ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ইয়েমেন লড়াই উস্কে দেবে সাম্প্রদায়িক সংঘাত

ঝুঁকির মুখে সৌদি তেল স্থাপনা

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১ এপ্রিল ২০১৫

ঝুঁকির মুখে সৌদি তেল স্থাপনা

ইয়েমেনে সৌদি আরবের ক্রমবর্ধমান হস্তক্ষেপ মারাত্মক বিপরীত ফল বয়ে আনতে পারে, যা শেষ পর্যন্ত সৌদি তেল অবকাঠামো এবং জ্বালানি সরবরাহ বিপন্ন করে তুলবে। সমরিক বিশ্লেষকদের মতে, সৌদি নেতৃত্বাধীন সুন্নি দেশগুলোর জোটের বিমান হামলায় ইয়েমেনে ইরান সমর্থিত হুতি বাহিনীকে বশে আনার সামান্যই সম্ভাবনা রয়েছে। ইয়েমেনে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য স্থলবাহিনীর সর্বাত্মক অভিযানের প্রয়োজন হতে পারে। সীমান্তের কাছে ইতোমধ্যে সৌদি সাঁজোয়া ও গোলন্দাজ বাহিনীর বিপুল সমাবেশ ঘটানো হয়েছে, যদিও এটা হুতিদের আপোসমীমাংসায় আসতে বাধ্য করার একটি কৌশল হতে পারে। খবর টেলিগ্রাফের। ইয়েমেনের বিরুদ্ধে লড়াই সৌদি আরবে আল কায়েদাকে আরও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এই লড়াই যত দীর্ঘায়িত হবে, সৌদি আরবে অভ্যন্তরীণ ঘৃণা-বিদ্বেষকে উস্কে দেয়ার ঝুঁকি ততই বেড়ে যাবেÑ যে দেশ ঐতিহ্যগতভাবে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা থেকে তুলনামূলকভাবে অনেকটা মুক্ত। পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ক ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের এ্যাডাম ব্যারন বলেন, ওই অঞ্চলজুড়ে সুন্নি-শিয়া লড়াই প্রসঙ্গে রাজনীতিবিদদের বিভিন্ন উত্তেজক মন্তব্য ‘নেতিবাচক ভবিষ্যদ্বাণীকেই বাস্তবায়িত’ করছে। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর জিহাদি দল ও সৌদি জিহাদিদের আশ্রয়স্থল আল কায়েদা ইন এ্যারাবিয়ান পেনিনসুলা (একিউএপি) ইতোমধ্যে মধ্য ইয়েমেনের বিরাট এলাকার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে এবং তারা ক্ষমতা শূন্যতার প্রধান সুবিধা ভোগীতে পরিণত হয়েছে। একিউএপি দূরবর্তী কৌশলগত পশ্চাদভূমি থেকে সৌদি লক্ষ্যবস্তুগুলোর ওপর সন্ত্রাসবাদী হামলার পরিকল্পনা করতে পারে। ইয়েমেন থেকে সকল মার্কিন সামরিক উপদেষ্টাদের প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং দেশটির সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলার বিপুল সাজ-সরঞ্জাম অকেজো হয়ে পড়ছে। এই অবস্থায় আল কায়েদার ঘাঁটিগুলোর ওপর ঘন ঘন আঘাত হানা কিংবা সুনির্দিষ্টভাবে ড্রোন হামলা পরিচালনা ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ছে। ইয়েমেনে শিয়া বাহিনীর বিরুদ্ধে একটি দীর্ঘস্থায়ী সৌদি যুদ্ধ এবং সম্ভবত একটি ভিয়েতনাম-ধরনের বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৌদি আরবের অভ্যন্তরের নাজুক রাজনৈতিক কাঠামোকে বিনষ্ট করবে কিনা তা একেবারেই অজানা। রাজতান্ত্রিক দেশটির বিশাল পাওয়ার তেলখনি পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশে অবস্থিতÑ যে অঞ্চলে ক্ষুব্ধ শিয়া সংখ্যালঘুদের বাস। ওয়াশিংটনে ইনস্টিটিউট ফর গালফ এ্যাফেয়ার্সের আলী আল-আহমদ বলেন, সৌদিরা যদি এই যুদ্ধ অব্যাহত রাখে এবং যদি তারা বেসামরিক নাগরিকদের নিধন চালিয়ে যায় তবে তা সৌদি আরবের মধ্যেই অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা সৃষ্টি করবে। বিপুলসংখ্যক সৌদি যুবকের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে। প্রায় ৬ হাজার যুবককে আল কায়েদা বিক্রুট করেছে এবং আরও ৩ হাজার সিরিয়া ও ইরাকে আইএসের হয়ে লড়াই করছে। সৌদিদের সুদৃঢ় নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। ৩০ হাজার সদস্যের শক্তিশালী বাহিনী তাদের তেল স্থাপনাগুলো পাহারা দিচ্ছে। কিন্তু এমনকি রাজপরিবারের সঙ্গে সংযুক্ত গোত্রগুলোর মধ্যেও জঙ্গীদের অনুপ্রবেশের ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি। ২০০৬-এ একটি পাইপলাইনে হামলাকারী আল কায়েদার দুই আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী ক্ষমতাসীন সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান তাদের একজন নেতৃস্থানীয় ওয়াহাবী ধর্মীয় নেতা ও ধর্মীয় পুলিশ প্রধানের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়।
×