ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গীগোষ্ঠী ধরাছোঁয়ার বাইরে

কলাপাড়ায় প্রকাশ্যে চলছে দাওয়াত কার্যক্রম

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ১৬ এপ্রিল ২০১৫

কলাপাড়ায় প্রকাশ্যে চলছে দাওয়াত কার্যক্রম

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ১৫ এপ্রিল ॥ পটুয়াখালীর সাগরপাড়ের জনপদ পর্যটন এলাকা কলাপাড়ায় জেএমবির আদলে বিভিন্ন সংগঠনের নামে গোপনে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। জামায়াত-শিবিরের প্রত্যক্ষ কোন কার্যক্রম চোখে পড়ছে না। তবে দাওয়াতে ইসলাম নামের পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত একটি সংগঠন তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এ সংগঠনটির কার্যক্রম বন্ধে কলাপাড়া উপজেলা ইমাম সমিতির নেতৃবৃন্দ ২০১৪ সালের মাঝামাঝি সময় প্রশাসনকে চাপ দেয়। তখন একটি মুচলেকাও নেয়া হয় থানায় বসে। কিন্তু পাকিস্তানভিত্তিক এ সংগঠনের কার্যক্রম বন্ধ হয়নি। চাকামইয়া ইউনিয়নের মোশাররফ হোসেন নামের এক ব্যক্তি এ সংগঠনটির মাধ্যমে এ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। তবে এসব সংগঠনকে পরোক্ষভাবে জামায়াত-শিবির সহায়তা দিচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। উপকূলীয় কলাপাড়া এলাকায় তাদের শক্তিশালী অবস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে এমন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। ২০০৬ সাল থেকে এসব জঙ্গী সংগঠন উপকূলীয় সাগর-নদীবেষ্টিত এ জনপদকে টার্গেট করে। গোয়েন্দাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি না থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকার ওয়ান্টেডরা এ জনপদকে বেছে নিয়েছে। জঙ্গী গ্রুপটি বিভিন্ন সময়ে জেএমবি, হরকত-উল-জিহাদ, আলহিকমা, হেদায়েতুল ইসলাম, দাওয়াতে ইসলামসহ বিভিন্ন নামে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘ অনুসন্ধানে জানা গেছে এসব তথ্য। সূত্রমতে, বিভিন্ন নাম থাকলেও মূলত এরা সবাই জামায়াত-শিবিরের নিয়ন্ত্রণেই চালাচ্ছে তাদের কর্মকা-। ২০১৪ সালের প্রথমদিকে নীলগঞ্জ ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামে মোঃ শাকুরের বাড়ি থেকে বহিরাগত ছয়জনকে আটক করে পুলিশে দেয় স্থানীয় লোকজন। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রহমান তালুকদার জানান, আটক করা সকলেই একটি ইসলামী জঙ্গী সংগঠনের। যার বাড়ি থেকে আটক করা হয়েছিল ওই ব্যক্তি বছরের অধিকাংশ সময় ঢাকায় অবস্থান করে। মাঝে-মধ্যে বহিরাগত লোকজন নিয়ে পাঁচ/ছয়দিন অবস্থান করে। ওই এলাকায় কলাপাড়া উপজেলা জামায়াতের এক শীর্ষ নেতার বাড়ি। প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষপর্যায়ের নেতৃবৃন্দের ছবি বিকৃত করে অপপ্রচারকালে কম্পিউটার সামগ্রীসহ মোহাম্মদপুর গ্রাম থেকে গত বছর ২৬ মার্চ রাতে লিটন গাজী (২৫) এক যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা রয়েছে। কিন্তু অধিকতর তদন্ত করে এর সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা যায়নি। কলাপাড়ায় এ মুহূর্তে পায়রা সমুদ্রবন্দরের কার্যক্রম চলছে। রয়েছে কুয়াকাটায় অত্যাধুনিক অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, এমনকি রাডার স্টেশনের মতো জাতীয় স্থাপনা। এখানে মাত্র একজন নিরস্ত্র পুলিশ সদস্য সকাল নয়টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত অবস্থান করছে। এক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়টি আরও জোরদার করার দাবি করলেন কলাপাড়া উপজেলা নাগরিক অধিকার কমিটির নেতা কমরেড নাসির তালুকদার। তিনি আরও জানান, এরা চুপ করে আছে এটা ভাবাই ভুল। মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বদিউর রহমান বন্টিন জানালেন, জঙ্গীগোষ্ঠী কলাপাড়া এলাকাকে এখন নিরাপদ ভেবে গোপনে সংগঠিত হতে পারে। তাই কঠোর নজরদারি রাখা প্রয়োজন। কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কলাপাড়া পৌর মেয়র মুক্তিযোদ্ধা এসএম রাকিবুল আহসান জানান, পর্যটন এলাকা কলাপাড়ার শহরসহ পায়রা বন্দর এবং কুয়াকাটা এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তার প্রয়োজন রয়েছে। চারদলীয় জোট সরকারের সময় প্রদর্শিত অস্ত্র উদ্ধার করারও প্রয়োজনীয়তার কথা তিনি জানালেন। কলাপাড়া থানার ওসি মোহাঃ আজিজুর রহমান জানান, বর্তমানে এসব নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠনের তৎপরতা পরিলক্ষিত হয়নি। তবে তারা খুবই তৎপর রয়েছেন। তিনি এ ব্যাপারে মিডিয়াকর্মীদের সহায়তা চাইলেন তিনি।
×