ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রত্যাশিত সাফল্য না পাওয়ার নেপথ্যে!

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ২ এপ্রিল ২০১৫

প্রত্যাশিত সাফল্য না পাওয়ার নেপথ্যে!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ দৃশ্যপট-১ : ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবলের ফাইনাল। মালয়েশিয়া যুবদলের কাছে দুই গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়ার পরও বাংলাদেশ জাতীয় দল দুই গোল শোধ করে দুর্দান্তভাবে খেলায় ফিরল। কিন্তু খেলা শেষ হওয়ার ঠিক কয়েক সেকেন্ড আগে সেটপিস থেকে (কর্নার) গোল খেয়ে হেরে যায় ‘বেঙ্গল টাইগার্স’ দল। সেদিন শিরোপা জিততে না পেরে নয়ন জলে বুক ভাসিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছিলেন মামুনুলরা। শোকে মুহ্যমান হয়েছিল ফুটবল পাগল বাঙালীরা। দৃশ্যপট-২ : সেই একই বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম। সদ্যসমাপ্ত ‘এএফসি অনুর্ধ-২৩ চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাইপর্ব’-এ চার দলের মধ্যে মাত্র ১ ড্রতে ১ পয়েন্ট নিয়ে স্বাগতিক বাংলাদেশ যুবদল হয় চতুর্থ। ৩ ম্যাচে বাংলাদেশের যুবারা একটি গোলও করতে পারেনি। উল্টো হজম করে ৮ গোল (সিরিয়া এবং উজবেকিস্তানের কাছে বিধ্বস্ত হয় ৪-০ গোলে। শেষ ম্যাচে ভারতের সঙ্গে করে গোলশূন্য ড্র)! এই ৮ গোলের মধ্যে ছয় গোলই প্রতিপক্ষরা করে সেটপিস (ফ্রি কিক এবং কর্নার থেকে)। সম্প্রতি দেখা গেছে, বাংলাদেশ জাতীয় দল ও যুবদল যেসব ম্যাচ খেলছে, তাতে যে সব গোল খাচ্ছে, তার নব্বই শতাংশ গোল খাচ্ছে এই সেটপিস থেকে। এক্ষেত্রে অনায়াসেই গোলরক্ষকের পজিশন সেন্সের অভাবকে। সেই সঙ্গে দায়ী করা যায় রক্ষণভাগকেও। কেননা ফ্রি কিকের সময় তারা ঠিকমতো প্রাচীর গড়ে তুলতে পারে না, কর্নারের সময় ম্যান মার্কিং করতে পারে না এবং ডি বক্সের ঠিক বাইরে বিপজ্জনক স্থানগুলোতেই প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড়কে ফাউল করে বসে। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য এবার ‘এএফসি অনুর্ধ-২৩ চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাইপর্ব’ শুরুর ঠিক আগে উড়িয়ে আনা হয় জার্মান গোলরক্ষক কোচ ক্রিস্টিয়ান শোয়েচলারকে। কিন্তু তাতেও অবস্থার উত্তরণ হয়নি। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিন এক আলাপচারিতায় বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে বাংলাদেশ দলের খেলা দেখেই উপলব্ধি করি আমাদের গোলকিপিং সমস্যা আছে। যত টাকা লাগে লাগুক। এর সমাধান করতে হবে। এভাবেই শোয়েচলারের এদেশে আসা। কোচ ক্রুইফ এবারের এএফসি কাপের খেলায় যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। আমি তাকে দোষ দিচ্ছি না। আসলে তিনি খেলোয়াড়দের ঠিকই প্রয়োজনীয় দিক-নিদের্শনা দিয়েছেন, কিন্তু সেটা তারা গ্রহণ করতে পারেনি। এক্ষেত্রে তাদের মেধার অভাব আছে। তারা ক্রিয়েটিভ নয়। এই এএফসি চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজন করতে খরচ হয়েছে দেড় কোটি টাকা। আমাকে অনেকেই বলেছিল দরকার নেই। কিন্তু আমি শুনিনি। কারণ এএফসিকে আমরা মানা করে দিলে আয়োজক হিসেবে আমরা ব্যর্থ এটাই প্রতিষ্ঠিত হয়ে যেত।’ বাংলাদেশ চার দলের মধ্যে সর্বশেষ হয়েছে। তারপরও তাতে অখুশি নন সালাউদ্দিন, ‘কারণ আমরা ভারতের কাছে হারিনি। তবে তাদের বিরুদ্ধে আমরা যেভাবে খেলেছি, তাতে আমাদের অবশ্যই জেতা উচিত ছিল। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে আমরা তাদের ১১ ধাপ পেছনে ফেলেছি, এটা তৃপ্তিদায়ক।’ সেটপিসে কেন বাংলাদেশ গোল খায়? সালাউদ্দিনের বিশ্লেষণ, ‘আমাদের দেশী রেফারিরা গোলসীমানায় যে ফাউলগুলো ধরেন না, সেই ফাউলগুলোই ধরেন বিদেশী রেফারিরা। কিন্তু আমাদের রেফারিরা কিন্তু মোটেও অদক্ষ রেফারি নয়। তাদের কোন দোষ নেই। আসলে তারা লীগ বা টুর্নামেন্টের খেলাগুলোতে বিভিন্ন বড় ক্লাবগুলোর কাছে প্রচ- চাপের সম্মুখীন হন। ফলে সেটপিস সংক্রান্ত ফাউলগুলো ধরেন না। ফলে বড় ক্লাবের খেলোয়াড়রা এতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। তারাই যখন জাতীয় দলের হয়ে খেলতে যান, তখন অভ্যাসবশত সেই ফাউলগুলোই আবার করেন। কিন্তু বিদেশী রেফারি সেই ফাউল ধরে বসেন এবং বিপত্তিটা তখনই ঘটে। আমাদের অধিনায়ক-ডিফেন্ডার (রায়হান হাসান) শুধু এ কারণেই দ্বিতীয় ম্যাচে লাল কার্ড পেয়ে বহিষ্কৃত হয়েছে।’ লীগে বা টুর্নামেন্টের খেলাগুলোতে যদি দেশীয় রেফারিরা নির্ভয়ে সিদ্ধান্ত নিতেন, ফাউলগুলো ধরতেন বা কড়া শাস্তি দিতেন, তাহলে খেলোয়াড়রা সতর্ক হয়ে খেলত। এমনটা তারা ফাউল করে খেলত না। কার্ডও পেত না।’ এই সমস্যা সমাধানের উপায় কী? ‘বাংলাদেশের ফুটবলের উন্নয়নে বড় ক্লাবগুলোর সহযোগিতা ও ভূমিকা রাখা অত্যাবশ্যক।’ সালাউদ্দিনের অভিমত। সেটা কিভাবে, ‘বড় ক্লাবগুলো যদি রেফারির সিদ্ধান্তে বিরূপ প্রতিক্রিয়া না দেখায় এবং চাপ সৃষ্টি না করে, তাহলে সেটাই এদেশের ফুটবলের জন্য মঙ্গলজনক। আসলে রেফারিদের কাছেও অনেক কিছু শেখার আছে ফুটবলারদের। বড় ক্লাবগুলো আন্তরিক হলে ফুটবলারদের এসব ভুল অবশ্যই শোধরানো সম্ভব।’ সালাউদ্দিন বাফুফে সভাপতির দায়িত্ব নেয়ার পর দেশের মরা ফুটবল কিছুটা প্রাণ ফিরে পেয়েছে। এটা অবশ্যই প্রশংসনীয়। তবে সালাউদ্দিন তাতে মোটেও তৃপ্ত নন, ‘ভারত যেভাবে ফুটবলের পেছনে অর্থ ব্যয় করে এবং এত স্পন্সর পায়, তার পঞ্চাশ শতাংশও যদি আমরা পেতাম, তাহলে আমি বাংলাদেশের ফুটবলকে এশীয় মানে পৌঁছে দিতাম।’ এএফসির টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ যুবদল খারাপ ফল করলেও তাদের প্রতি নাখোশ নন বাফুফে সভাপতি, ‘এই যুবদলই হবে আগামী দিনের জাতীয় দল। এদের নিবিড় পরিচর্যা-প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। ক্রুইফ চেষ্টা করছেন। তার দোষ নেই। তাকে রাখব কি না, সেটা এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি জাতীয় দল ব্যবস্থাপনা কমিটি। তবে খেলোয়াড়দের কাছে প্রত্যাশা থাকবে, তারা যেন নিজের জন্য নয়, দেশের জন্য খেলে।’ সালাউদ্দিনের এই প্রত্যাশা কী পূরণ হবে?
×