ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ফসল ক্ষতিগ্রস্ত

ঝড়-ভারিবর্ষণে বাড়িঘর স্থাপনা বিধ্বস্ত

প্রকাশিত: ০৪:১৬, ৮ এপ্রিল ২০১৫

ঝড়-ভারিবর্ষণে বাড়িঘর স্থাপনা বিধ্বস্ত

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ ভারিবর্ষণে হাটহাজারী, ফটিকছড়ি ও রাঙ্গুনিয়ায় রবি ফসলের ক্ষতি, সান্তাহারে ঘূর্ণিঝড়ে বাড়িঘর, স্থাপনা বিধ্বস্ত ও কালকিনিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। খবর নিজস্ব সংবাদদাতাদের পাঠানো- ফটিকছড়ি ॥ সপ্তাহ ধরে থেমে থেমে ভারিবর্ষণে হাটহাজারী এবং ফটিকছড়ির প্রত্যন্ত অঞ্চলে রবি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ভারিবর্ষণের কারণে জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে বিভিন্ন ধরনের ফসল ডুবে যায়। কোন কোন স্থানে পানির তোরে সব ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মরে গেছে শত শত একর জমির রবি ফসল। এছাড়া, উঁচু জমিতে চাষাবাদকৃত তরমুজ এবং বাঙ্গির যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে। ফসল উত্তোলনের শুরুতেই ভারিবর্ষণ হওয়াতে এ ফলের ফলন দ্রুত হ্রাস পেয়ে গাছ মরে যাচ্ছে। ফলে চাষিরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হওয়াতে চিন্তিত হয়ে পড়েছে। সান্তাহার ॥ বগুড়ার সান্তাহার পৌর শহরসহ আদমদীঘি উপজেলার উপর দিয়ে শনিবার সন্ধ্যায় বয়ে যাওয়া প্রলয়ঙ্করি ঘূর্ণিঝড়ে কাঁচা ও আধাপাকা ঘড়বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারী-বেসরকারী স্থাপনা, গাছপালা ও ফসল মিলে প্রায় পৌনে ৪ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হলেও মঙ্গলবার পর্যন্ত সরকারীভাবে বড় ধরনের কোন সহায়তা মেলেনি। উপজেলা প্রশাসন খাদ্য. সহায়তা হিসাবে বরাদ্দ দিয়েছে মাত্র ৫ মেট্রিক টন চাল। দেড় হাজারের অধিক ক্ষতিগ্রস্তদের মাথাপিছু সহায়তার পরিমাণ মাত্র ৩ কেজি ২১ গ্রাম। যা প্রয়োজনের তুলনায় শুধু অপ্রতলই নয় হাস্যকরও বটে বলে অনেকেরই অভিমত। আদমদীঘি উপজেলা প্রশাসনের করা তালিকা অনুযায়ী উপজেলায় এক পৌর সভা ও ৬ ইউনিয়নে ক্ষতিগ্রস্ত মোট ১ হাজার ৫ শত ৫৪ পরিবাবের মধ্যে ১ হাজার ১ শত ২২ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শুধু সান্তাহার পৌর ও ইউনিয়ন এলাকায়। ওই তালিকা মোতাবেক জনসাধারণের ঘড়-বাড়ি ও গাছ-পালার ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা, উঠতি প্রায় ইরি-বোরো ফসল ৭০ লাখ টাকা এবং ৩০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৬০ লাখ টাকা সহ মোট প্রায় পৌনে ৪ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। কালকিনি ॥ মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলায় গত সোমবার রাতে কালবৈশাখী ঝড়ে শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে এবং চলতি ইরি-বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়েছে। ঝড়ে কালকিনি উপজেলার শিকারমঙ্গল এলাকার চরফতে বাহাদুর হরি কান্দি শ্রী শ্রী সার্বজনীন বাবুরাম পাগল সেবাশ্রমের ঘর দুমড়ে-মুচড়ে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়েছে। আশ্রমের পরিচালনা কমিটির সভাপতি মন্টু রঞ্জন ম-ল আর্তনাদের সঙ্গে বলেন, ঝড়ে আমাদের সেবাশ্রমের যে ক্ষতি সাধন হয়েছে তাতে সরকারী-বেসরকারী সাহয্য সহযোগিতা না পেলে নতুন করে সেবাশ্রমের ঘর নির্মাণ করা সম্ভাব হবে না। রাঙ্গুনিয়া ॥ রাঙ্গুনিয়ার প্রাণকেন্দ্র পৌর সভার সৈয়দবাড়ি শহীদ ছালেহ আহমদ সড়ক, পশ্চিম সৈয়দবাড়ী বড়ুয়া পাড়া সড়ক, পাবলিক স্কুল সড়ক, মধ্যম সৈয়দবাড়ি ও পূর্ব পাড়া সড়কে উন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কগুলো জন ও যান চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। গত দুই দিনের সামান্য বৃষ্টিতে সড়কে পানি জমে জল ও কাদায় একাকার হয়ে গেছে। পশ্চিম সৈয়দবাড়ি বড়ুয়া পাড়া সড়কে গাইড ওয়াল না থাকায় রাস্তা ভেঙ্গে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। রাজশাহীর ১৭৬ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিধ্বস্ত স্টাফ রিপোর্টার রাজশাহী থেকে জানান, কোন স্কুলের পুরো ছাদ নেই। কোনটির ধসে পড়েছে দেয়াল। বেঞ্চ চেয়ার-টেবিল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। ভিজে নষ্ট হয়েছে বই খাতা রেজিস্ট্রার। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস চলছে খোলা আকাশের নিচে। কোনটির ক্লাস চলছে গাছের তলায়। শনিবারের কালবৈশাখীর তা-বে রাজশাহী জেলার বিভিন্ন উপজেলার অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এখন এমনই দশা। ঝড়ের পর থেকে এসব স্কুলে কমেছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। শিক্ষকরা আসলেও তেমন শিক্ষার্থী মিলছে না কয়েকদিন থেকে। শনিবারের ঝড়ের পর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমন অবস্থা দেখা গেছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এখন শুধু কালবৈশাখীর ক্ষতচিহ্ন। ঝড়ে শুধু রাজশাহী জেলায় ১৭৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে রাজশাহী জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগের পাঠদান চলছে খোলা আকাশের নিচে। প্রলয়ঙ্করি ঝড়ে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় ৪২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলোর পাঠদান চলছে খোলা আকাশের নিচে। ফলে পাঠদান কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো মেরামত করে কবে নাগাদ সেখানে পাঠদানের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হবে তাও নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। একই অবস্থা জেলার বাঘা, পুঠিয়া, চারঘাট, দুর্গাপুর, মোহনপুর, তানোর ও বাগমারা উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত শনিবার বিকেলের ঘূর্ণিঝড়ে শুধু গোদাগাড়ীতেই ২৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও দাখিল মাদ্রাসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যদিকে প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৭টি। সব মিলিয়ে উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৪২টি। ক্ষতিগ্রস্ত এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগেরই টিনের ছাউনি উড়ে গেছে।
×