ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিশ্বকাপ ক্রিকেট ফাইনাল

অস্ট্রেলিয়ার পঞ্চম শিরোপা না নিউজিল্যান্ডের প্রথম?

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২৯ মার্চ ২০১৫

অস্ট্রেলিয়ার পঞ্চম শিরোপা না নিউজিল্যান্ডের প্রথম?

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ আজই ফয়সালা, কে হচ্ছে ১১তম বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন? মেলবোর্নে শিরোপার লড়াইয়ে মুখোমুখি দুই আয়োজক দেশ অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। তাসমান সাগর পারে উইলো-গোলকের ঢেউ তুলতে প্রস্তুত বন্ধুপ্রতীম দুই ক্রিকেট পরাশক্তি। শ্রেষ্ঠত্বের চূড়ান্ত লড়াইটি শুরু বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে নয়টায়। শেষ দৃশ্যের অপেক্ষায় বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গান। সাতবারের চেষ্টায় এই প্রথম ফাইনালে কিউইরা, অন্যদিকে অসিদের সামনে পঞ্চম শিরোপার হাতছানি। নতুন চ্যাম্পিয়ন পেতে যাচ্ছে ক্রিকেট, না নতুন রূপে পুরনো উৎসব? সাড়ে সাত ঘণ্টার দ্বৈরথে তারই ফয়সালা। ভারত-অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা যখন শেষ চারে উঠে আসে, অনেকে বলেছেন, সময়ের সেরা চার দলই সেমিতে খেলছে। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের ফাইনাল সামনে রেখেও বিশ্লেষকদের ধারণা তেমনই। যেখানে যোগ্য দুটি দল নামছে শিরোপার লড়াইয়ে। এই দু’দলের বাইরে সমসাময়িক সময়ে বিশ্বের নজরকাড়া শক্তি দক্ষিণ আফ্রিকা। তাদের সেমিতে বিদায় করেই প্রথমবারের মতো ফাইনালের মঞ্চে কিউইরা। অন্যদিকে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ভারতকে গুড়িয়ে দিয়ে আরও একবার শিরোপার দ্বারপ্রান্তে কুলীন অসিরা। বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন বলছিলেন, নিউজিল্যান্ডের সাফল্যের মধ্য দিয়ে ক্রিকেট বিশ্ব নতুন চ্যাম্পিয়ন পেলেই তিনি খুশি হবেন। কিন্তু সম্ভাবনায় অসিদেরই এগিয়ে রাখেন তিনি! এটা সুমনের দ্বৈত মনোভাব নয়, বাস্তবতা। অবিশ্বাস্য ক্রিকেট খেলে আজ ইতিহাসের দোড়গোড়ায় ব্রেন্ডন ম্যাককুলামের নিউজিল্যান্ড। গ্রুপ পর্ব, কোয়ার্টার হয়ে সেমি পর্যন্ত টানা আট ম্যাচের সব জিতে অপরাজেয় হিসেবে চূড়ান্ত লাড়ইয়ে উঠে আসে ‘ব্ল্যাক ক্যাপসরা।’ দক্ষিণ আফ্রিকা বিদায় নেয়ায় নতুন চ্যাম্পিয়ন প্রত্যাশীদের মনে রঙের ফানুশ ওড়াচ্ছেন ম্যাককুলামরা। যেটি চূড়ান্ত রূপ পেলে সুমনের মতো অনেকেই খুশি হবেন। তবে বাস্তবতাটা কঠিন। ঘরের মাটিতে এবার শিরোপার অন্যতম দাবিদার হিসেবেই ধাপে ধাপে ফাইনালে উঠে এসেছে মাইকেল ক্লার্কের অস্ট্রেলিয়া। তার ওপর তারা খেলবে নিজেদের মাটিতে। অন্যদিকে আসরে নিজেদের সব ম্যাচ নিজ মাঠে খেলা কিউইরা এই প্রথম বাইরে! বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে ইতিহাস-ঐতিহ্যে ঢের এগিয়ে অসিরা। ১৯৭৫ থেকে এটি বিশ্বকাপের ১১তম আসর। যেখানে কেবল সপ্তমবারের মতো ফাইনালে জায়গা করে নেয়াই নয়, টানা তিনবারসহ মোট চারবারের চ্যাম্পিয়ন অসিরা (১৯৮৭, ১৯৯৯, ২০০৩ ও ২০০৭Ñএ)! স্টিভ ওয়াহ-রিকিং পন্টিংয়ের উত্তরসূরিদের সামনে গতবারের ভরাডুবি (২০১১) ভুলে শিরোপা পুনরুদ্ধারের মোক্ষম সুযোগ। প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ডের মতো শতভাগ সাফল্যের সঙ্গে না হলেও ভাল ক্রিকেট খেলেই ফাইনালে উঠে এসেছে অস্ট্রেলিয়া। বিশেষ করে কোয়ার্টারে পাকিস্তান ও সেমিতে ভারতÑ দুই পরাশক্তিকে হারিয়ে আজ উজ্জীবিত ক্লার্ক বাহিনী। এমনিতে টুর্নামেন্টজুড়ে অবিশ্বাস্য বোলিং করে গুরুত্বপূর্ণ অবদান মিচেল স্টার্ক-মিচেল জনসনদের। আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২০ উইকেট স্টার্কের। দুরন্ত সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ভারত বধের নায়ক স্টিভেন স্মিথের মোট রান ৩৪৬। সেঞ্চুরি ১ ও হাফ সেঞ্চুরি ৩। ওই ম্যাচেই ৮১ রান করে ফর্মে ফিরেছেন ওপেনার এ্যারন ফিঞ্চ। সঙ্গে ডেভিড ওয়ার্নার, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, ব্র্যাড হ্যাডিন, জেমস ফকনররা দুর্বার। যদিও ব্যাট হাতে অধিনায়ক নিজে রান পাচ্ছেন না। নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে যাওয়া প্রত্যাবর্তনের সেই ম্যাচে করেছিলেন ১২ রান। শ্রীলঙ্কা ও স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৬৮ ও ৪৭ রানের দুটি ইনিংস খেললেও এরপর আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। পাকিস্তান ও ভারতের বিপক্ষে শেষ দুই ম্যাচে ৮ ও ১০ রান করে সাজঘরে ফেরেন তিনি। এরই মাঝে রবিবার হুট করে ওয়ানডে থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন! সে অর্থে আজকের ম্যাচটিই হতে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে রঙ্গিন পোশাকে তার শেষ ম্যাচ। যেটিকে স্মরণীয় করে রাখতে মরিয়া ক্লার্ক। ‘ফাইনালের টিকেট হাতে পেয়েছি। এটা স্বীকার করতে হবে ছেলেরা ভাল খেলছে। তবে আমি মনে করি না, আমরা এখনও নিখুঁত খেলাটি খেলতে পেরেছি। আমাদের এখনও অনেক কিছু দেয়ার বাকি। তার জন্য ফাইনাল ম্যাচটি বেছে নেয়া যেতে পারে!’ উজ্জীবিত ক্লার্ক আরও যোগ করেন, ‘প্রতিটি ম্যাচেই উন্নতি করেছি এবং ফাইনালে উঠে সবাই শিহরিত। এটা চমৎকার অর্জন। আমি জানি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটি কঠিন হতে যাচ্ছে। তবে আমরা প্রস্তুত নিখুঁত একটি ম্যাচ খেলার জন্য। যার মধ্য দিয়ে দেশবাশীকে আরও একবার আনন্দে ভাসাতে পারব।’ ইতিহাস, পরিসংখ্যান, ঘরের মাটিতে খেলা এসব বিচারে অস্ট্রেলিয়ার সম্ভাবনা দেখলেও, অনুপ্রেরণা খোঁজার সুযোগ থাকছে কিউদেরও। অকল্যান্ডে গ্রুপ পর্বের খেলায় অস্ট্রেলিয়াকে ১ উইকেটে হারিয়েছিল তারা। পাশাপাশি অপরাজিত থেকে উঠে এসেছে ফাইনালে। মাঠে দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলছে ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সাউদি, ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম, গ্র্যান্ট ইলিয়টরা। আছেন দৃশ্যপট বদলে দেয়ার মতো পারফর্মার মার্টিন গাপটিল, কোরি এ্যান্ডারসন, রস টেইলর, কেন উইলিয়ামসন। সুতরাং প্রতিপক্ষ নিয়ে না ভেবে নিজেদের সেরাটা নিংড়ে দিতে পারলে শেষ হাসি হাসা সম্ভব বলে আত্মবিশ্বাসী কিউই অধিনায়ক। চলতি বিশ্বকাপে কিউইদের ‘ভয় ডরহীন’ ক্রিকেটের মন্ত্রটা বেশ ভালই কাজে লাগে। ম্যাককুলাম বলেন, ‘আমাদের একই রকম খেলতে হবে, যেভাবে আমরা নিয়মিত দলগুলোকে হারিয়ে ফাইনালে উঠে এসেছি।’ একদিন আগেই কিউই সেনাপতি বলেছিলেন, ‘আমাদের জন্য প্রতিটি ম্যাচই ইতিহাস। মাঠে নামও খেলাটা উপভোগ করও এবং ইতিহাসের সাক্ষী হও, ওরা তাই করছে। উপভোগের মন্ত্রেই এ পর্যন্ত এসেছি। অস্ট্রেলিয়াকে গ্রুপ পর্বে হারিয়েছি। সুতরাং ফাইনালে একই উপদেশ, উপভোগ করও এবং ইতিহাসের সাক্ষী হও!’ প্রথমবারের মতো ফাইনালে ওঠা কিউইরা কেবল শিরোপা জিতেই ক্ষান্ত হতে চায়। ১৯৭৪ থেকে এ পর্যন্ত দু’দল মোট ১২৬ ওয়ানডে খেলেছে। যেখানে অস্ট্রেলিার ৮৫-এর বিপরীতে নিউজিল্যান্ডের জয় মাত্র ৩৫টিতে। পরিত্যক্ত হয় ৬ ওয়ানডে। বিশ্বকাপেও পাল্লা ভারি অসিদের, ৯ বারের দেখায় ৬ জয় তাদের।
×