ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতারক চক্র গ্রেফতার

অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার সঙ্গে প্রতারণা

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ৫ এপ্রিল ২০১৫

অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার সঙ্গে প্রতারণা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আইনী সেবা কেন্দ্র ব্যবহার করে বেআইনী কার্যকলাপের দায়ে গ্রেফতার হয়েছে এক সুন্দরী নারীসহ তিন প্রতারক। গ্রেফতারকৃতরা অনলাইনে জিনিসপত্র বেচাকেনার কথা বলে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল। প্রায় একবছর ধরে প্রতারক চক্রটির হাতে অনেকেই দামী ল্যাপটপসহ মূল্যবান সামগ্রী খুঁইয়েছেন। গ্রেফতারকৃতরা সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। এমন প্রতারক চক্রের সন্ধান ও গ্রেফতারে অভিযান চলছে। সম্প্রতি অনলাইনে জিনিসপত্র বেচাকেনা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অনেকেই সময় বাঁচানোর জন্য অনলাইনে জিনিসপত্র কিনে থাকেন। এমন সুযোগটিকেই বেছে নেয় প্রতারকরা। প্র্রতারিত অনেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ করেন। এমনই পাঁচটি প্রতারণার অভিযোগ জমা পড়ে র‌্যাব-২ এর কার্যালয়ে। অভিযোগে প্রতারণার জায়গাগুলো উল্লেখ করা হয়। তদন্তে প্রতারণার বিষয়টি সত্য বলে প্রমাণিত হয়। শুরু হয় গ্রেফতার অভিযান। জায়গাগুলোতে থাকা ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে প্রতারণার কৌশল ও সত্যতা মিলে। তারই ধারাবাহিকতায় শনিবার সকাল আটটার দিকে র‌্যাব-২-এর একটি দল রাজধানীর মোহাম্মদপুর, গ্রীন রোড ও এলিফ্যান্ট রোডের ক্রাউন ল চেম্বারে অভিযান চালায়। গ্রেফতার করা হয় আফসানাকে (১৯), পিতা-মোঃ সোহেল হোসেন, গ্রাম-কানাইপুর, ফরিদপুর সদর। ঢাকার আদাবরের শাহজাহানের বাড়িতে বসবাস করে। মোঃ তানভির হোসেন (২৩), পিতা- মোঃ হারুন মিয়া, বাড়ি-মুন্সীগঞ্জ সদরে। ঢাকার পিলখানা-১ নম্বর গেটের কাছে নবাবগঞ্জ রোডে বসবাস করত। অপরজন মোঃ রানা রায়হান (৩৬), পিতা- মোঃ সাখাওয়াত হোসেন, গ্রাম- গোনা, থানা-রানীনগর, জেলা-নওগাঁ। ঢাকার ৮৫ নম্বর এলিফ্যান্ট রোডে বসবাস। তাদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া চারটি দামী ল্যাপটপ উদ্ধার হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা সংবাদ সম্মেলেনও প্রতারণার বিষয়টি স্বীকার করেছে। প্রতারকদের বরাত দিয়ে র‌্যাব-২ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এসএম মাসুদ রানা জনকণ্ঠকে জানান, সম্প্রতি অনলাইন শপিং বিপুল সাড়া জাগিয়েছে। বাজারে যাওয়ার ঝামেলা নেই। ইন্টারনেটের মাধ্যমেই দরদাম ঠিক করে জিনিসপত্র কেনা সম্ভব। এমন সুযোগে গ্রেফতাকরকৃতরা প্রতারণার নতুন ফাঁদ পাতে। প্রতারকরা দামী ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন ক্রয়- বিক্রয়ে ইচ্ছুকদের সঙ্গে অনলাইনে যোগাযোগ করে। তাদের টার্গেট বিক্রেতারা। তাদের কাছে দামী ল্যাপটপ বা মোবাইল ফোন বিক্রেতাদের মোহাম্মদপুর, গ্রীন রোড ও এলিফ্যান্ট রোডের বিভিন্ন ল চেম্বারে আসতে বলত। এতে ক্রেতার মনে স্বাভাবিক কারণেই বিশ্বাস জন্ম নিত। কারণ ল চেম্বারে প্রতারিত হওয়ার বিষয়টি বিক্রেতাদের মনেও আসত না। প্রতারকরা নিজেদের নানা পেশার মানুষ বলে পরিচয় দিত। শুধু সেবার জন্য তারা এমন কাজটি করছে বলে বিক্রেতাদের বলত। প্রথম প্রথম বিক্রেতারা বিশাল ল চেম্বারে গিয়ে মুগ্ধ হতেন। আলিশান অফিসে সামান্য ল্যাপটপ বা দামী মোবাইল বেচা বিক্রি নিয়ে প্রতারণা হতে পারে, এমন বিষয় বিক্রেতার মনেও আসত না। প্রথম দফায় না হলেও দ্বিতীয় দফায় বিক্রেতা ঠিকই বিক্রির জন্য দামী ল্যাপটপ বা মোবাইল ফোনটি নিয়ে যেত। আর যোগাযোগের ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর দেয়া থাকত সুন্দরী নারী আফসানার। পোশাকে কেতাদুরস্ত আফসানা ল চেম্বারের নিচে বসে থাকত। বিক্রেতা সেখানে গেলে বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া জিনিসটি আগে দেখত। দেখার পর এমন একটি ভাব করত, যেন বস জিনিসটি পছন্দ করবেন কিনা, সন্দেহ আছে। তারপরেও তিনি যেহেতু জিনিসটি কষ্ট করে নিয়ে এসেছেন, তাই একবার বসকে দেখিয়ে নিয়ে আসি। এমন কথা বলে ল্যাপটপ বা দামী মোবাইল ফোনটি বসকে (তানভীর) দেখানোর কথা বলে উপর তলায় নিয়ে যেত। আর যাওয়ার আগে বিক্রেতাকে চা কফির আপ্যায়নে ব্যস্ত রাখত। জিনিস নিয়ে আফসানা তার বয়ফ্রেন্ড তানভীরের সঙ্গে অন্য লিফট বা সিঁড়ি দিয়ে দ্রুত সটকে পড়ত। বিক্রেতা অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর ল চেম্বারে গিয়ে অভিযোগ করতেন। ল চেম্বারে স্বাভাবিক কারণেই নানা শ্রেণী পেশার মানুষের ভিড় থাকে। কে কোন কাজে, কার কাছে আসে, তা অনেকেই খবরও রাখে না। প্রতারণার শিকার ব্যক্তির অভিযোগে হতভম্ব ল চেম্বারের মালিক ব্যারিস্টার ফিরোজ। বিক্রেতা প্রতারণার শিকার হওয়ার বিষয়টি বুঝতে পারেন। এমন বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটে এলিফ্যান্ট রোডে ব্যারিস্টার মোহাম্মদ ফিরোজের চেম্বারে। র‌্যাবের তদন্তকারী দল বেশ কয়েকবার এ বিষয়ে তদন্ত করতে ওই চেম্বারে যায়। ল চেম্বার ব্যবহার করে প্রতারণার বিষয়টি ব্যারিস্টার ফিরোজ বুঝতে পারেন। তিনি ল চেম্বারের সব সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ র‌্যাবের হাতে তুলে দেন। ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে আফসানা ও তানভীরকে গ্রেফতার করে। আর এ দু’জনের তথ্যমতে প্রধান প্রতারক রানাকে গ্রেফতার করা হয়।
×