ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তদন্ত কমিটির রিপোর্ট

লাঙ্গলবন্দে ব্রিজ ভাঙার গুজব ও ছোট জায়গায় বেশি লোক হওয়ায় দুর্ঘটনা

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ৭ এপ্রিল ২০১৫

লাঙ্গলবন্দে ব্রিজ ভাঙার গুজব ও ছোট জায়গায় বেশি লোক হওয়ায় দুর্ঘটনা

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ ॥ বন্দর উপজেলার লাঙ্গলবন্দে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পুণ্যস্নানে ভিড়ের চাপে পদদলিত হয়ে ১০ জনের মৃত্যুর পর জেলা প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটি ঘটনার জন্য ব্রিজ ভাঙার গুজব ও ছোট জায়গায় অনেক বেশি লোকের সমাগমকে দায়ী করেছে। তবে গুজব রটানো পরিকল্পিত কি-না সে বিষয়ে কোন উল্লেখ নেই রিপোর্টে। তদন্ত কমিটির এক সদস্য বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে বলেন, এ কাজ আমাদের নয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে ১৫টি সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করেছে কমিটি। রিপোর্টে স্নানোৎসবের জন্য লাঙ্গলবন্দের তিন কিলোমিটার এলাকা সংরক্ষণের সুপারিশ করা হয়েছে। সোমবার তদন্ত কমিটি জেলা প্রশাসকের কাছে তাদের রিপোর্ট পেশ করেছে। গত ২৭ মার্চ সকালে লাঙ্গলবন্দের রাজঘাটে প্রচ- ভিড়ের চাপে পদদলিত হয়ে সাত নারীসহ ১০ পুণ্যার্থীর মৃত্যু হয়। ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক ইশরাত হোসেন খানের নেতৃত্বে সাত সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২৬ মার্চ হতে ২৮ মার্চ পর্যন্ত তিন দিন সরকারী ছুটি থাকায় এ বছর লাঙ্গলবন্দে পুণ্যার্থীদের সংখ্যা অন্য বছরের চেয়ে অনেক বেশি ছিল। পুণ্যস্নান লগ্নের সময় অন্য বছরের তুলনায় এ বছর কম বা সংক্ষিপ্ত থাকায় এবং অন্য স্নানঘাটগুলোর তুলনায় রাজঘাটকে পুণ্যার্থীরা স্নানের জন্য বেশি গুরুত্ব দেয়ায় রাজঘাট সংলগ্ন এলাকায় পুণ্যার্থীদের সংখ্যা অনেক বেশি ছিল। ঘটনাস্থল সংলগ্ন ঘাটটি তিন রাস্তার সংযোগস্থলে হওয়ায় লোকজন তিন দিক থেকে চলাচল করার কারণে স্থানটিতে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি ভিড় ছিল। ঘটনাস্থল সংলগ্ন রাজঘাট বেইলী ব্রিজটি ভেঙ্গে যাচ্ছে এ রকম একটি গুজবে পুণ্যার্থীদের আতঙ্ক এবং ছোটাছুটির কারণে প্রচ- চাপে শারীরিকভাবে অপেক্ষাকৃত দুর্বল ও নারী পুণ্যার্থীরা পদদলিত হয়ে মারা যায়। কমিটি তাদের রিপোর্টে এ রকম ঘটনা পুনরাবৃত্তি রোধে লাঙ্গলবন্দের তিন কিলোমিটার এলাকা স্নানের জন্য সংরক্ষণ করাসহ ১৫ সুপারিশ করেছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোÑ স্নানঘাট এলাকাসহ দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নদী খনন করা, সিঁড়িযুক্ত ঘাট নির্মাণ করা, পুণ্যস্নান স্থান সংলগ্ন ভূমি যথাযথভাবে জরিপ করে জমির সঠিক মালিকানা নির্ধারণ, দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য প্রয়োজনে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি অধিগ্রহণ, নদী সংলগ্ন কলকারখানা হতে নির্গত বর্জ্য যাতে নদীর পানি দূষিত না করে তার ব্যবস্থা নেয়া, পুণ্য স্নানকালীন সময়ে মেলা ও দোকানপাটের জন্য আলাদা জায়গা করা, রাস্তার দুইধারে দোকান বসানো নিষিদ্ধ করা, স্নানস্থান ঘাটের সঙ্গে রাস্তার সংযোগ সড়ক স্থাপন করা, বেইলি ব্রিজগুলোর পরিবর্তে স্থায়ী (পাকা) ব্রিজ নির্মাণ, স্নানোৎসবকালীন সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্য মোতায়েন ও দুর্ঘটনা এড়াতে তদারকি, অধিক সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, র‌্যাব-পুলিশ, আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োগ, উচ্চপর্যায়ে তদারকি বাড়ানো, স্নানোৎসবকালীন সময়ে সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ, স্নান উৎসবকালীন সময়ে পুণ্যার্থীদের সুবিধার্থে শৌচাগার (পুরুষ-মহিলাদের জন্য আলাদা) ও পানির ব্যবস্থা ও পর্যাপ্ত কাপড় বদলানোর জায়গা রাখা। তদন্ত কমিটির প্রধান, জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক ইশরাত হোসেন খান বলেন, সোমবার জেলা প্রশাসকের কাছে রিপোর্ট জমা দেয়া হয়েছে। আমরা দুর্ঘটনার কারণ নির্ধারণ ছাড়াও এ ধরনের ঘটনা পুনরাবৃত্তি রোধে সুপারিশ করেছি। তদন্ত কমিটির এক সদস্য বলেন, মূলত ব্রিজ ভাঙার গুজব ও ছোট জায়গায় অনেক বেশি লোকের সমাগম ঘটাতে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে পরিকল্পিতভাবে গুজব রটানো হয়েছে কিনা তা নির্ধারণ করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আমরা নই। জেলা প্রশাসক মোঃ আনিছুর রহমান রহমান মিঞা বলেন, রিপোর্টে দুর্ঘটনার কারণ শনাক্ত করে এ ধরনের ঘটনা পুনরাবৃত্তি রোধে সুপারিশ করা হয়েছে। লাঙ্গলবন্দে অবৈধ স্থাপনার পাশাপাশি বৈধ স্থাপনাও অনেক ক্ষেত্রে সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এগুলো অধিগ্রহণের প্রয়োজন। আমরা বিষয়গুলো সরকারের উচ্চ পর্যায়কে অবহিত করব। ইতোমধ্যেই নদী খননের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
×