ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

তিকরিতে গণকবরের সন্ধান

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ৮ এপ্রিল ২০১৫

তিকরিতে গণকবরের সন্ধান

ইরাকী ফরেনসিক টিমগুলো তিকরিত নগরীতে ১২টি গণকরব খনন করা শরু করেছে, যেখানে ইসলামিক সেস্ট (আইএস) গোষ্ঠীর হাতে নিহত ১৭শ’ বন্দী ইরাকী সৈন্যের মৃতদেহ আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত বছর আইএস যোদ্ধারা উত্তর ইরাকজুড়ে ঝটিকা অভিযান চালানোর সময় তাদের নৃশংসভাবে হত্যা করে। খবর আল জাজিরা, বিবিসি ও সিএনএনের। গত জুনে সুন্নি অধ্যুষিত নগরী তিকরিতের বাইরে সাবেক মার্কিন ঘাঁটি ক্যাম্প স্পাইচারের শিয়া সৈন্যদের এই নির্মম গণহত্যায় আইএস যোদ্ধাদের বর্বরতার আরেকটি চিত্র ধরা পড়েছে। ইরাকী সৈন্য ও শিয়া আধাসামরিক বাহিনী আইএসের কবল থেকে নগরীকে মুক্ত করার কিছুদিন পর ওই ১২টি গণকবর খনন করা শুরু হয়। শিয়া সৈন্যদের নৃশংসভাবে হত্যা করার ছবি জিহাদীরা অনলাইনে পোস্ট করে। তিকরিতে পাঠানো ফরেনসিক টিমের সঙ্গে কর্মরত ইরাকী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা খালেদ আল-আতবি বরিবার বার্তা সংস্থাকে বলেন, ‘আজ আমরা প্রথম গণকবটি খুঁড়েছি। এ পর্যন্ত আমরা অন্তত ২০টি মৃতদেহের সন্ধান পেয়েছি। প্রাথমিকভাবে আভাস পাওয়া গেছে, তারা সন্দেহাতীতভাবে গণহত্যার শিকার। এটা একটা হৃদবিদারক দৃশ্য। এটা দেখে আমরা চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি।’ তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘কোন্ ধরনের অসভ্য বর্বর ঠা-া মাথায় ১৭শ’ জনকে হত্যা করতে পারে?’ গত মাসে জাতিসংঘের প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়েছিল, গত ১২ জুন আইএস সংক্ষিপ্ত বিচারে ক্যাম্প স্পাইচারের ইরাকী সেনাবাহিনীর ১৫শ’ থেকে ১৭শ’ সদস্যের মৃত্যুদ- কার্যকর করে। কয়েকটি সমাধিক্ষেত্র সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের চত্বরে আবিষ্কার করা হয়। গত বছর আইএস নগরীটি দখলের পর প্রেসিডেন্ট প্রাসাদকে তাদের সদর দফতরে পরিণত করে। ধারণা করা হচ্ছে, বন্দী কিংবা আত্মসমর্পণের পর ইরাকী সৈন্যদের প্রাণবধ করা হয়। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, ওই ঘটনার সরকারী তদন্তের ফলাফল এখনও প্রকাশ করা হয়নি। খনন ও লাশ উদ্ধারের তত্ত্বাবধানকারী ইরাকী মর্গের একজন পরিচালক আলী তাহের বলেন, মরদেহগুলো ডিএনএ পরীক্ষা ও পরিচয় শনাক্তের জন্য বাগদাদে পাঠানো হবে। সিএনএনের আরওয়া জ্যামন একজন ইরাকী সৈন্যের সাক্ষাতকার নেন, যিনি মৃতের ভান করে গণহত্যা থেকে প্রাণে রক্ষা পান। সৈন্যটি তাকে জানায়, আইএস ক্যাম্প স্পাইচারের বাইরে সৈন্যদের বন্দী করে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের কমপ্লেক্সে আর্চ করে নিয়ে যায় এবং তাদের বলে, বন্দী বিনিময় না হওয়া পর্যন্ত তারা নিরাপদ থাকবে। প্রাসাদ চত্বরের ভেতরে নিয়ে যাওয়ার পর সৈন্যদের ছোট ছোট দলে পৃথক করা হয়, প্রাণদ- কার্যকর করা হয় এবং গণকবরে সমাহিত করা হয়। তিনি বলেন, তাকে নদীতে ছুড়ে ফেলা হয় এবং তিনি একটি বাঁধে ভেসে যান। সোমবার প্রধানমন্ত্রী আবাদি বলেন, গণকবর আবিষ্কারের ঘটনায় প্রতিরোধ গ্রহণই একমাত্র পথ নয়। তিনি বলেন, হত্যাকা-ে জড়িত কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। নিখোঁজ সৈন্যদের পরিবারবর্গ তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছে সে ব্যাপারে জানানোর জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছিল। পরিবারগুলো দাবি করে, এসব সৈন্যকে তাদের কমান্ডাররা ঘাঁটি ত্যাগ করে বাগদাদ অভিমুখে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তারা নিরস্ত্র অবস্থায় বেসামরিক পোশাকে ঘাঁটি ত্যাগ করেন। তবে সামরিক কমান্ডাররা ও ইরাকী প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এ ধরনের কোন নির্দেশ জারি এবং তাদের পরিত্যাগ করার কথা অস্বীকার করেছে। মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ‘স্পাইচার গণহত্যাকে’ ‘সবচেয়ে বড়মানের প্রকাশিত ঘটনা’ বলে উল্লেখ করেছে, যেখানে আইএস ক্যাম্প স্পাইচার থেকে পলায়নরত সহস্রাধিক সৈন্যকে বন্দী ও তাদের মধ্যে অন্তত ৮০০ জনের সংক্ষিপ্ত বিচারে মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়।
×