ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জিহাদী জোশে-

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ৯ এপ্রিল ২০১৫

জিহাদী জোশে-

জঙ্গীপনাকে এ্যাডভেঞ্চার ভেবে তার প্রতি ঝুঁকে পড়ছে পশ্চিমা তরুণীরা। যাদের মধ্যে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূতরাও রয়েছে। সম্ভাব্য বিপদ জেনেও তারা কেন যুদ্ধের ময়দানে সমবেত হচ্ছে- সে বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে সেই সব দেশকে, যে সব দেশের তরুণ-তরুণীরা জড়ো হচ্ছে সেই এ্যাডভেঞ্চারে। ইসলামিক স্টেট (আইএস) নামক আলোচিত, আলোড়িত জঙ্গী সংগঠনের হয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার বাসনায় পাশ্চাত্যের নিরাপদ জীবনযাত্রা ছেড়ে অজানা মরুভূমির দেশে উগ্রবাদিতার প্রশিক্ষণ নিয়ে লড়াই করছে তারা। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্সসহ আরও অনেক দেশের মুসলিম তরুণ-তরুণীরা উন্নত দেশের জীবনযাত্রা, শিক্ষা-দীক্ষা পেছনে ফেলে রেখে চলে গেছে সিরিয়াতে, যেখানে আইএসের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। এরা যে সবাই ধর্মের টানে গিয়েছে তা নয়। বরং রহস্য-রোমাঞ্চের টানে এক অদ্ভুত জীবনের দিকে নিজেদের বিনাশের ক্ষেত্র বেছে নিয়েছে তারা। আইএস জঙ্গীরা তাদের কাছে হয়ে উঠছে অনেকটা পরম আরাধ্যজন হিসেবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো তাদের এই বিপজ্জনক পথে ঠেলে দিচ্ছে ভাবাবেগের নানা তোড়ে। ফেসবুক, টুইটারে জিহাদী জোশে উদ্বুদ্ধ করে এদের সেই পথে টেনে নিচ্ছে। তরুণরা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ পেলেও তরুণীরা হয়ে পড়ছে যৌনদাসী। আইএসের সেনাদের মনোরঞ্জন করাই তাদের কাজ হয়ে পড়ছে। জঙ্গীরা এদের নিপুণভাবে নিজেদের উদ্দেশ্যে কাজে লাগাচ্ছে। পরিবার পরিজন ও আত্মীয়স্বজন থেকে এদের দূরে সরিয়ে রাখছে। জানা গেছে, ব্রিটেন থেকে প্রায় সাত শ’ মুসলিম তরুণ-তরুণী সিরিয়ায় আইএস জঙ্গীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। যে ক’জন ব্রিটিশ তরুণ-তরুণীকে চিহ্নিত করা গেছে, তাদের অধিকাংশই মধ্যবিত্ত শ্রেণীর এবং শিক্ষিত। জিহাদের অনুপ্রেরণা তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পেয়েছেন স্থানীয় মসজিদভিত্তিক জিহাদী গ্রুপগুলোর কাছ থেকে। ইউরোপে বেকারত্ব বাড়ছে, সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে বহিরাগতবিরোধী মনোভাব। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মুসলিম অভিবাসীরা এই মনোভাবের শিকার। নিজেদের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন এসব অভিবাসী তরুণ-তরুণী কিছুটা বেপরোয়া হয়েই জিহাদে যোগ দিচ্ছে। পশ্চিমা দেশগুলোর ভয়, যুদ্ধ ময়দান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসব তরুণ-তরুণী যার যার দেশে ফিরে গিয়ে জিহাদী মন্ত্র ছড়াবে, যা হবে আরও বিপজ্জনক। আইএস জঙ্গীদের অর্থবল, অস্ত্রবল অনেক শক্তিশালী। তেল ও গ্যাসক্ষেত্রগুলো তাদের দখলে থাকায় কাঁচা টাকার কোন অভাব নেই তাদের। তবে তারা যুদ্ধক্ষেত্রে ওই পশ্চিমাদের সামনে ঠেলে দিচ্ছে, নিজেরা পেছনে থাকে। সিরিয়া, মিসরের বিশাল অংশ করায়ত্ত করে আইএস খিলাফত রাষ্ট্র ঘোষণা করে খলিফার নামও ঘোষণা করেছে। এদের লক্ষ্য বিশ্বজুড়ে অভিন্ন খিলাফত গড়ে তোলা। এসবে আকৃষ্ট হয়ে যে সব তরুণী ‘জিহাদীবধূ’তে পরিণত হয়েছে, তারা এক অন্ধকার অমানিশার পথ ধরে যেদিকে ধাবিত হচ্ছে, তার থেকে বেরিয়ে আসা সহজ নয়। বরং আরও তরুণীকে অন্ধকারের দিকে টানবেই। এসবের লাগাম এখনই টেনে ধরা না গেলে ভবিষ্যত ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে পশ্চিমা তথা বিশ্বের অন্যান্য দেশের তরুণ-তরুণীদের ক্ষেত্রেও।
×