ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

গণভবনে নেতাকর্মীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ;###;বিপক্ষে কাজ করলে কঠোর ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি

দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে সবাইকে একাট্টা হতে হবে

প্রকাশিত: ০৭:৪৯, ২৮ মার্চ ২০১৫

দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে সবাইকে একাট্টা হতে হবে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বৃহত্তর স্বার্থে দলের সিদ্ধান্ত মেনে তিন সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ঘোষিত একক মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিত করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য আওয়ামী লীগের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকা উত্তরে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আনিসুল হক এবং দক্ষিণে সাঈদ খোকনকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, বৃহত্তর স্বার্থে সবার দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবে। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ প্রার্থী হলে কিংবা বিপক্ষে কাজ করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। শুক্রবার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগসহ সব থানা, ওয়ার্ড, ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে জরুরী বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। আর বৈঠকে মেয়র পদে দুই চূড়ান্ত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হলেও কাউন্সিলরদের চূড়ান্ত একক তালিকা ঘোষণা করা হয়নি। সূত্র জানায়, প্রতিটি ওয়ার্ডে একক কাউন্সিলর প্রার্থী নিশ্চিত করার জন্য নগর নেতাদের নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, কাউন্সিলর পদেও দলের একক প্রার্থী থাকবে। দু-এক দিনের মধ্যে আবারও বসে তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। বৈঠকে দুই সিটি নির্বাচনেই দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ী করতে একাট্টা হয়ে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন নগর নেতারা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিমসহ কেন্দ্রীয় ও নগর নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে উপস্থিত দুই মেয়র প্রার্থী আনিসুল হক ও সাঈদ খোকন উপস্থিত সবার দোয়া ও সমর্থন কামনা করেন। বৈঠক শেষে নগর ও ইউনিয়নের প্রায় দেড় শতাধিক নেতাকে নৈশভোজে আপ্যায়িত করেন প্রধানমন্ত্রী। সূত্র জানায়, বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নগরের দুই নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম এবং উত্তরের মেয়র প্রার্থী আনিসুল হক একান্তে কিছু সময় কথা বলেন। বৈঠক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে আনিসুল হক ও সাঈদ খোকনকে দুই সিটি কর্পোরেশনের মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করে তাঁর পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানালে নগর নেতারা তাতে সম্মতি জ্ঞাপন করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, দল ও দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এ সময় আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। বিএনপি-জামায়াত জোট ৮১ দিন ধরে দেশে হত্যা-নাশকতা-সহিংসতা ও চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে। এ সময় আমাদের মধ্যে কোন বিভেদের সুযোগ নিয়ে বিএনপি-জামায়াত যাতে কোন রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে না পারে সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। তাই দল থেকে যাকেই মনোনয়ন দেয়া হবে, দলের বৃহত্তর স্বার্থে তার পক্ষেই সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। মেয়র কিংবা কাউন্সিলর পদে কোথাও যেন দলের একাধিক প্রার্থী না থাকে সেজন্য নগরের শীর্ষ নেতাদের নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দলের সিদ্ধান্ত কেউ অমান্য করলে সে যত বড় নেতাই হোন না কেন, কোন ছাড় দেয়া হবে। দেশের এ পরিস্থিতিতে দলের কেউ ক্ষতি করতে চাইলে তা মেনে নেয়া হবে না। কেউ দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। গণতন্ত্র উন্নয়ন ও শান্তির লক্ষ্যে বিএনপি-জামায়াতের নাশকতা, নৈরাজ্য এবং অব্যাহত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্যও নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ও উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য বর্তমান সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিএনপি জোটের অব্যাহত সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে দেশবাসী রুখে দাঁড়িয়েছে। দেশের মানুষ এখন শান্তি চায়। স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিকে রুখতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোন বিকল্প নেই। বৈঠক সূত্র জানায়, নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এমএ আজিজ, সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম ও যুগ্মসাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের সঙ্গে পুনরায় বৈঠক করে প্রধানমন্ত্রী দুই সিটিতে একক কাউন্সিলর প্রার্থিতা চূড়ান্ত করবেন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন সংস্থা এবং দলের একাধিক উইংকে কাজে লাগিয়ে দুই সিটি কর্পোরেশনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে জরিপ চালিয়ে একটি খসড়া তালিকা তৈরি করা হয়েছে। কিছুটা সংযোজন-বিয়োজন করেই প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আগেই দলের একক কাউন্সিলরদের নামের তালিকা ঘোষণা করবে আওয়ামী লীগ। বৈঠকেও এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠক শেষে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী সাঈদ খোকন ঢাকাবাসীর দোয়া ও সমর্থন কামনা করে তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, হাজী মোহাম্মদ সেলিমসহ সব নেতা ও মুরব্বীকে সঙ্গে নিয়েই আমি নির্বাচনে প্রচার চালাব। আমার প্রয়াত বাবা ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফ যেভাবে ঢাকাবাসীর উন্নয়নে কাজ করে গেছেন, তেমনিভাবে ঢাকাবাসীর উন্নয়নে আমি আমার জীবনকে উৎসর্গ করব।
×