ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আলোচনা সভায় সৈয়দ শামসুল হক

ইসলাম ক্রমেই ঢাকা পড়ে যাচ্ছে জঙ্গী ও রাজনৈতিক ইসলামের আড়ালে

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৫ এপ্রিল ২০১৫

ইসলাম ক্রমেই ঢাকা পড়ে যাচ্ছে জঙ্গী ও রাজনৈতিক ইসলামের আড়ালে

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ জঙ্গীবাদ ও সাম্প্রদায়িক শক্তিকে নির্মূল করতে সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং শিক্ষাসূচিতে অসাম্প্রদায়িকতার শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এখনকার তরুণরাই পারে আবারও হাল ধরতে। সব স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে একত্রিত করার মধ্য দিয়ে সাংস্কৃতিক জাগরণ ঘটাতে হবে। আর সংস্কৃতির মধ্য দিয়েই প্রতিরোধ ও পরিবর্তন গড়ে তোলা সম্ভব। শনিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রমেশচন্দ্র মজুমদার (আরসি) মিলনায়তনে ‘রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ’ আয়োজিত স্বাধীনতা দিবস আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে আলোচনা অনুষ্ঠান শুরু হয়। আলোচনা শুরুর আগে দেশের সাম্প্রতিক সময়ের উগ্র জঙ্গীবাদী তৎপরতাকে রুখে দিতে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন সাংবাদিক আবেদ খান। সভায় এমিরেটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ড. সরোয়ার আলী, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ, সংগঠনের আহ্বায়ক মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল প্রমুখ। আলোচনার আগে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক। আলোচনায় অংশ নিয়ে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বলেন, অসাম্প্রদায়িক চেতনার চর্চা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় নেই। সরকার ও ক্ষমতাসীনদের উদাসীনতাও এই অবস্থার জন্য অনেকটা দায়ী। জঙ্গীবাদ ও সাম্প্রদায়িক শক্তিকে ছাড় দেয়ার মানসিকতা দেখা যাচ্ছে। তবে তরুণদের প্রতি আস্থা হারাইনি। আমরা এখনও বিশ্বাস করি তরুণ প্রজন্মই সকল অপশক্তিকে রুখে দিতে পারে। যার প্রতিফলন আমরা ২০০৮ এর নির্বাচন এবং শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চে দেখেছি। সব স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে একত্রিত করার মধ্য দিয়ে সাংস্কৃতিক জাগরণ ঘটাতে হবে। আর সংস্কৃতির মধ্য দিয়েই প্রতিরোধ ও পরিবর্তন গড়ে তোলা সম্ভব। সম্প্রতি সময়ে বিজ্ঞানমনস্ক লেখক অভিজিত রায় ও ব্লগার বাবু হত্যা সম্পর্কে তিনি বলেন, মানুষের নির্লিপ্ততা আমাদের অবাক করে। অপরের বিপদে যদি আমরা এগিয়ে না যাই, তাহলে আমাদের বিপদের সময় একই রকম হবে, কেউ এগিয়ে আসবে না। অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, দেশের জঙ্গীবাদ ও সাম্প্রদায়িক শক্তিকে নির্মূল করতে হলে সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। স্বাধীনতার এত বছর পর এতকিছু হলেও আমাদের মানসিক বিপ্লব হয়নি। প্রতিটি কওমি মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজ ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তারেক মাসুদের ‘রানওয়ে’ এবং নাসিরউদ্দীন ইউসুফ বাচ্চুর ‘গেরিলা’ প্রদর্শন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে চায়, এর ফলেই তাদের ভোটের রাজনীতির স্বার্থে তারা কখনও গণজাগরণ মঞ্চকে সমর্থন দেয়, কখনও বা হেফাজতকে। জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির জোট বিচ্ছিন্ন না করা পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সফলতা আসবে না। অন্যথায় দেশ গৃহযুদ্ধের দিকে এগোবে। সংগঠনের আহ্বায়ক ও বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল বলেন, ভোটের রাজনীতি যারা করেন, তাদেরই সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। মূল প্রবন্ধে সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক বলেন, ইসলাম ক্রমেই ঢাকা পড়ে যাচ্ছে জঙ্গী ইসলাম ও রাজনৈতিক ইসলামের আড়ালে। সাধারণ মানুষ তাদের নিজেদের নিয়ে চিন্তিত। বিএনপির কাছে আহ্লাদ পাওয়া জামায়াতীরাই বিএনপির ডাকা হরতাল অবরোধের সুযোগ নিয়ে তাদের কড়াল দাঁত দেখিয়েছে। নির্বাচনের জন্য বিএনপির আন্দোলনের অবস্থা যাই হোক না কেন, জঙ্গীবাদী তৎপরতা থামবে না। বিএনপির আন্দোলন আর বিএনপির হাতে নেই, পুরোপুরি জামায়াতের হাতে চলে গেছে।
×