ দেন বিভিন্ন বয়সী মানুষ। অনেকে আগেভাগে এসে রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলেন। অপেক্ষা করছিলেন। আর তার পর সকাল নয়টায় শুরু হয় ঐতিহ্যবাহী মঙ্গল শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রার এবারের প্রতিপাদ্য ছিলÑ ‘অনেক আলো জ্বালতে হবে মনের অন্ধকারে’। এই সেøাগানে বের করা হয় সবচেয়ে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। প্রধান আকর্ষণ ছিল বাঁশ ও কাঠের তৈরি ১১টি বিশালাকৃতির ফোক মোটিফ। বিশেষভাবে দৃশ্যমান হয় একটি হাত। এই হাত রাজনীতির আগুনে পোড়া। তবু পরাস্ত হতে জানে না। বরং দগ্ধ হাত টুঁটি চেপে ধরে অগ্নিসংযোগকারীর। স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি ধর্মীয় মৌলবাদী গোষ্ঠীর মূলে আঘাত করে এই হাত। এভাবে প্রতীকী হাত হয়ে ওঠে বাংলার স্বরূপ। শিল্পভাষায় প্রকাশিত হয় বাঙালীর ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়। এর বাইরে শোভাযাত্রায় ছিল বাঙালীর লোকজ সংস্কৃতির নানা অনুষঙ্গ। বাঙালীর সমৃদ্ধ লোকসংস্কৃতিকে সবার ওপরে স্থান দেন শিল্পীরা। শোভাযাত্রার একেবারে সামনে ছিল শোলার তৈরি জোড়া পাখি। দেখতে এত মিষ্টি যে, মন ভরে যায়। বহন করা হয় অদ্ভুত সুন্দর টেপা পুতুল। আগামী দিনের বাংলাদেশ আরও শান্তির হবেÑ এমন প্রত্যাশায় শোভাযাত্রায় স্থান পায় বিশালাকৃতির পায়রা। হাতি, ঘোড়া ছিল। সমৃদ্ধির কথা বলছিল মোটাতাজা গাভী ও নাদুস-নুদুস বাছুর। এভাবে গ্রামীণ জীবনের সুন্দর ও তৃণমূলের মানুষের অবদানকে স্বীকার করে নেয়া হয়। ভাস্কর্যগুলোকে অনুসরণ করে হাজার হাজার মানুষ। তাদের গায়ে রঙিন পোশাক। হাতে একতারা। মাথায় গামছা প্যাঁচানো। শোভাযাত্রাটি চারুকলা থেকে শুরু হয়ে রূপসী বাংলা হোটেল পর্যন্ত ঘুরে টিএসসি হয়ে চারুকলা অনুষদের প্রধান ফটকে এসে শেষ হয়। এবার শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ও থাইল্যান্ডের সংস্কৃতিমন্ত্রী উইরা রাজপুটচানারাত। হাজার কণ্ঠে বর্ষবরণ ॥ রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এবারও আয়োজন করা হয় বর্ণাঢ্য বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের। চ্যানেল আইয়ের সহায়তায় অনুষ্ঠান আয়োজন করে সঙ্গীত সংগঠন সুরের ধারা। এখানে এক হাজার গায়ক-গায়িকা একসঙ্গে গেয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেন। রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান, চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রার পর এ আয়োজনটি রাজধানীর পহেলা বৈশাখের আয়োজনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এবারও চৈত্র সংক্রান্তির আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে ভোর সাড়ে ৫টা থেকে শুরু হয় নববর্ষ আবাহন। নগরজুড়ে বৈশাখীমেলা ॥ নববর্ষের প্রথম দিন সারা শহরজুড়ে বসে বৈশাখীমেলা। এসব মেলায় ঢল নেমেছিল মানুষের। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয় ১০ দিনব্যাপী কারুশিল্প মেলা। জাতীয় জাদুঘরের প্রাঙ্গণেও ছিল লোকজ মেলা। মঙ্গল শোভাযাত্রা শেষ হওয়ার পর চারুকলার দুই পাশজুড়ে বসে বাহারি পণ্যের মেলা। কাচের চুড়ির দোকানগুলোতে ছিল তরুণীদের প্রচ- ভিড়। শিশু একাডেমিসংলগ্ন দোয়েল চত্বরে বসেছিল কুটিরশিল্প মেলা। মোহাম্মদপুর ক্লাবের উদ্যোগে আসাদ এ্যাভিনিউতে আয়োজন করা হয় বৈশাখীমেলার। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র, শিল্পকলা একাডেমি, ধানম-ি রবীন্দ্র সরোবর, গুলশান, বনানী, উত্তরা, বারিধারার বিভিন্ন স্থানেও বসেছিল অস্থায়ী লোকজ মেলা। সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজন ॥ বর্ণাঢ্য আয়োজনে মধ্যদিয়ে বাংলা নববর্ষকে বরণ করে নেয় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। শুরুতে ‘এসো হে বৈশাখ’ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যজন। বারো মাসী গান পরিবেশন করে বহ্নিশিখা। জনপ্রিয় ‘মেঘ দে পানি দেন’ গানটি পরিবেশন করে আনন্দন। ঋষিজের বর্ষবরণ ॥ সঙ্গীত সংগঠন ঋষিজের আয়োজনে বহু বছর ধরে বর্ষবরণ উৎসব আয়োজন করা হচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় শিশুপার্কের সামনে নারকেলবীথি চত্বরে সকাল সাড়ে সাতটায় শুরু হয় উৎসব। চলে দুপুর পর্যন্ত। ওপেন এয়ার কনসার্ট ॥ পহেলা বৈশাখ মানেই লোকজ সংস্কৃতির জয়গান। এর পাশাপাশি পাশ্চাত্য ধারার ব্যান্ড সঙ্গীতেও বরণ করে নেয়া হয় নববর্ষকে। এদিন ঢাকার বিভিন্ন প্রান্তে আয়োজন করা হয় ওপেন এয়ার কনসার্টের। ধানম-িতে আবাহনী মাঠে ছিল ‘পাওয়ার ক্যান্ডি বৈশাখী কনসার্ট’। এখানে গান করে নগর বাউল, ফিডব্যাক, চিরকুট ও বাউল এক্সপ্রেস। রমনা উদ্যানের জামতলায় দেশ টিভি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সহযোগিতায় আয়োজন করে কনসার্ট ‘বৈশাখী আনন্দ তুফান’। এতে সঙ্গীত পরিবেশন করে নগর বাউল, সোলস, বাপ্পা এ্যান্ড ফ্রেন্ডস, ফিডব্যাক। এছাড়াও ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশ সাংস্কৃতিক পরিষদের শিল্পীরা। শিল্পকলা একাডেমি ॥ শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ছিল বর্ণাঢ্য আয়োজন। বাউল গান, রায়বেশে নৃত্য, সঙযাত্রা, ধামাইল, যাত্রাপালা, এ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শনী, ঘোড়ার গাড়ি চক্করসহ নানা আয়োজনে বরণ করে নেয়া হয় নববর্ষকে। উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ॥ রাজধানীর বাসাবো বালুর মাঠে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। শাহাদাৎ আলী খানের সরোদ বাদনের মধ্যদিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এসো হে বৈশাখ, আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই, বাংলা আমার সরষে ইলিশ ইত্যাদি গানে দীর্ঘ সময় ধরে চলে উদ্যাপন। ছিল আবৃত্তি ও নৃত্যের পরিবেশনা। উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের বিভিন্ন শাখা সংসদের শিল্পীরা অংশ নেন বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ॥ বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের উন্মুক্ত মঞ্চে। এখানে বাউল গান পরিবেশন করেন জালাল দেওয়ান ও তাঁর দল। লায়লা হাসানের পরিচালনায় সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যজন ও নটরাজ। দলীয় পরিবেশনায় অংশ নেয় মৈত্রী শিশু দল ও কমলাপুর স্কুল এ্যান্ড কলেজ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছিল নানা আয়োজন। ‘চেতনায় বাঙালী ও বাঙালীয়ানা’ নামের সংগঠন বর্ষবরণ করতে ভিন্নধর্মী এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সকাল ১০টায় টিএসসি মিলন চত্বর থেকে ছেলেরা দেশীয় লুঙ্গি, পাঞ্জাবি ও গামছা এবং মেয়েরা দেশীয় শাড়ি পরে শোভাযাত্রা বের করে। শোভাযাত্রা শেষে পান্তাভাত ভোজ এবং মুড়ি, খই ও বাতাসা বিতরণ করা হয়।
×