ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

লালমনিরহাট সীমান্ত দিয়ে গরুর সঙ্গে আসে আর্জেস গ্রেনেড?

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ২৯ মার্চ ২০১৫

লালমনিরহাট সীমান্ত দিয়ে গরুর সঙ্গে আসে  আর্জেস গ্রেনেড?

নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট, ২৮ মার্চ ॥ উগ্র-মৌলবাদী চক্রের কাছ থেকে আর্জেস গ্রেনেড উদ্ধার হয়েছে। এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গে বোমা বিস্ফোরণের সঙ্গে জড়িত ৯ জন জেএমবি সদস্য ভারত থেকে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ার খবরে লালমনিরহাটের মোগলহাট সীমান্তে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। কারণ এ সীমান্ত থেকে কয়েক মাস আগে শীতে ধরলা নদীর চরে পরিত্যক্ত অবস্থায় তাজা আর্জেস গ্রেনেড পুলিশ উদ্ধার করে। তাহলে কী এ সীমান্ত দিয়েই উগ্র-মৌলবাদী চক্র বাংলাদেশে গরু পাচারের সময় আর্জেস গ্রেনেড প্রবেশ করিয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে লালমনিরহাট ও মোগলহাট সীমান্তে অস্ত্র ও বিস্ফোরক এবং মাদক পাচার নিয়ে জনকণ্ঠে রিপোর্ট প্রকাশ হয়। এ রিপোর্টের জের ধরে হাতীবান্ধায় স্থায়ীভাবে র‌্যাবের ক্যাম্প স্থাপন হয়। ৬ মার্চ মোগলহাট সীমান্তে জনকণ্ঠের প্রতিবেদককে গলা কেটে হত্যার চেষ্টা করা হয়। সীমান্তের নিরীহ গ্রামবাসী মোগলহাটেও র‌্যাবের ক্যাম্প স্থাপনের দাবি তুলেছেন। মোগলহাট সীমান্তে শত কোটি টাকার মাদক, গরু, অস্ত্র, বিস্ফোরক ও নারী পাচারের ব্যবসা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। এই অবৈধ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে অনেকে শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছে। হু-ির মাধ্যমে এ ব্যবসা পরিচালিত হয়ে আসছে। মোগলহাট সীমান্তে হু-ি, মাদক, অস্ত্র ও নারীপাচার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে আসছে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় কয়েক নেতা। এদের মধ্যে একজন কুখ্যাত রাজাকারপুত্র আমজাদ ও গোলাম ফারুক। গত ৬ মার্চ জনকণ্ঠের প্রতিবেদক জাহাঙ্গীর আলম শাহীনকে হত্যা চেষ্টায় নির্দেশদাতা হিসেবে গোলাম ফারুক ও আমজাদের নাম এখন সীমান্তে সকল মানুষের মুখেমুখে। সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় সীমান্তে সাধারণ মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে মোগলহাট ইউনিয়ন পরিষদসংলগ্ন স্কুল মাঠে আলোচনা সভা করতে শহরে ও গ্রামে মাইকিং করা হয়। এ অনুষ্ঠানে অতিথি করা হয় রাজাকারপুত্র আমজাদ ও গোলাম ফারুককে। মঞ্চ তৈরি হয়। ব্যানার সাঁটানো হয়। শেষপর্যন্ত আলোচনা সভা ভ-ুল হয়ে যায়। সাধারণ মানুষ জনকণ্ঠের সাংবাদিককে মেরে ফেলার হুমকিদাতা ও রাজাকারপুত্রের অনুষ্ঠান বর্জন করে। মানুষ আলোচনা সভা শুনতে আসেনি। এমনকি খোদ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও অনুষ্ঠানে আসেননি। মেগারাম বাজারের ক্ষুদ্র চায়ের দোকানি আব্দুল হামিদ জানান, রাজাকারপুত্র ও চোরাকারবারি ফারুককে অনুষ্ঠানে অতিথি করায় সাধারণ মানুষ অনুষ্ঠান বর্জন করেছে। মোগলহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ হাবিবুর রহমান হাবিব জানান, ২৬ মার্চের অনুষ্ঠানে আমজাদ ও ফারুক আসেননি। তাদের অনুপস্থিতিতে তাঁর নেতৃত্বে পরে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা হয়। মোগলাহাট গ্রামের বাসিন্দা মোঃ সজল মিয়া (৪১) জানান, সীমান্তে জন্ম নেয়া যেন প্রতিটি শিশুর আজন্ম পাপ। এ সীমান্তে রাজনৈতিক পরিচয় ও আদর্শ বলে কিছু নেই। প্রতিটি সরকারের ছত্রছায়া থেকে স্থানীয় নেতারা মাদক, নারী, গরু, অস্ত্র ও বিস্ফোরকের অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে আসছে। সীমান্তে আর্জেস গ্রেনেড উদ্ধারের পর কয়েক দিন মানুষের মুখে মুখে নানা কথা প্রচার হয়। পরে সবকিছু থেমে যায়। তিনি আরও জানান, গোলাম ফারুক মোগলহাট সীমান্তের ডন। তার কাছে আইন-আদালত সব কিছু তুচ্ছ। তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে সীমান্তে অবৈধ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, হত্যা, ধর্ষণ, গুম পরিচালনা করে থাকে। এর আগে ফারুক গ্যাংয়ের সদস্য আমিনুলের পুত্র ২০১০ সালে ৭ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণ করেছিল। মামলা হলে সেই ঘটনাটিও জনকণ্ঠে প্রকাশ হয়। গোলাম ফারুকের অত্যাচারে অতিষ্ঠ পরিবারের মধ্যে রয়েছে সাবেক মন্ত্রী জিএম কাদেরের একান্ত ব্যক্তিগত সহকারী সচিব মোঃ তৈয়ব আলী ও তাঁর বড়ভাই জাপা নেতা ঈমান আলীর পরিবার। এদিকে আর্জেস গ্রেনেড উদ্ধারসহ কয়েক জেএমবি নেতা গ্রেফতারের খবরে মোগলহাট সীমান্তে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। তাহলে কি উগ্র-মৌলবাদী চক্র আর্জেস গ্রেনেড বাংলাদেশে উগ্র-মৌলবাদী চক্রের কাছে মোগলহাট সীমান্ত ব্যবহার করে পাঠিয়েছে। মোগলহাট সীমান্তে ভারত-বাংলাদেশের সীমান্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই দুর্বল। এ সীমান্তে ধরলা নদী সীমান্তে নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে দিয়েছে। ধরলার জেগে ওঠা চর বাংলাদেশী ও ভারতীয়দের একত্রে বসবাসের সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। এই চরের প্রায় ২০-২৫ হাজার মানুষ নিত্যপ্রয়োজনে ও দৈনন্দিন কাজে প্রতিদিন বাংলাদেশ ও ভারতে যাওয়া-আসা করে থাকে। এ সুযোগ এই সীমান্তে মাদক, অস্ত্র ও বিস্ফোরক ব্যবসা রমরমাভাবে চলছে। বিজিবির কমান্ডার আব্দুল হামিদ জানান, সীমান্তে নানান সীমাবদ্ধতার মধ্যে বিজিবিকে পাহারা দিতে হয়। বাংলাদেশের সীমান্তে এক বিওপি ক্যাম্প হতে অন্য বিওপি ক্যাম্পে দ্রুত যেতে এখনও ভাল রাস্তা নেই, যানবাহন নেই। প্রায় দুই শতাধিক বিজিবি সদস্য দিয়ে শত কিলোমিটার সীমান্ত নিñিদ্রভাবে পাহারা দেয়া সম্ভব কিনাÑ প্রশ্ন রাখেন তিনি। তারপরও অন্য সীমান্তের চেয়ে লালমনিরহাট সীমান্তে বিজিবির সদস্যরা চোরাচালান রোধে তৎপর। বর্তমানে কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর থানায় কর্মরত ওসি মোঃ জমির উদ্দিন জানান, লালমনিরহাট সদর থানায় ওসির দায়িত্ব পালনকালে মোগলহাট সীমান্তে ধরলা নদীর চরে পরিত্যক্ত অবস্থায় আর্জেস গ্রেনেড উদ্ধার হয়। এ মুহূর্তে তাজা গ্রেনেডগুলোর সংখ্যা মনে পড়ছে না। সেনাবাহিনীর বিস্ফোরক দল লালমনিরহাটে এসে গ্রেনেডগুলোর বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ধ্বংস করে দেয়।
×