ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

তিস্তা ও সীমান্ত চুক্তির বিষয়ে ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ॥ পঙ্কজ শরন

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১০ এপ্রিল ২০১৫

তিস্তা ও সীমান্ত চুক্তির বিষয়ে ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ॥ পঙ্কজ শরন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে ভারতের কোন মূল্যায়ন নেই বলে মন্তব্য করেছেন ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরন। এছাড়া তিস্তা ও সীমান্ত চুক্তির বিষয়ে ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে তিস্তা চুক্তি সমতার ভিত্তিতে হতে হবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের মধ্যে দিয়ে দু’দেশের সম্পর্কে আরও ইতিবাচক অগ্রগতি হবে। এদিকে, অনলাইন ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে ভারতীয় হাইকমিশনের কোন ভূমিকা নেই বলেও তিনি মন্তব্য করেন। বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে কূটনৈতিক সাংবাদিকদের সংগঠন ডিক্যাব আয়োজিত ‘ডিক্যাব টক’ অনুষ্ঠানে তিনি এ সব মন্তব্য করেন। ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরন সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ভারত তার নিজের দেশের রাজনীতি নিয়েই শুধু মূল্যায়ন করে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে ভারতের কোন মূল্যায়ন নেই বলেও তিনি জানান। তিস্তা ও সীমান্ত চুক্তির অগ্রগতি জানতে চাইলে ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তিতে দু’দেশই যেন সন্তুষ্ট হয়, সেভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। তিস্তা ও সীমান্ত চুক্তির বিষয়ে ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে তিস্তা চুক্তি হতে হবে সমতার ভিত্তিতেÑ যেন দু’দেশই লাভবান হয়। দু’দেশই চুক্তির নীতিমালা মেনে নেয়। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশ সফর করে যাওয়ার পরে তিস্তা চুক্তিতে আরও অগ্রগতি হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত একে অন্যের সঙ্গে যত বিষয়ে সম্পৃক্ত, পৃথিবীর অন্য কোন দেশের সঙ্গে এমন সম্পৃক্ততা নেই। দুই দেশের সমস্যা ও সঙ্কট একই ধরনের। তাই সমস্যা নিরসনে দু’দেশের সঙ্কট মোকাবেলার জন্য এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফরের বিষয়ে জানতে চাইলে পঙ্কজ শরন বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছেন বাংলাদেশ সফরে আসার জন্য। তিনি আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। আবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তবে মোদির ঢাকা সফরের মধ্যে দিয়ে দুই দেশের সম্পর্কে আরও ইতিবাচক অগ্রগতি হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। এ সফরের তারিখ এখনও নির্ধারণ হয়নি বলে তিনি জানান। ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য খুবই ভাল পরিবেশ রয়েছে। দেশের উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশে যেমন স্থিতিশীলতা দরকার, একইভাবে ভারতের উন্নয়নের জন্যও বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা দরকার। কেননা দেখা যায়, বাংলাদেশ যখন উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যায়, প্রবৃদ্ধি অর্জন করে, তখন ভারতেরও উন্নতি হয়। নীতি-নির্ধারকদের যুবসমাজের কথা চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারণ এরাই ভবিষ্যতে দেশ পরিচালনা করবে। ভারতের ভিসা আবেদন নিয়ে জটিলতা নিরসনের বিষয়ে জানতে চাইলে ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া ঢাকার ভারতের হাইকমিশন নিয়ন্ত্রণ করে না। ভিসার জন্য অনলাইন আবেদনের সার্ভারটি দিল্লী থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। তবে ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া আরও সহজ করার জন্য আমরা কাজ করছি। এছাড়া বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে নির্ধারিত তারিখ ছাড়া ভিসা আবেদন নেয়াও হচ্ছে বলে তিনি জানান। ভারতের হাইকমিশনার বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত করতে বাংলাদেশ-নেপাল-ভুটান-ভারত এ চারটি দেশের মধ্যে যে কোন যান চলাচলের প্রস্তাব রাখা হয়েছিল, তবে সার্কের একটি সদস্য দেশ স্বাক্ষর না করায় গত সম্মেলনে বিষয়টি অনুমোদন পায়নি। দ্রুত বর্ধমান অর্থনৈতিক অঞ্চল এটি। অতি সত্বরই বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। বাংলাদেশে ভারতীয় বিনিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে পঙ্কজ শরন বলেন, বাংলাদেশ সরকার ভারতীয় ব্যবসায়ীদের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক জোন তৈরির ঘোষণা দিয়েছে। এ জোন তৈরি হলে এখানে ভারতীয় বিনিয়োগ বাড়বে। আর ভারতের ব্যবসায়ীরা এখানে যাবতীয় নিয়ম-কানুন মেনেই ব্যবসা পরিচালনা করবেন বলেও তিনি জানান। বাংলাদেশকে দ্বিতীয় মেয়াদে লাইন অব ক্রেডিট দেয়া হবে কি-না জানতে চাইলে ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, ভারতের সিনিয়র সচিব সুজাতা মেহতার ঢাকা সফরকালে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এ বিষয়ে আরও আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত হবে বলে তিনি জানান। পঙ্কজ শরন বলেন, সীমান্ত চিহ্নিতকরণের ক্ষেত্রেও শতকরা ৯৯ দশমিক ৭ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। বাংলাদেশ-ভারত ইতিহাসে ঐতিহাসিক বিষয় হলো সমুদ্রসীমা নির্ধারণ। ইতোমধ্যে দু’দেশের সমুদ্রসীমা নির্ধারিত হয়েছে। সমুদ্রসীমার সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে এ সময় বাংলাদেশের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। সীমান্তে হত্যাকা- প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পৃথিবীর কোন দেশেই চোরাকারবারীকে বৈধ বলে না। তবে বর্তমানে সীমান্তে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার লক্ষণীয়ভাবে কমে এসেছে। ইয়েমেন থেকে বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে ভারত কোন সহযোগিতা করবে কি-না এমন প্রশ্নের উত্তরে ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, ইয়েমেনের বাংলাদেশীদের উদ্ধারে ভারত সহযোগিতা করতে আগ্রহী। এ বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে বলেও তিনি জানান। সম্প্রতি শেষ হওয়া বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলা নিয়ে দু’দেশের সম্পর্কের অবনতি হতে পারে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) বা আইসিসির কেউ নই। এ প্রশ্নটি তাদেরকে করলেই ভাল হতো। তবে আমি মনে করিÑ ক্রিকেটের কারণে সম্পর্কের অবনতি নয়, বরং দু’দেশের ক্রীড়া বন্ধন-সম্প্রীতি বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ডিক্যাব সভাপতি মাসুদ করিম, সাধারণ সম্পাদক বশির আহমেদ প্রমুখ।
×