ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ ৬ জনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননা বিষয়ে শুনানি ১৫ এপ্রিল

প্রকাশিত: ০৬:১২, ৬ এপ্রিল ২০১৫

যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ ৬ জনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননা বিষয়ে শুনানি ১৫ এপ্রিল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে হরতাল ডাকা এবং রায় নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির ও ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল, ছাত্রশিবিরের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও আইনজীবী তাজুল ইসলামসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার বিষয়ে ১৫ এপ্রিল শুনানির জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত নেত্রকোনার মুসলিম লীগ নেতা আতাউর রহমান ননি ও নেজামে ইসলামের ওবায়দুল হক তাহেরের বিরুদ্ধে সূচনা বক্তব্য শেষ করেছে প্রসিকিউশন। ১২ এপ্রিল থেকে প্রসিকিউশনের প্রথম সাক্ষীর জবানবন্দীর জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে স্কাইপি সংলাপে বিচারপতিদের সম্পর্কিত তথ্য জানতে চাওয়ায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামি সালাহউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর আইনজীবী ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলামের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার বিষয়ে শুনানি এবং আদেশের জন্য ৭ জুন দিন ধার্য্য করা হয়েছে। রবিবার চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক। ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে হরতাল ডাকা ও বিরূপ মন্তব্য করায় জামায়াতের আইনজীবী তাজুল ইসলামসহ তিন জামায়াত নেতা ও দুই শিবির নেতার আদালত অবমাননার বিষয়ে শুনানির দিন পিছিয়ে আগামী ১৫ এপ্রিল ধার্য করা হয়েছে। রবিবার এ জবাবের বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য ছিল। তবে জামায়াত-শিবির নেতাদের পক্ষে তাদের আইনজীবী এওয়াই মশিউজ্জামান শুনানির প্রস্তুতির জন্য সময়ের আবেদন জানান। প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম। আবেদন মঞ্জুর করে শুনানি পিছিয়ে আগামী ১৫ এপ্রিল দিন ধার্য করা হয়েছে। আদালত অবমাননার অভিযুক্ত জামায়াত-শিবির নেতারা হচ্ছেন- জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমেদ, ভারপ্রাপ্ত নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ড. শফিকুর রহমান এবং ছাত্রশিবিরের সভাপতি আব্দুল জব্বার ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ আতিকুর রহমান। ননি-তাহের ॥ এদিকে নেত্রকোনার দুই রাজাকার আতাউর রহমান ননি (৬২) ও নেজামে ইসলামের ওবায়দুল হক তাহেরের (৬৪) বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন পক্ষ থেসে সূচনা বক্তব্য শেষ করেছেন। প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল সূচনা বক্তব্য রাখেন। অন্যদিকে আসামি পক্ষের আইনজীবী পরিবর্তন হওয়াতে সময় প্রার্থনা করা হয়। পরে সাক্ষীর জবানবন্দীর জন্য ১২ এপ্রিল দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ প্রদান করেছেন। তদন্ত সংস্থা দীর্ঘদিন তদন্ত শেষে ২০১৪ সালের ৫ নবেম্বর চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রদান করেন। তারা ৪টি অভিযোগ দাখিল করলেও প্রসিকিউশন তা যাচাই বাছাই করে আরও দুটি অভিযোগ বাড়িয়ে মোট ৬টি অভিযোগ দাখিল করেন। ১২ আগস্ট ট্রাইব্যুনাল থেকে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারির এ দুই আসামিকে গ্রেফতারের পরদিন ১৩ আগস্ট তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ৫ নবেম্বর একটি মামলার আসামি ওবায়েদুল হক তাহের ও আতাউর রহমান ননির বিরুদ্ধে তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এই দুই রাজাকারের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, বাড়িঘরে আগুন ও লুটপাটের মোট ৪টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, বাড়িঘরে আগুন ও লুটপাট। ১৫ জনকে অপহরণের পর নির্যাতন করে হত্যা, প্রায় সাড়ে ৪শ’ বাড়িঘরে লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেয়ার অভিযোগ। তদন্ত সংস্থা ৪টি অভিযোগ থেকে প্রসিকিউশন যাচাই বাছাই করে পরবর্তীতে ৬টি অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে, একাত্তরের ১৭ আগস্ট সকাল ১১টার দিকে আসামিদের নেতৃত্বে রাজাকাররা নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা থানার বাউসী বাজার থেকে ফজলুর রহমান তালুকদারকে অপহরণ করে। এর পর নেত্রকোনা জেলা পরিষদ ডাকবাংলোয় নির্যাতনের পর ত্রিমোহনী ব্রিজে হত্যা করে । হত্যাকা-ের পর বাউসী বাজারের ৪০০/৪৫০টি দোকান ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। ৪ অক্টোবর ১৯৭১, সকাল আনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে নেত্রকোনা শহরের বারহাট্টা রোডের শ্রীশ্রী জিউর আখড়ার সমানের রাস্তা থেকে আসামিরা কৃতী ফুটবলার দাবির হোসেনকে অপরহরণ করে। এর পর নির্যাতন চালিয়ে মোক্তারপাড়া ব্রিজে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। ২৯ অক্টোবর ১৯৭১ বেলা অনুমান সাড়ে ১২টার দিকে আসামিরা বারহাট্টা থানার লাউফা গ্রামে মশরফ আলী তালুকদারসহ ১০ জনকে অপহরণ করে ঠাকুরাকোনা ব্রিজে ৭ জনকে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে। রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার আতাউর রহমান ননি ও অন্য রাজাকাররা শহরের মোক্তারপাড়ায় মলয় বিশ্বাসের বাড়ি এবং এ্যাডভোকেট শ্রীষ চন্দ্র সরকারের বাড়ি দখল, মানসিক নির্যাতন ও দেশত্যাগে বাধ্য করা। ১৫ নবেম্বর ১৯৭১ সকাল ১১টার দিকে আসামিরা বিরামপুর বাজার থেকে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক বদিউজ্জামান মুক্তসহ ৬ জনকে অপহরণ করে। এর পর লক্ষীগঞ্জ ও মোক্তার পাড়া ব্রিজ নিয়ে গুলি করে হত্যা করে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছে। অক্টোবরের মাঝামাঝি শিক্ষক কামিনী চক্রবর্তীসহ ২৭ জনকে হত্যা। তাদের নেত্রকোনা জেলগেট থেকে ধরে এনে নেত্রকোনা ত্রিমোহনী ব্রিজের কাছে নিয়ে হত্যা করা হয়। আদালত অবমাননা ॥ আসামি পক্ষের আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্কাইপি সংলাপে বিচারপতিদের সম্পর্কিত তথ্য জানতে চাওয়ায় ফখরুল ইসলামের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার বিষয়ে শুনানি এবং আদেশের দিন আবারও পিছিয়েছে। পরবর্তী দিন নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ জুন। চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ প্রদান করেছেন। এর আগে ৭ মার্চ ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করলে প্রথমে নির্ধারিত দিনে ৮ এপ্রিল আদেশ দেয়া হবে জানিয়ে দেয় আদালত। ট্রাইব্যুনালের সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের স্কাইপি সংলাপ নিয়ে বিচারিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার অভিযোগে সালাহ উদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর অইনজীবী ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলামের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননায় শোকজ নোটিস জারি করে ট্রাইব্যুনাল-১। একই সঙ্গে ওই দিন তার বিরুদ্ধে রুলও জারি করা হয়। রুলে ট্রাইব্যুনালের বিচারিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার অভিযোগে কেন তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না সে মর্মে জানতে চাওয়া হয়। ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম একটি আবেদনে ট্রাইব্যুনাল-১ এর সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হকের সঙ্গে অন্য বিচারপতিরা যুক্ত আছেন কিনা তা জানতে চেয়েছিলেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে শোকজ করে নোটিশ দেন ট্রাইব্যুনাল। প্রবাসী আইন বিশেষজ্ঞ জিয়াউদ্দিনের সঙ্গে ট্রাইব্যুনালের তৎকালীন চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম স্কাইপি কথোপকথন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকাসহ বেশ কিছু পত্রিকায় প্রকাশ হয়ে যাওয়ায় তিনি ট্রাইব্যুনাল থেকে পদত্যাগ করেন।
×