ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আবারও ব্লগার খুন

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১ এপ্রিল ২০১৫

আবারও ব্লগার খুন

আবারও ব্লগার খুন, আবারও মুক্তবুদ্ধির ওপর আক্রমণ। সেই একই নির্মম নৃশংস পদ্ধতি। ধারালো চাপাতি দিয়ে শরীরের ওপর উপর্যুপরি আঘাতে আঘাতে রক্তাক্ত করে মাটিতে শুইয়ে দেয়া। মাত্র একমাস আগে মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা, ব্লগার ও বিজ্ঞান লেখক অভিজিতকে। কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এখনও ওই হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষ ঘাতক ও নেপথ্য মদদদাতাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হয়নি। হত্যা রহস্যের জটও খোলেনি। এরই মধ্যে সোমবার সকালে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় চাপাতির আঘাতে নিহত হলেন মুক্তমনা ওয়াশিকুর রহমান। তিনি একজন তরুণ ব্লগার। ঘটনাস্থল থেকে চাপাতিসহ দুজন মাদ্রাসার ছাত্রকে আটক করা হয়েছে। তরুণ প্রজন্মের ভেতর সত্যের যুক্তি ও জ্ঞানের আলোর সমান্তরালে অন্ধবিশ্বাস ও অজ্ঞানতার অন্ধকারও বিস্তার লাভ করছে। বিষয়টি সকল মহলকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। ব্লগার বা অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট টার্মটি দেশব্যাপী বিশেষভাবে আলোচনায় উঠে আসে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আটক কাদের মোল্লার বিচারে ফাঁসির রায় না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট তথা ব্লগাররা শাহবাগে একত্রিত হয়ে প্রতিবাদ করেন। পরে সেটি অভূতপূর্ব গণজাগরণে রূপ নেয়। শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ ইতিহাস সৃষ্টি করে। সে সময়েই মৌলবাদী ও স্বাধীনতাবিরোধী চক্র অনলাইনে স্বাধীন মত প্রকাশকারীদের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালাতে শুরু করে। পরিস্থিতি এমন ঘোলাটে হয়ে পড়ে যে, ব্লগার মানেই নাস্তিকÑ এমন ধারণা প্রভাব বিস্তার করতে থাকে অনেক ধর্মভীরু পরিবারে। নানা কুসংস্কার ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে অনলাইনে বহুজন লেখালেখি করেন। এখন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে বাংলাদেশে মৌলবাদ-জঙ্গীবাদ ছায়া বিস্তার করে চলেছে। তারা অন্ধকারের প্রাণী, আলোতে তাদের ভয়। যুক্তিবুদ্ধির ধার তারা ধারে না। তাদের কাছে মানবতন্ত্র নয়, বড় হলো চাপাতিতন্ত্র। লেখার জবাব- যারা লেখা নয়, চাপাতির মাধ্যমে দিয়ে থাকে তারা রাষ্ট্রের আইন মানে না। তাই রাষ্ট্রকেই উদ্যোগী হয়ে তাদের অপতৎপরতা রোধ করতে হবে জরুরী ভিত্তিতে। শেকড়সুদ্ধ তাদের উপড়ে ফেলা চাই মানবতার স্বার্থে। তা না হলে এরা এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জন করা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে জঙ্গী ভূমিতে পরিণত করে ছাড়বে। দেশবাসী মনে করে, মৌলবাদ-জঙ্গীবাদ দমনে সচেষ্ট বর্তমান সরকার এমন একটি কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে যাতে স্বাধীন মত প্রকাশকারী ব্লগারদের ওপর সুপরিকল্পিত আক্রমণের হোতাদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়। সেটা জরুরী ভিত্তিতেই করতে হবে। মানুষের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা প্রদানে সরকারকে সক্রিয় হতে হবে যাতে ব্লগাররা আর নিজেদের বিপন্ন না ভাবেন। তাদের মনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে। সময় এসেছে যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের পরিকল্পনা আঁটছে তাদের খুঁজে বের করার। এ ক্ষেত্রে সমাজের সব শুভশক্তিকে সম্মিলিতভাবে এ উদ্যোগে শামিল হওয়া দরকার।
×