ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অস্ট্রেলিয়াই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন

প্রকাশিত: ০৫:২০, ৩০ মার্চ ২০১৫

অস্ট্রেলিয়াই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন

মিথুন আশরাফ ॥ বিশ্বকাপই হলো মোট ১১টি। এর মধ্যে পাঁচবারই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া। রবিবার মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে একাদশ বিশ্বকাপের ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে ৭ উইকেটে হারিয়ে পঞ্চমবারের মতো বিশ্বকাপ শিরোপা নিজেদের ঘরে তুলে নিল অস্ট্রেলিয়া। বিশ্বকাপের শেষ দিনটি বাজিমাত করে নিল। জয়টি এমন সময়ই এলো যখন অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক তার শেষ ওয়ানডে ম্যাচ খেললেন। সেই ম্যাচে আবার রাজসিক বিদায়ই ঘটল ক্লার্কের। বিশ্বকাপ জিতে সেই শিরোপা হাতে তুলে ধরলেনও। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বিশ্বকাপ ফাইনাল ম্যাচ মানেই প্রতিপক্ষ দুমড়ে মুছড়ে যাবে। একচ্ছত্র আধিপত্য গড়েই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হবে অস্ট্রেলিয়া। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও এর বিপরীত ঘটল না। নিউজিল্যান্ডকে ৪৫ ওভারে ১৮৩ রানে গুটিয়ে দিয়ে ৩৩.১ ওভারেই ১৮৬ রান করে ম্যাচের সঙ্গে শিরোপাও জিতে নিল অস্ট্রেলিয়া। হারাল মাত্র ৩ উইকেট। গ্রেন্ট ইলিয়ট (৮৩) ও রস টেইলরই (৪০) শুধু মিচেল জনসন (৩/৩০), জেমস ফকনার (৩/৩৬), মিচেল স্টার্কের (২/২০) গতি সামলাতে পারলেন। বাকিরা শুধু এলেন আর সাজঘরে ফিরলেন। আর কোন ব্যাটসম্যানই ১৫ রানের বেশি করতে পারলেন না! কী দুর্দশা হয়েছে নিউজিল্যান্ডের। এবার বিশ্বকাপে ৯ ম্যাচ খেলে সঠিক সময় এসে সবচেয়ে কম রান করে অলআউট হলো নিউজিল্যান্ড। এত কম রান করার পর কী আর ম্যাচ জেতা যায়? অস্ট্রেলিয়া অনায়াসেই জয় তুলে নিল। মাইকেল ক্লার্ক দুর্দান্ত ব্যাটিং করলেন। নিজের শেষ ম্যাচে এসে ৭৪ রান করলেন। ওয়ার্নার শুরুতেই ৪৫ রান স্কোরবোর্ডে জমা করলেন। আর স্টিভেন স্মিথত এ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার সেরা ব্যাটসম্যানই। অপরাজিত ৫৬ রান করলেন। বিশ্বকাপে টানা ৫ ম্যাচে অর্ধশতক করলেন। সেমিফাইনালেত ভারতের বিপক্ষে ১০৫ রান করে দলকে ফাইনালেই তুললেন। টানা ৮ ম্যাচ জিতে, নবম ম্যাচে এসে চরম ধাক্কাই খেল কিউইরা। তাদের জন্য যথেষ্ট আবেগের ম্যাচ ছিল। ক্যান্সার আক্রান্ত সাবেক ক্রিকেটার মার্টিন ক্রোর দেখা শেষ ম্যাচ ছিল। অলরাউন্ডার ড্যানিয়েল ভেট্টরির হয়ত বিদায়ী ম্যাচই হয়ে গেল। কিন্তু এ দুই ক্রিকেটারকে কিছুই দিতে পারল না নিউজিল্যান্ড। আর অস্ট্রেলিয়া গ্রুপ পর্বে নিউজিল্যান্ডের কাছে যে একমাত্র হারটি হয়েছে, যেন ফাইনালে এসে সেই ম্যাচের প্রতিশোধও নিয়ে নিল। সেই প্রতিশোধ অস্ট্রেলিয়াকে বিশ্বকাপই এনে দিল। ক্লার্ক এ বিশ্বকাপ জয়টিত বন্ধু প্রয়াত ফিলিপ হিউজেসকেই উৎসর্গ করে দিলেন। আবার বলেও দিলেন, ‘রাতের পার্টিটা জমপেশ হবে।’ নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম অবশ্য হতাশই। প্রথমবার বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে শিরোপা জিততে না পারার আক্ষেপ থাকছেই। তবে দল যে ফাইনালে খেলেছে তাতে গর্বিতই বোধ করছেন। বলেছেন, ‘যে পর্যন্ত এসেছি, তাতে গর্বিতই বোধ করছি।’ সঙ্গে যোগ্য দলই যে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তাও জানিয়ে দিয়েছেন, ‘এ জয় তাদেরই প্রাপ্য।’ অবশ্য ম্যাচকে ছাপিয়ে দুই দলের মধ্যে যে শ্রদ্ধাবোধ কাজ করেছে, সেটিই সবার নজরে এসেছে। কিন্তু যে বিষয়টির দিকে সবার নজর ছিল, সেটির দেখাই মিলল না। সেটি কী? দুই পেসার মিচেল স্টার্ক ও ট্র্যান্ট বোল্টের মধ্যে এগিয়ে যাওয়ার লড়াই। ফাইনালে এসে বোল্ট জ্বলে উঠতে পারেননি। সেখানে স্টার্ক নিজেকে আলাদাভাবেই তুলে ধরতে পেরেছেন। টুর্নামেন্ট সেরাও হয়েছেন। মাত্র ১ উইকেট নিয়েছেন বোল্ট। আর শুরুতেই ম্যাককুলামকে তুলে নিয়ে যে নিউজিল্যান্ড ইনিংসকে দুর্বল করে দিয়েছেন স্টার্ক, সেটিই সবার নজরে এসেছে। এ দুই পেসারের দ্বৈরথ যেমন হলো না, তেমন হলো না দুই দল অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার জমপেশ লড়াই। কোন উত্তেজনা, উত্তাপ, প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই ম্যাচ জিতে নিল অস্ট্রেলিয়া। ১৯৮৭ সালে যখন প্রথম চ্যাম্পিয়ন হয়েছে অস্ট্রেলিয়া, তখনই শুধু ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কষ্ট করে জিতেছে। এরপর ১৯৯৯ সালে পাকিস্তান, ২০০৩ সালে ভারত ও ২০০৭ সালে শ্রীলঙ্কাকে অনায়াসে হারিয়েই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এবার নিউজিল্যান্ডকে সহজেই হারিয়ে পঞ্চমবারের মতো শিরোপাও জিতে নিল। এ শিরোপা জয়ের পর প্রশংসার জোয়ারেই ভাসছে অস্ট্রেলিয়া। টুইটারে তো অস্ট্রেলিয়াকে শুভেচ্ছা জানাতে যেন এক মুহূর্তও দেরি করতে রাজি নন সাবেক ও বর্তমান ক্রিকেটাররা। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ক্রিকেটার টম মুডি জানিয়েছেন, ‘শুভেচ্ছা ড্যারেন লেহম্যান (অস্ট্রেলিয়ার কোচ) তোমাকে।’ গ্রেট স্পিনার শেন ওয়ার্ন তো ক্লার্কের প্রশংসায় পঞ্চমুখ, ‘শুভেচ্ছা আমার প্রিয় ক্লার্ককে।’ সদ্য সাবেক হওয়া শহীদ আফ্রিদিও যেমন জানিয়েছেন, ‘অসাধারণ খেলেছে অস্ট্রেলিয়া। ক্লার্ককে শুভেচ্ছা। আমি, ক্লার্ক, মিসবাহ, সাঙ্গাকারা, জয়াবর্ধনে শেষ বিশ্বকাপ খেললাম। দুর্দান্ত সময় কেটেছে।’ জ্যাক ক্যালিস জানিয়েছেন, ‘শুভেচ্ছা অস্ট্রেলিয়াকে। যোগ্য দলই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।’ সাকলায়েন মুস্তাক জানিয়েছেন, ‘পঞ্চমবারের মতো বিশ্বকাপ জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। শুভেচ্ছা দল ও দলের ক্রিকেটারদের।’ ক্রিস গেইল যেমন বলেছেন, ‘অসাধারণ খেলেছে অস্ট্রেলিয়া। বিশ্বকাপও জিতে নিয়েছে। ক্লার্কের প্রতি রইল শুভেচ্ছা।’ গ্লেন ম্যাকগ্রা যেমন জানিয়েছেন, ‘শুভেচ্ছা অস্ট্রেলিয়া ও দলের ক্রিকেটারদের। অসাধারণ খেলেছে।’ ব্রায়ান লারাও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়া দলকে। বিশেষ করে বিদায়ী ক্লার্ককে। তবে সবাই নিউজিল্যান্ডকে নিয়েও জানিয়েছেন, ‘বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছে অস্ট্রেলিয়া। তবে তোমরা (নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটাররা) হৃদয় জয় করেছ।’
×