ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সেনা নেতৃত্বের সঙ্গে সুচির বৈঠক

প্রকাশিত: ০৩:৪৬, ১২ এপ্রিল ২০১৫

সেনা নেতৃত্বের সঙ্গে সুচির বৈঠক

মিয়ানমারের বিরোধীদলীয় নেত্রী আউং সান সুচি শুক্রবার দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এক বিরল বৈঠকে মিলিত হন। একজন সরকারী মুখপাত্র এটিকে একটি ‘সফল বৈঠক’ হিসেবে ব্যাখ্যা করলেও এতে এ বছরের শেষদিকে নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক সংস্কার প্রশ্নে অংশগ্রহণকারীদের মতপার্থক্য দূর হওয়ার কোন আভাস পাওয়া যায়নি। তবে বৈঠকে মিয়ানমারের জাতিগত সংখ্যালঘু বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াইয়ের একটি সম্ভাব্য অস্ত্রবিরতির প্রত্যাশা বৃদ্ধি পেয়েছে। খবর ক্রিশ্চিয়ান সায়েন্স মনিটর ও গার্ডিয়ানের। সুচির ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য একটি সাধারণ ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভবত একটি পূর্বশর্ত। সুচির দল মনে করে সংবিধানের কয়েকটি ধারা অসঙ্গত। এদের মধ্যে একটি হলো দুই পুত্র বিদেশী নাগরিক হওয়ায় তাঁকে প্রেসিডেন্ট হওয়ার অযোগ্য ঘোষণা দেয়া। জাতিগত সংখ্যালঘু দলগুলোও ২০০৮-এ সামরিক শাসনের অধীনে প্রণীত সংবিধানে কিছু পরিবর্তন আনতে চায়। রাজধানী নেপিডোতে প্রেসিডেন্ট ভবনে অনুষ্ঠিত ওই নজিরবিহীন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেনÑ প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন, সুচি, সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হলাইং, পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের স্পীকার এবং জাতিগত সংখ্যালঘু দলগুলোর একজন প্রতিনিধি আয়েমং। আলোচনার অগে বৃহস্পতিবার সুচি সাংবাদিকদের বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এই আলোচনা অব্যাহত থাকবে এবং এটি হয়ত এমন এক মতৈক্যের দিকে নিয়ে যাবে যা অবাধ, সুষ্ঠু ও সকল দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পথ সুগম করবে। অংশগ্রহণের শর্ত অগ্রহণযোগ্য হলে তাঁর দল নির্বাচন বর্জন করবে কিনা সে ব্যাপারে কিছু বলতে তিনি অস্বীকার করেন। অতীতে তিনি এরকমই আভাস দিয়েছিলেন। তাঁর নির্বাচন বর্জন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একটি পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচনের ধারণা দেবে এবং বিদেশী সাহায্যদানকে মন্থর করবে তা মিয়ানমারের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য যা প্রয়োজন। থেইন সেইনের অধীনে গণতন্ত্র অভিমুখে পদক্ষেপ গ্রহণ করায় অনেক পশ্চিমা দেশ অবরোধ শিথিল করে যা তারা পূর্ববর্তী সামরিক সরকারের সময় আরোপ করেছিল। সুচির দলের থেইন সেইনের সামরিক বাহিনী সমর্থিত ইউনিয়ন সলিডারিটি এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টিকে পরাজিত করার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। আইনী শর্ত অগ্রহণযোগ্য বলে বিবেচনা করায় তাঁর দল ২০১০-এর নির্বাচন বর্জন করে। কিছু আইন সংশোধনের পর তারা ২০১২-তে উপনির্বাচনে অংশ নেয় এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ৪৪টি আসনের মধ্যে ৪৩টিতে জয়লাভ করে। সাংবাদিকদের জন্য বৈঠক কক্ষের দরজা বন্ধ করার আগে থেইন সেইন তাঁর প্রারম্ভিক বক্তব্যে বলেন, ‘ব্যক্তিগত এবং রাজনৈতিক দলীয় স্বার্থকে সরিয়ে রেখে দেশের স্বার্থে কাজ করতে হবে।’ তিনি একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। প্রায় ৫০ বছরব্যাপী সামরিক শাসনের পর ২০১১-তে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে থেইন সেইনের সরকার ধারাবাহিকভাবে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচী গ্রহণ করে। তবে বহু লোকের ধারণা, সশস্ত্রবাহিনী এখনও ব্যাপক ক্ষমতা ধরে রাখায় এই প্রক্রিয়া থমকে গেছে। নোবেল বিজয়ী ও বিরোধীদলীয় নেত্রী আউং সান সুচি এ মাসে এক বার্তা সংস্থার সঙ্গে সাক্ষাতকারে থেইন সেইনের ‘কট্টরপন্থী সরকারের’ তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, সামরিক বাহিনীকে দিয়ে যদি সংবিধানের খসড়া প্রণয়ন করা হয় এবং তাতে যদি সামরিক বাহিনীকে প্রদত্ত পর্যাপ্ত ক্ষমতা অপরিবর্তিত রাখা হয় তবে নবেম্বরের প্রত্যাশিত নির্বাচন বর্জন করা হবে একটি বিকল্প পথ। দু’ঘণ্টাব্যাপী বৈঠককে সংস্কারের গতি প্রশ্নে দেশ-বিদেশে সৃষ্টি হওয়া উদ্বেগ এবং সুচির সাম্প্রতিক মন্তব্যের পর একটি ইতিবাচক উদ্যোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে। প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ও তথ্যমন্ত্রী ইয়ে হতুত সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকে সংবিধান সংশোধন বিষয়ক প্রশ্ন, জাতিগত শান্তি প্রক্রিয়া, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং নির্বাচনপরবর্তী সময়ের স্থিতিশীলতা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
×