ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান

প্রকাশিত: ০৪:১২, ৮ এপ্রিল ২০১৫

অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান

খুব বেশিদিন আগের কথা নয়; মুখ থুবড়ে পড়ার দশা হয়েছিল বিমানের। অভ্যন্তরীণ রুটে একের পর এক বিমান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। উড়োজাহাজ সঙ্কট ও ক্রমাগত লোকসানের কারণেই অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট বন্ধ করে দেয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। দেখতে দেখতে আড়াই বছর পার হয়ে যায়। খাদের কিনার থেকে তুলে এনে পুনরায় উড্ডয়নের আয়োজন করা- সামান্য কথা নয়। এ যেন অনেকটা ভূমিলগ্ন জড়ভরতের শরীরে নতুন ডানা জোড়ার মতোই ব্যাপার। সোমবার থেকে অভ্যন্তরীণ রুটে বিমানের যাত্রা শুরু হয়েছে; বিমান বহরে যুক্ত হয়েছে সদ্য কেনা নতুন দুটি বিমান মেঘদূত ও ময়ূরপঙ্খি। এতে বিমানের বহরে উড়োজাহাজের সংখ্যা দাঁড়াল ১২টিতে। তবে এটাও ঠিক, এখনই আত্মতুষ্টি আসা সমীচীন হবে না। উড্ডয়নে গতি ও ছন্দ আনা, সময়ানুবর্তিতার চর্চায় নিষ্ঠার স্বাক্ষর রাখা এবং আরও কিছু কর্মসাধন হলেই বলা যাবে মান বজায় রেখে বিমান উড়ছে বাংলার আকাশে। বিমানের ভাড়া যাত্রীর জন্য সব সময়েই সাশ্রয়ী; বেসরকারী এয়ারলাইন্সের তুলনায় ঢের কম। আকাশপথে আকাশছোঁয়া ভাড়ার বিপরীতে এক প্রকার চ্যালেঞ্জই ছুড়ে দিয়েছে বিমান। প্রসঙ্গত, এখন শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে বছরে প্রায় সাত লাখ যাত্রী আকাশপথে যাতায়াত করছে। দেশী-বিদেশী পর্যটক পরিবহন যে কোন এয়ারলাইন্সের জন্যই বড় উপার্জন খাত। ঢাকা থেকে কক্সবাজারে সড়কপথ যাত্রীবান্ধব নয় বলে কম খরচে বিমানে যেতে পর্যটকরা এখন আরও উৎসাহী হবে বলে ধারণা করা যায়। বেসরকারী এয়ারলাইন্সগুলোয় ঢাকা থেকে কক্সবাজারে রিটার্ন ভাড়ার টাকা দিয়ে নেপাল বেড়িয়ে আসা সম্ভব। ফাঁকা মাঠে গোল দেয়ার মতো বিমানের অনুপস্থিতির সুযোগে বেসরকারী এয়ারলাইন্সগুলো অব্যাহতভাবে ভাড়া বাড়িয়ে আসছিল। অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট চালু উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মূল্যবান কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি সময়সূচী ধরে ফ্লাইট পরিচালনা করতে বিমানের কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ঘড়ি ধরে উড়োজাহাজ ওঠানামা করলে, বিলম্বের নজির না রাখলে নিশ্চয়ই বিমানের প্রতি যাত্রীদের আস্থা গড়ে উঠতে সময় লাগবে না। এই সুনাম কাজে লাগিয়ে প্রতিটি ফ্লাইটেই যাত্রী-আসন পূর্ণ রাখা সম্ভব। প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি বিমানের কার্গো ব্যবস্থা চালু, যাত্রীসেবা নিশ্চিত ও দক্ষতা বাড়ানোর তাগিদ দেন, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের মান উন্নত করার কথা বলেন। বিমানকে আন্তর্জাতিকমানের করতে হলে এসব পরামর্শ বিবেচনায় নিতেই হবে, এটা বিমান কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই অনুধাবনে সক্ষম। অর্থনীতির সচলতার প্রয়োজনেই উড়োজাহাজের অভ্যন্তরীণ রুটকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে হবে। দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে মানুষের যাতায়াতই শুধু নয়, পণ্য পরিবহনের জন্যও বিমানপথের অধিক ব্যবহার আজ সময়ের দাবি। দেশে কেবল বহুসংখ্যক যাত্রী বহন উপযোগী উড়োজাহাজ নয়, হেলিকপ্টারের মতো স্বল্প আসনের আকাশবাহনের চাহিদাও বাড়বেÑ সে বিষয়েও চিন্তা-ভাবনা করা প্রয়োজন।
×