ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর

আমরা ধনতন্ত্রের বিরুদ্ধে

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১ এপ্রিল ২০১৫

আমরা ধনতন্ত্রের বিরুদ্ধে

ধনতন্ত্রের বিরুদ্ধে বিশ্বজোড়া প্রতিবাদ, বিক্ষোভ ও বিদ্রোহ শুরু হয়েছে। এই বিদ্রোহ উত্তাল হয়ে উঠেছে রাজনীতির ক্ষেত্রে। এই ক্ষেত্র একই সঙ্গে রাজনীতি ও অর্থনীতির, রাজনৈতিক অর্থনীতির। আমাদের মতো দেশে রাজনৈতিক অর্থনীতি আর কত দিন অর্থনীতি এবং সমাজ কাঠামো অক্ষত রেখে টিকে থাকতে পারবে। প্রশ্ন উঠেছে, প্রশ্ন বিক্ষোভ ও বিদ্রোহে রূপান্তরিত হচ্ছে। প্রতিবাদ, বিক্ষোভ ও বিদ্রোহের কেন্দ্র : সামাজিক নির্যাতন। ৯৯ শতাংশ সাধারণ মানুষের সামাজিক নির্যাতনের স্থায়ী উৎস টিকিয়ে রেখে অর্থনীতি ও সমাজ কাঠামো অপরিবর্তিত রেখে, ভবিষ্যত রক্ষা করা কি যাবে? আমাদের মতো দেশে, সামাজিক নির্যাতনের সঙ্গে যুক্ত বৈদেশিক স্বার্থ এবং আন্তর্জাতিক পুঁজির অবস্থান। সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসাধারণের নিয়তি হচ্ছে : শোষণ, মাথা নিচু করে বাঁচা, ক্ষুধা, অপুষ্টি, রোগ এবং অকালে মরে যাওয়া। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জন্য কোন গণতান্ত্রিক পরিবর্তন নেই, সামাজিক নির্যাতন হ্রাস পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই, অকালে মরে যাওয়ার বিকল্প নেই। এ হচ্ছে সামাজিক নির্যাতনের ডিকটেটরশিপ এবং এর থেকে মুক্তির পথ হচ্ছে অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থার বৈপ্লবিক পরিবর্তনÑ রক্ষণশীল বিভিন্ন ক্ষমতার উচ্ছেদ এবং রাষ্ট্রের (গোড়া) টেনে ধরা। এ সকলের সঙ্গে যুক্ত শক্তিশালী বিদেশী ধনতান্ত্রিক স্বার্থ। লড়াইটা এখন ধনতন্ত্রের বিরুদ্ধে। দেশজ ধনতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখছে বৈশ্বিক ধনতন্ত্র এবং বৈশ্বিক ধনতন্ত্রের বিরুদ্ধে। বৈশ্বিক ধনতন্ত্রের শক্তি যোগাচ্ছে দেশজ ধনতন্ত্র। ওয়ালস্ট্রিট সব দেশেই আছে। ওয়ালস্ট্রিটের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হচ্ছে সব দেশের গরিব মানুষদের। গরিব মানুষকে রুখে দাঁড়াতে হচ্ছে সব দেশের গরিব মানুষকে। গরিব মানুষকে গরিব করে রেখেছে ধনতন্ত্র। গরিব ব্যবস্থা হিসেবে ধনতন্ত্র বৈপ্লবিক আন্দোলন এবং রেজিমের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। আবার, ব্যক্তিগত ডিকটেটরশিপ হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গরিবদের আরও গরিব করে রেখেছে। ব্যবস্থা হিসেবে ধনতন্ত্র পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শোষণ শক্তিশালী করে রেখেছে। আবার ডিকটেটোরিয়াল ব্যবস্থা হিসেবে ধনতন্ত্র মানুষকে নির্যাতনের শেষ সীমান্তে পৌঁছে দিয়েছে। ধনতন্ত্রের কদর্য গণতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করছি। ধনতন্ত্রের ব্যক্তিগত ডিকটেটরশিপের বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করছি। ধনতন্ত্রের বহুজাতিক কোম্পানির বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করছি। দেশের পর দেশে ধনতন্ত্র বিস্তার লাভ করেছে বহুজাতিক কোম্পানির মাধ্যমে। ধনতন্ত্রের এ ধরনের সম্প্রসারণবাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই। ধনতন্ত্রের প্রেতাত্মার বিরুদ্ধে, বুর্জোয়া সরকারগুলোর বিরুদ্ধে, ধনতন্ত্রের প্রেতাত্মার খাম্বা সামরিক শক্তির বিরুদ্ধে আমাদের নিরস্ত্র মানুষের খালি হাতের লড়াই। ঐ বাঁচার লড়াইয়ে যুক্ত সাধারণ মানুষ, শ্রমিক, ছাত্র, পেশাজীবী ও নারী। ৯৯ শতাংশ এই আন্দোলনে যুক্ত, যে আন্দোলন রোজই বাঁচার লড়াইতে যুক্ত। ধনতন্ত্র মানুষকে বেঁচে থাকতে দেয় না, সেজন্য মূল আঘাত ধনতন্ত্রের বিরুদ্ধে। যেসব রাজনৈতিক দল ধনতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে চাচ্ছে, সেসব রাজনৈতিক দল দেশের মানুষের বিরুদ্ধে নাফরমানি করছে। আমরা কি নাফরমানদের পক্ষে থাকব? মনে রাখা দরকার, নাফরমানদের সংখ্যা বাড়িয়ে ধনতন্ত্র টিকে থাকে। আমাদের মতো দেশে ধনতন্ত্রের শক্তি বুর্জোয়া রাজনৈতিক দল এবং বহুজাতিক কোম্পানি। দেশজ বুর্জোয়ারা সরকারের পক্ষে, আমলাদের পক্ষে যায়। যারা কমিশনভোগী তারা বুর্জোয়া শক্তির পক্ষে প্রকাশ্যে এবং গোপনে কাজ করে। মানুষ সর্বত্র : ধনতন্ত্রের মূল দেশগুলোতে এবং ডিকটেটোরাল ধনতন্ত্রের দেশে জেগে উঠছে। আমরা ফানন বর্ণিত ‘দি রেচেড অব দি আর্থ’ হয়ে বেঁচে থাকতে চাই না!
×