ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রাজশাহীতে শিলাবৃষ্টি নিম্নাঞ্চল প্লাবিত ॥ বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন

ফের কালবৈশাখীর তা-ব ॥ ঢাকায় একজনের মৃত্যু

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ৮ এপ্রিল ২০১৫

ফের কালবৈশাখীর তা-ব ॥ ঢাকায় একজনের মৃত্যু

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ মাত্র দুদিনের ব্যবধানে মঙ্গলবার সন্ধ্যা রাতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে ফের শিলাবৃষ্টি ও কালবৈশাখী ঝড় হানা দিয়েছে। এতে ঢাকার পার্শ্ববর্তী দোহার নবাবগঞ্জে একজন নিহত এবং পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। উপড়ে পড়েছে বহু গাছপালা। অন্যদিকে রাজশাহীতে কালবৈশাখীর তা-ব ও শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে বহু এলাকা। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও সংবাদদাতার। সংবাদদাতা ঢাকার দোহার-নবাবাগঞ্জ থেকে জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকার দোহারে বয়ে যাওয়া কালবৈশাখী ঝড়ে অন্তত ৫ শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। উপড়ে গেছে গাছপালা, বিচ্ছিন্ন রয়েছে বিদ্যুত সংযোগ। ঝড়ের সময় মাথার ওপর গাছ ভেঙে পড়ে এক কিশোরী নিহত হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে দোহারের বিভিন্ন এলাকা দিয়ে কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যায়। প্রায় আধাঘণ্টার তীব্র বাতাসে উপজেলার জয়পাড়া, বিলাসপুর, চর বিলাসপুর, বাহ্রা, ধোয়াইর, লটাখোলা, নিকড়া, ইউসুফপুর, বাস্তা, আউলিয়াবাদ, মাহমুদপুরসহ কয়েকটি এলাকার কাঁচা ও আধাপাকা অনেক ঘর বিধ্বস্ত হয়। ঢাকা পল্লী বিদ্যুত সমিতি-২ দোহার জোনাল অফিসের ডিজিএম আব্দুল লতিফ জানান, ঝড়ে অনেক গাছ উপড়ে বিদ্যুতের লাইনের ওপর পড়ে আছে। সেগুলোর অপসারণ কাজ শুরু হয়েছে। কোন কোন স্থানে সংযোগ ছিঁড়ে গেছে। বিদ্যুত সংযোগ চালু করতে সময় লাগতে পারে। রাজশাহী ॥ দুইদিনের ব্যবধানে আবারও কালবৈশাখীর তা-ব চালিয়েছে রাজশাহী অঞ্চলে। দুইদিন আগের ছোবল থেকে ক্ষতিগ্রস্থ ঘর গোছানোর আগেই আবারও কালবৈশাখীতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে তাৎক্ষণিক খবর পাওয়া গেছে। কালবৈশাখীর সঙ্গে বজ্র ও শিলাসহ ভারী বৃষ্টিপাতে রাজশাহী নগরীর উপশহর এলাকা ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটা থেকে শুরু হওয়া ঝড়বৃষ্টিতে গ্রামাঞ্চলের উঠতি বোরো ধান, গম, ভুট্টা, পানের বরজ, কলা, সবজি পেঁপে বাগান আম ও লিচুর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝড়বৃষ্টি শুরুর পরপরই বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন রয়েছে রাজশাহী নগর ও জেলাজুড়ে। এদিকে প্রবল বেগে বয়ে যাওয়া কালবৈশাখীর আঘাতে আবারও ল-ভ- হয়ে গেছে গ্রামীণ জনপদ। জেলার তানোর, গোদাগাড়ী, পবা, মোহনপুর, চারঘাট, দুর্গাপুর ও পুঠিয়া এলাকায় অসংখ্য ঘরবাড়ির চালা উড়ে গেছে। দুইদিন আগে উড়ে যাওয়া ঘরের ছাউনি না থাকায় অনেক কাঁচা ঘরবাড়ি ধসে গেছে। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোন প্রাণহানীর খবর পাওয়া যায়নি। রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের সহকারী আশরাফুল আলম জানান, ঘণ্টা ৫৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেড়ে কালবৈশাখী ও বজ্রসহ শিলাবৃষ্টিপাত হয়েছে। রাজশাহী অঞ্চলে আধাঘণ্টায় ৪১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। মৌসুমের বেশি ভারী বৃষ্টিপাত বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে। এসব উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ঘরবাড়ির টিনের চালা উড়ে গেছে এবং তীব্র ঝড়ে গাছপালার ডাল ভেঙ্গে পড়েছে। গোদাগাড়ীর পাকড়ি ইউনিয়নের পাকড়ি পশ্চিম পাড়ার অন্তত ৬০টি বাড়ির চালা উড়ে গেছে। তানোর বিদ্যুত অফিস সূত্রে জানা গেছে, অনেক স্থানে বিদ্যুতের লাইনের তার ছিঁড়ে পড়ে গেছে। ঝড়ে কামারগাঁ ইউনিয়নের ধানুরা চকপ্রভুরাম উচ্চ বিদ্যালয়ের টিন উড়ে গেছে। বোরো ধানের শীষ বের হওয়া ধান মাটিতে নুইয়ে পড়েছে। তানোর উপজেলার কৃষক এহসান আলী জানান, ঝড়ের সঙ্গে ব্যাপক শিলাবৃষ্টি হওয়ায় আম, লিচু, পেঁপে ও কলা ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তিনি জানান, দুইদিন আগের ক্ষতির ওপর দ্বিতীয় দফার বৃষ্টিতে কৃষকের সীমাহীন ক্ষতি হয়েছে। এদিকে ঝড়বৃষ্টি শুরুর সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অনেকস্থানে টেলিফোনের লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এছাড়া ঝড়ের সঙ্গে ভারী বৃষ্টিপাতে রাজশাহী নগরীর অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত উপশহর এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। নগরীর অনেকস্থানে ড্রেন উপচে প্লাবিত হয়েছে। অনেক বাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। নগরীর উপশহর ছাড়াও কোর্ট অঞ্চলের অনেক বাড়িতে পানি উঠে গেছে। সড়কের বিভিন্ন সড়ক প্লাবিত হয়ে চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েন নগরবাসী। দীর্ঘদিন ড্রেন পরিষ্কার না করায় এ অবস্থা হয়েছে বলে নগরবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী শাহিনুল আলম জানান, ঝড়ের কারণে খুঁটি, তার বিচ্ছিন্ন ও ট্রান্সমিটার বিস্ফোরিত হওয়ায় বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন হয়েছে। বিদ্যুত বিভাগের টেকনিসিয়ানরা বিদ্যুত সংস্কারের কাজ চলছে। খুব দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে আশাপ্রকাশ করেন তিনি। আবহাওয়ার খবর ॥ স্টাফ রিপোর্টার জানান, দেশের কয়েক জেলায় মঙ্গলবার বৃষ্টিপাত হলেও আগামী দু’দিন দেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। আজ বুধবারও দেশের অনেক জায়গায় বৃষ্টিপাত থাকতে পারে। আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, খুলনায় ও নোয়াখালী অঞ্চলসহ রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের দু’ এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র আকাশ অস্থায়ীভাবে মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। মঙ্গলবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোর ও মংলায় ৩৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন রাঙ্গামাটিতে ১৯.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড হয়। আর ঢাকায় সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয় যথাক্রমে ৩২.৪ ও ২২.৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস। মঙ্গলবার সারাদিন রাজধানীর আকাশ ছিল মেঘলা। সন্ধায় ঝরে পড়ে বৃষ্টি। বৃষ্টির সঙ্গে ও বিদ্যুত চমকানি থাকায় পথচারীদের ব্যাঘাট ঘটে। বাড়িয়ে দেয় জনদুর্ভোগ। বৃষ্টিতে আটকা পড়ে হাজার হাজার মানুষ। নিকটস্থ শপিংমল, দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নেয় লোকজন। অফিস শেষে কর্মজীবীদের বাসায় ফেরার সময় বৃষ্টি হওয়ায় নাগরিক দুর্ভোগের মাত্রা আরও কয়েকগুণ বেড়ে যায়। বৃষ্টির মাত্রা বেশি থাকায় দৌঁড়ে পাবলিক পরিবহনে উঠাও সম্ভব হয়ে উঠেনি। ঝড়ে গাছ উপড়ে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক বন্ধ ॥ স্টাফ রিপোর্টার মুন্সীগঞ্জ থেকে জানান, ঝড়ে গাছ উপড়ে পড়ে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে এই মহাসড়কটি বন্ধ থাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
×