ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আইনের আশ্রয় নেয়ায় দেশ ছাড়ার হুমকি

সুনামগঞ্জে ৩ সংখ্যালঘু পরিবার বাড়িছাড়া

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ২৮ মার্চ ২০১৫

সুনামগঞ্জে ৩ সংখ্যালঘু পরিবার বাড়িছাড়া

নিজস্ব সংবাদদাতা, সুনামগঞ্জ, ২৭ মার্চ ॥ প্রভাবশালী মহল দখল করে নিয়েছে সুনামগঞ্জের অসহায় তিন পরিবারের বসতঘর। গরিব হিন্দু পরিবারগুলোকে পিটিয়ে বের করে দেয়া হয়েছে। ঘটনার ৬ দিন অতিবাহিত হলেও হামলার শিকার পরিবারগুলোর সাহায্যে এগিয়ে আসছে না প্রশাসন কিংবা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। উল্টো আইন-আদালতের দ্বারস্থ না হয়ে গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দেয়া হচ্ছে তাদের। ছাতকের দোলারবাজার ইউনিয়নের রাউলি গ্রামে মহান স্বাধীনতার ৪৪ বছর পরও এ কোন বর্বরতা। স্বাধীনতার মাস মার্চের ২১ তারিখে আবারও ভিটে-মাটি হারা হলো স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক উপেন্দ্র সরকার, কালিন্দ্র সরকার ও পবিত্র সরকারের পরিবার। জানা যায়, শতবছরের ঐতিহ্য নিয়ে এই গ্রামে হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের বসবাস। কলিন্দ্র সরকার উত্তরাধিকার সূত্রে এই গ্রামের বাসিন্দা। পৈত্রিক বাড়িতে স্থান সংকুলান না হওয়ায় রাউলি মৌজার ২৯০ ও ৩০৫ নং দাগের বিয়াল্লিশ শতক জমি এসএ রেকর্ডীয় মালিকের কাছ থেকে ক্রয়সূত্রে বসবাস করছে ১৯ বছর ধরে। তিন ভাইয়ের সংসারে প্রত্যেকেই ছেলে-মেয়ে নিয়ে পৃথকভাবে বসবাস করছেন। গেল শনিবার দুপুরে মাথা গোঁজার শেষ সম্বলখানা বেহাত হয়ে যায় স্থানীয় প্রভাবশালীদের রোষানলে। শেষ আশ্রয়টুকু হারানোর পরও নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে এই হতদরিদ্র তিন পরিবার। গত এক সপ্তাহ ধরে এর বাড়ি ওর বাড়ি অনাহারে অর্ধাহারে কাটাচ্ছে পরিবারগুলোর। স্থানীয় সূত্র জানায়, বাড়িটির অংশবিশেষ এসএ রেকর্ডের মালিকের উত্তরাধিকারীর নিকট থেকে ক্রয় করে নেন গ্রামের প্রবাসী মস্তাব আলী। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ালে বাড়ির মালিক কলিন্দ্রের পক্ষে রায় আসে। এর বিরুদ্ধে মস্তাব আলী উচ্চ আদালতের রায়ে আপীল করলে মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয় তার। কিন্তু হাইকোর্টের আপিলেড ডিভিশনে আবারও আপিল করেন কলিন্দ্র সরকার। বিচারাধীন থাকা অবস্থায় আইন আদালতের তোয়াক্কা না করেই স্থানীয় ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের দিয়ে গত ২১ মার্চ দুপুরে কলিন্দ্র ও তার ভাইয়ের পরিবারকে মারধর করে নিজ বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে প্রভাবশালী মস্তাব আলী। এ সময় স্থানীয় সন্ত্রাসীরা নিরীহ পরিবার তিনটির ঘরে থাকা মূল্যবান আসবাবপত্র, ছাত্র-ছাত্রীদের বই-খাতা, নগদ অর্থ ও স্বর্ণালংকার লুট করে নেয় অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী। বাড়ি দখলে যাওয়ার পরপর-ই ভেঙ্গে ফেলা হয় পারিবারিক পূজাম-প ও রান্নাঘরসহ সনাতন নিদর্শনগুলো। কেটে দেয়া হয়েছে ফলজ গাছগাছালি ও কলার বাগান। ঘটনাটি এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করলেও প্রভারশালীদের ভয়ে কেউ মুখ খুলছে না। স্থনীয় পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের তিনদিন পর ছাতক থানা পুলিশ মামলা নিলেও এ পর্যন্ত কোন কর্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না পুলিশ। উল্টো মামলা তুলে নেয়ার হুমকিতে রয়েছে পরিবারগুলো। প্রতিবাদে গত ২৪ মার্চ গ্রামের কিছু সাহসী যুবকরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে নিয়ে একটি মানববন্ধন করে। এ ব্যাপারে বাড়িতে অবস্থানরত প্রবাসী মস্তাব আলীর চাচি কাঞ্চন মালা সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে তারা বাড়িটি দখলে নিয়েছেন। বাড়ির মালিক কলিন্দ্র সরকার বলেন, বাড়িটি বেদখল হওয়ার পর থেকে তিন পরিবারের অর্ধশতাধিক সদস্য খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন। প্রভাবশালী মস্তাব আলীর ভয়ে তাদের কেউ আশ্রয়ও দিচ্ছে না। দোলারবাজার ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যন, মোঃ সাদিক মিয়া জানালেন, তারা বিষয়টি আপোস মীমাংসার চেষ্টা করছেন। ছাতক থানার ওসি হারুন অর রশীদ এ ঘটনায় সত্যতা স্বীকার করে জানান, সোমবার কলিন্দ্র সরকার ছাতক থানায় ১৫ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় এখন কাউকে আটক করতে না পারলেও পুলিশের অভিযান চলছে।
×