ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মাহফুজুর রহমান

ভোক্তা অধিকার ও নিরাপদ খাদ্য

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ৭ এপ্রিল ২০১৫

ভোক্তা অধিকার ও নিরাপদ খাদ্য

খাদ্যের মতো খাদ্য নিরাপত্তাও একটি মৌলিক অধিকার। খাদ্য গ্রহণ মানবজীবনে অপরিহার্য। তাই মৌলিক অধিকারের ক্ষেত্রে খাদ্যের নাম প্রথম আসে। খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে আশপাশের কোন সুযোগ নেই। জনগণের নিরাপদ খাদ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। দীর্ঘদিনের কাক্সিক্ষত এবং অবশ্য প্রয়োজনীয় বিষয়টি নিশ্চিত করতে সরকার ১৯৪৯ সালের ‘চঁৎব ঋড়ড়ফ ঙৎফরহধহপব’ রহিত করে নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ প্রণয়ন করে, এ বছরের পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হয়। বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতির যথাযথ অনুশীলনের মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্যপ্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিতকরণে খাদ্য উৎপাদন, আমদানি, প্রক্রিয়াকরণ, মজুদ, সরবরাহ, বিপণন ও বিক্রয়সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম সমন্বয়ের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ এবং এ লক্ষ্যে একটি দক্ষ কার্যকর কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে বিদ্যমান আইন রহিত করে নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ প্রণয়ন করা হয়। এ আইনে মোট ১৩টি অধ্যায়, ৯০টি ধারা এবং একটি তফসিল রয়েছে। এছাড়া প্রতিটি ধারার অধীনে প্রয়োজনীয় একাধিক উপধারা সংযুক্তিতে আইনটি প্রায়োগিক ক্ষেত্রে যথেষ্ট কার্যকর হবে বলে আশা করা যায়। খাদ্য সংশ্লিষ্ট ব্যবসার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে উঁচু থেকে নিচু পর্যন্ত দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায়িক সততার অভাব লক্ষণীয়। এমনকি অনেক নামকরা কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্যসামগ্রীও বিভিন্ন সময় প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। স্থগিত বা বাতিল হয়েছে তাদের রফতানি আদেশ। এতে আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি দেশের ভাবমূর্তি ও মর্যাদার যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে। হিমায়িত চিংড়ি রফতানির ক্ষেত্রে বহুবার ইইউ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন উন্নত দেশের পক্ষ থেকে নানা বিধিনিষেধের মুখোমুখি হতে হয়েছে দেশকে। দেশ, জনগণ, ব্যবসায়ী কারও জন্য এটা কাম্য বা সুখকর নয়। নিরাপদ খাদ্য আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তন হবে বলে আশা করা যায় । আইনে খাদ্যের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, খাদ্য অর্থ চর্ব্য, চূষ্য, লেহ্য (যেমন- খাদ্যশস্য, ডাল, মৎস্য, মাংস, দুগ্ধ, ডিম, ভোজ্য-তৈল, ফলমূল, শাকসবজি ইত্যাদি) বা পেয় (যেমন- সাধারণ পানি, বায়ুবাহিত পানি, অঙ্গারায়িত পানি, এনার্জি-ড্রিংক ইত্যাদি)-সহ সকল প্রকার প্রক্রিয়াজাত, আংশিক-প্রক্রিয়াজাত বা অপ্রক্রিয়াজাত আহার্য উৎপাদন এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ বা প্রস্তুতকরণে ব্যবহৃত উপকরণ বা কাঁচামালও, যাহা মানবদেহের জন্য উপকারী আহার্য হিসেবে জীবনধারণ, পুষ্টিসাধন ও স্বাস্থ্য-রক্ষা করতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। দেখা যাচ্ছে, নানা আকার-প্রকার, রঙে, গন্ধে আমরা যে সকল খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করে থাকি এর সবকিছুই এ আইনের আওতায় ‘খাদ্য’ হিসেবে গণ্য হবে। তবে ঔষধ, ভেষজ, মাদক ও সৌন্দর্য সামগ্রী ইত্যাদি খাদ্যের অন্তর্ভুক্ত হবে না। নিরাপদ খাদ্য আইনের আওতায় সরকার সারাদেশে পর্যাপ্তসংখ্যক বিশুদ্ধ খাদ্য আদালত নির্ধারণ করবে। পূর্বতন চঁৎব ঋড়ড়ফ ঈড়ঁৎঃ বর্তমান আইনের অধীনে ‘বিশুদ্ধ খাদ্য আদালত’ হিসেবে কাজ করবে। এছাড়া নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ এর অধীনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য এটাকে মোবাইল কোর্ট আইন ২০০৯ এর তফসিলভুক্ত করার ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ নামে ৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি শক্তিশালী কর্তৃপক্ষ থাকবে। গবেষক, শিক্ষাবিদ এবং সংশ্লিষ্ট অন্যদের নিয়ে এ কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়। নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনার স্বার্থে সকল খাদ্য ও খাদ্য উপাদান উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ ও বিপণন কার্যক্রম পরীবিক্ষণ এবং উৎকৃষ্ট পদ্ধতির অনুশীলন ও বিপত্তি বিশ্লেষণ কর্তৃপক্ষের দায়িত্বের মধ্যে থাকবে। জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ফরমালিন, রঞ্জক, ডিজেল, কেমিক্যাল ইত্যাদি সামগ্রীর ব্যবহার যখন অনেকটা নিয়ন্ত্রণহীন সে সময়ে আইনটির উপযোগিতা অনস্বীকার্য। তবে আইনের প্রায়োগিক উপযোগিতার ওপর নির্ভর করবে এর সফলতা। আশা করা যায়, এ আইন প্রণয়নের ফলে অসাধু ব্যবসায়ীরা নতুন করে ভাববেন, বন্ধ হবে অনিরাপদ খাদ্য উৎপাদন, বিতরণ ও বিক্রয়। লেখক : প্রাবন্ধিক
×