ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সুরের আকাশে শুকতারা

প্রকাশিত: ০৩:৩৫, ১২ এপ্রিল ২০১৫

সুরের আকাশে শুকতারা

সুরভরা দূর নীলিমায় ভেসে যায় তাঁর কণ্ঠের মূর্ছনা। সুরের আকাশে শুকতারা হয়ে জেগে থেকে কণ্ঠের লালিমায় ছড়িয়ে দেন আলোকের ঝর্ণাধারা, সুরের ঝর ঝর ঝরনায় ভাসিয়ে দেন শ্রোতার মন চরাচরের প্রান্তর ছাড়িয়ে। দূর দিগন্তের পানে চোখ মেলে তাকানো পাখিরাও বুঝি তাঁর গানের সুরে আকুল হয়ে ছুটে চলে, ইথারে ভেসে ওঠে গানের ভুবন। আর এই গানের ভুবন ভরিয়ে দিতে এখনও তিনি গেয়ে চলেন, গান নয় জীবন কাহিনী, সুর নয় ব্যথার রাগিনী। শ্রোতার অন্তরে এখনও ঝংকৃত হন কণ্ঠের মাদকতায় সুরের হার্দ্যকি ছোঁয়ায়, বাণীর অভিনিবেশে। অসাধারণ অতুলনীয় কণ্ঠের অধিকারী তিনি। তাঁর তুলনা মূলত তিনি নিজেই। শিল্পী হিসেবে যেমন তেমনি মানুষ হিসেবেও অতুলনীয়। তাল-লয় সবকিছুতেই রয়েছে তাঁর অসাধারণ দখল। কণ্ঠ মাধুর্য তাঁকে উপমহাদেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক সঙ্গীতাঙ্গনে পৌঁছে দিয়েছে। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই উল্লেখযোগ্য স্থানে গান গেয়ে দর্শককে মাতিয়েছেন। সঙ্গীত দুনিয়ায় এক নামেই পরিচিত তিনি, রুনা লায়লা। বাংলা, উর্দু, হিন্দি, পাঞ্জাবী, পশতুসহ ১৭টি ভাষায় গান গেয়েছেন। সিনেমায় যেমন তেমনি স্টেজেও তিনি দাপটে গান গেয়ে বেড়ান। আধুনিক গান, সিনেমার গান ছাড়াও পপ, লোকগীতি, পল্লীগীতি এমনকি নজরুল গীতিও তাঁর কণ্ঠে প্রাণ পায়। উপমহাদেশের গান ‘গজল’ তাঁর গীতিময়তাকে উচ্চাঙ্গে ঠাঁই দিয়েছে। সব গানেই মূলত সমান পারদর্শী তিনি। প্রশংসা, জনপ্রিয়তা, অর্জন ও সম্মাননায় পাড়ি দিলেন সঙ্গীত জীবনের ৫০টি বছর। ১৯৫২ সালে সিলেটে জন্ম। শিল্পী ১২ বছর বয়সে বাঙালী পরিচালক নির্মিত ‘জুগনু’ উর্দু ছবিতে গান গেয়ে মাতিয়ে দেন। সে গান আজও শ্রোতাপ্রিয়। ৫০ বছরের সঙ্গীত জীবনে গেয়েছেন হাজার দশেক গান। বাংলা, হিন্দি, উর্দু গান গেয়ে চলচ্চিত্র ও সঙ্গীত জগতকে সমৃদ্ধ করেছেন। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে এখনও রুনা লায়লার তুলনা শুধুই তিনি। গানের পাশাপাশি শুরু থেকেই মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। বাড়িয়েছেন সহযোগিতার হাত, শারীরিক প্রতিবন্ধীদের সহায়তার জন্য সুইড বাংলাদেশের হয়ে কাজ করছেন। সার্কের শুভেচ্ছা দূতও তিনি। ইউএনএইডসেরও শুভেচ্ছা দূত হয়ে এইচআইভি ও এইডসের ব্যাপারে সবাইকে সচেতন করার কাজও করছেন। ক্যান্সার রোগে প্রয়াত বড় বোন দীনা লায়লার স্মরণে ঢাকা শিশু হাসপাতালে ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুদের জন্য একটি ওয়ার্ডও গড়েছেন। নতুন শিল্পীর সন্ধানে অনুষ্ঠানের বিচারকও হয়েছেন। স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত শিল্পীর ঝুলিতে অজস্র পদক। শিল্পী তিনি শিল্পিত জীবনের আবাহনে তাই গান শুনিয়ে যান আজো। গানের পঞ্চাশ বর্র্ষপূর্তিতে শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধা।
×