ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

কিউই-ক্যাঙ্গারু স্বপ্নের ফাইনাল আজ মেলবোর্নে

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ২৯ মার্চ ২০১৫

কিউই-ক্যাঙ্গারু স্বপ্নের ফাইনাল আজ মেলবোর্নে

মিথুন আশরাফ ॥ বিশ্বকাপে এমন ফাইনাল ম্যাচ কখনই হয়নি। যেখানে শুধুই আবেগ আর শ্রদ্ধা জড়িত থাকছে। আজ মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে সকাল সাড়ে নয়টায় বিশ্বকাপের ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে দুই স্বাগতিক দেশ অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড। তারা প্রতিবেশী দেশও। ম্যাচ ছাপিয়ে, হার-জিত পেছনে ফেলে আবেগ আর শ্রদ্ধাই যেন খেলা করছে। আবেগ কাজ করছে। ক্যান্সার আক্রান্ত নিউজিল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক কিংবদন্তি মার্টিন ক্রো’র এটিই হয়ত তার দেখা শেষ ম্যাচ হতে যাচ্ছে। সঙ্গে ম্যাচটি শেষ হতেই অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে বিদায় নেবেন। বলা হচ্ছে ‘বড় ভাই’ আর ‘ছোট ভাইয়ের মধ্যকার খেলা হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়াকে বড় ভাই, নিউজিল্যান্ডকে ছোট ভাই ধরা হচ্ছে। সেই বড় ভাই ও ছোট্ট ভাইদের মধ্যে সে কী শ্রদ্ধা কাজ করছে! শনিবার বিশ্বকাপের শিরোপা সামনে আনুষ্ঠানিক ছবি তোলা পর্বে অসি অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক ও কিউই অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম যে হাতে হাত মিলিয়েছেন, ছাড়তেই চান না। ছবি তোলা শেষ। মাঠ থেকে বের হচ্ছেন দুই অধিনায়ক। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একে অপরের কাঁধে হাত রেখে বের হলেন। যেন শ্রদ্ধাময় এক ছবিরই দেখা মিলল। ‘যেখানে উড়িয়ে দেব, গুঁড়িয়ে দেবÑএমন কোন বক্তব্যই নেই। উল্টো ক্লার্ক তো বলেই দিয়েছেন, ‘দুই দলই সেরা। আমাদের মধ্যে অনেক ভাল শ্রদ্ধাবোধ কাজ করে।’ ম্যাককুলামও তো হার-জিত পেছনে ফেলে শ্রদ্ধার বিষয়টিই সবার সামনে তুলে ধরলেন, বিশ্বকাপ ফাইনাল ঘিরে এমন এক আবহ তৈরি হয়ে গেছে যেখানে মাঠের লড়াইয়ে যে দলই হারুক তাদের প্রতি যেন জেতা দলের দুঃখই কাজ করবে। যদি নিউজিল্যান্ড হারে তাহলে বোধ হয় দুঃখ আরও বেশি থাকবে। একে তো একবারও বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠেনি নিউজিল্যান্ড। এবারই প্রথম উঠল। এবার যখন উঠেছে তখন শিরোপা হাতের মুঠোয় থাকার পরও যদি না জেতে কিউইরা তাহলে কষ্টে পোড়াটাই স্বাভাবিক। এর বাইরে মার্টিন ক্রো আবার শনিবার যা বললেন তাতে সবারই চোখে জল এসে পড়ল। বলেছেন, ‘অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড যে রবিবার (আজ) বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচটি খেলবে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে আমার দেখা শেষ ম্যাচ হয়ত হতে যাচ্ছে এটি।’ তার হাতে যে বেশি সময় নেই। বছরের যে কোন সময় ক্যান্সার আক্রান্ত এ সাবেক ক্রিকেটারের মৃত্যু আসতে পারে। তাই ক্রো’র কথা শুনে সবার চোখেই জল এসে পড়ে। ফাইনালটি যেন ক্রো’র জন্য আবেগময়ই হয়ে গেল। তার জন্যই নিউজিল্যান্ড খেলতে নামবে ফাইনাল। শিরোপা জিতে গেলে ক্রো’র চেয়ে বেশি খুশি কেউই হবেন না। তাই বলে অস্ট্রেলিয়া কী পঞ্চমবারের মতো বিশ্বকাপ জিততে চাইবে না? ক্লার্ককে বিদায়ী পুরস্কার দিতে হলে বিশ্বকাপ জেতার চেয়ে আর ভাল কিইবা হতে পারে। মাঠের খেলায় তাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবেই। খেলতে নেমে প্রতিপক্ষ কারা, তা বিবেচনা না করে শুধু জেতার আকাঙ্খাই কাজ করবে। এরপরও সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আবেগ আর শ্রদ্ধাবোধই কাজ করবে। উত্তেজনা, উত্তাপ, প্রতিদ্বন্দ্বিতা-সব কিছুই থাকবে হয়ত, কিন্তু অস্ট্রেলিয়া কিংবা নিউজিল্যান্ড যে কোন একটি দল বিশ্বকাপে না থেকে তাদের স্থানে অন্য কেউ হলে জেতার যে তীব্র জেদ কাজ করত তা অন্তত হচ্ছে না। বিশ্বকাপের ফাইনাল মানেই উত্তাপ। সেই ১৯৭৫ সাল থেকে এর আগে দশটি বিশ্বকাপ হয়েছে। একের অধিক দেশ সাতবার বিশ্বকাপ আয়োজন করেছে। ১৯৮৩ সালে ইংল্যান্ড-ওয়েলস, ১৯৮৭ সালে ভারত-পাকিস্তান, ১৯৯২ সালে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড, ১৯৯৬ সালে ভারত-পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা, ১৯৯৯ সালে ইংল্যান্ড-ওয়েলস-স্কটল্যান্ড-আয়ারল্যান্ড-নেদারল্যান্ডস, ২০০৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা-জিম্বাবুইয়ে-কেনিয়া, ২০১১ সালে ভারত-শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশ বিশ্বকাপ আয়োজন করে। এর মধ্যে শুধু বিশ্বকাপের গত আসরেই স্বাগতিক দুই দেশ প্রতিবেশী দুই দেশ ভারত ও শ্রীলঙ্কা ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। এবার একাদশ বিশ্বকাপে গিয়ে আবারও দেখা গেল স্বাগতিক দুই দেশ প্রতিবেশী দুই দেশ শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে খেলছে। ২০১১ সালে ভারত-শ্রীলঙ্কা ফাইনালেও এমন আবেগ, শ্রদ্ধা দেখা যায়নি। আবেগ ছিল অবশ্য, শচীন টেন্ডুলকরের শেষ বিশ্বকাপ। তার জন্যই ভারত বিশ্বকাপ জিততে চেয়েছিল। জিতেছেও। কিন্তু চিরাচরিত প্রতিপক্ষের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ছাড়া আলাদাভাবে প্রতিবেশী দেশ বলে শ্রদ্ধা দেখা যায়নি। দুই দলই হারিয়ে দেব, অমুক করব, তমুক করব; কথাবার্তায় হাওয়া গরম করে রেখেছে। কিন্তু এবার সেই বাতাস নেই-ই। আছে শুধু আবেগ আর শ্রদ্ধাবোধ। এমন এক ফাইনাল হবে আজ যেখানে ‘হার-জিত’ বাদ দিয়ে সৌহার্দ্যই যেন চোখে পড়বে। সেমিফাইনাল শেষ হওয়ার পর নিউজিল্যান্ড মেলবোর্নে পা রাখা থেকে যেমন শুরু হয়েছে, আজও ফাইনালে শুধু হাসিমাখা মুখগুলোরই দেখা মিলবে। যেখানে একদল চ্যাম্পিয়ন হবে, আরেক দল রানার্সআপ হবে; তবে বিশ্বকাপের শেষ দিনে, বিশ্বকাপের পর্দা নামার দিনে আবেগ, শ্রদ্ধাই পরস্পরের সঙ্গে এঁটে থাকবে।
×