ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চণ্ডিপুর স্কুলে ৩০ ছাত্রকে পেটানোর ঘটনা তদন্তে মিলল নানা অনিয়ম-দুর্নীতি

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ৩০ মার্চ ২০১৫

চণ্ডিপুর স্কুলে ৩০ ছাত্রকে পেটানোর ঘটনা তদন্তে মিলল নানা অনিয়ম-দুর্নীতি

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ বাঘায় বনভোজনের চাঁদা না পেয়ে স্কুলের ৩০ শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাতের প্রতিবাদে প্রধান শিক্ষকের ওপর হামলা করে তাঁর দাঁত ভেঙ্গে দেয়ার ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। ঘটনার পরদিন রবিবার রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) এসএম তুহিনুর আলম ঘটনার তদন্ত করেছেন। এ সময় চ-িপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নানা অনিয়মের চিত্র বেরিয়ে আসে। অফিস রুম থেকে উদ্ধার করা হয় শিক্ষার্থী পেটানোর ১০ বেত। জানা গেছে, রবিবার সকালে বাঘার চ-িপুর উচ্চ বিদ্যালয় তদন্তে আসেন এডিসি (শিক্ষা) এসএম তুহিনুর আলম। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বাদল চন্দ্র হালদার, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল মোকিম ও বাঘা থানার ওসি আমিনুর রহমান। তদন্ত কমিটি প্রথমেই স্কুলের সহকারী শিক্ষকদের কক্ষ ও অফিস রুম পরিদর্শন করে পান ১০টি বেত। এ সময় সহকারী প্রধান শিক্ষক মমিনুর রহমানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর দিতে পারেননি। পরে অভিভাবকদের সাক্ষাতকারে বেরিয়ে আসে আগের দিন শিক্ষার্থী পেটানোর সত্যতাসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র। অভিভাবকরা অভিযোগ করেন, স্কুল পরিচালনার জন্য বর্তমানে যে কমিটি রয়েছে তা অভিভাবকদের মতামত উপেক্ষা করে প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলামের নিজ পছন্দের লোকদের সমন্বয়ে করা। কমিটি নিজের পছন্দের হওয়ায় প্রধান শিক্ষক কথায় কথায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাতে অর্থ আদায় করে থাকেন। গত ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে শহীদ মিনারে ফুল দেয়ার জন্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে চাঁদা আদায় করা হয়। এর আগে জানুয়ারি মাসে বই দেয়ার সময় ৩৪৭ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ১৫০ টাকা করে ও উপবৃত্তি দেয়ার সময় প্রত্যেকের কাছে ১০০ টাকা আদায় করেছেন বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে। এছাড়া প্রাইভেট না পড়ার কারণে ওই বিদ্যালয়ের দুইজন শিক্ষক জুয়েল ও মকবুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের মারপিট করে বলেও অভিযোগ করা হয়। এ সময় কতিপয় শিক্ষকের নৈতিক চরিত্র নিয়েও অভিযোগ তোলেন শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা। টুলুয়ারা নামে এক অভিভাবক তদন্ত কমিটির প্রধান এডিসিকে বলেন, সরকার ছেলেমেয়েদের বিনামূল্যে বই দেয়। অথচ তাঁর ছেলে সজল টাকা দিতে না পারায় তাকে বই দেয়া হয়নি। বই না পাওয়ায় তাঁর ছেলেকে সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ানোর পর এখন রেস্তরাঁয় কাজে লাগিয়েছেন। এসব অভিযোগ শুনে তদন্ত কমিটি ক্ষিপ্ত হয়ে বই বিতরণের রেজিস্ট্রার খাতা দেখতে চাইলেও তাৎক্ষণিক খাতা দেখাতে পারেননি বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মমিনুর রহমান। পরে আব্দুল কুদ্দুস নামে এক শিক্ষকের বাড়ি থেকে ওই খাতা এনে দেখা হলে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির প্রধান ও এডিসি এসএম তুহিনুর আলম সাংবাদিকদের জানান, স্কুলে এসে পৃথকভাবে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। তাদের সাক্ষ্য নোট করা হয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রসঙ্গত, শনিবার সকালে বাঘার চ-িপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে বনভোজনের চাঁদা না পেয়ে ৩০ শিক্ষার্থীকে বেদম মারপিট করে আহত করেন বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক। এ ঘটনার পর অভিভাবকসহ স্থানীয় লোকজন ওই শিক্ষককে ধাওয়া করলে তিনি অফিস কক্ষে পালিয়ে প্রাণে রক্ষা পান। পরে বিক্ষিপ্ত জনতা প্রধান শিক্ষককে বারান্দায় মারপিট করে। এতে তাঁর দুটি দাঁত ভেঙ্গে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় রাতেই তাঁকে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ পুলিশ গিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষককে গ্রেফতার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
×