ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এশিয়াটিক সোসাইটিতে মুক্তিযুদ্ধের জ্ঞানকোষ বিষয়ক কর্মশালা

মুক্তিযুদ্ধকে নয় মাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে ইতিহাস পূর্ণাঙ্গ হবে না

প্রকাশিত: ০৬:১০, ২৮ মার্চ ২০১৫

মুক্তিযুদ্ধকে নয় মাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে ইতিহাস পূর্ণাঙ্গ হবে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মুক্তিযুদ্ধের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে পাকিস্তান সৃষ্টি পরবর্তী ২৩ বছরের বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাসের ওপরও গুরুত্ব আরোপ করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। ইতিহাসবিদদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, পাকিস্তান সৃষ্টি করেছিল বাঙালীরাই। কিন্তু ১৯৪৮ সালে রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নেই পাকিস্তানের ভবিষ্যত নিয়ে বাঙালীদের মনে প্রশ্ন দেখা দেয়। মূলত তখন থেকেই এই ভূ-খ-ের মানুষের স্বাধীনতার চিন্তা শুরু। ১৯৭১ সালের মার্চ মাস সেই ইতিহাসেরই ধারবাহিকতা। তাই বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে কেবল একটি দিনের বক্তৃতা ভাবলে এবং মুক্তিযুদ্ধকে নয় মাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে ইতিহাস পূর্ণাঙ্গ হবে না। একই কারণে কেবল একদিন একটা ঘোষণা পাঠ করেই কেউ ইতিহাসের মহানায়কের আসন পেতে পারে না। পাকিস্তানের ২৩ বছরে কার কী ভূমিকা ছিল সেই ইতিহাস বিবেচনা করলেই মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত নায়ক এবং খলনায়কদের চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। শুক্রবার রাজধানীর নিমতলীতে এশিয়াটিক সোসাইটির মিলনায়তনে মুক্তিযুদ্ধের জ্ঞানকোষ রচনা বিষয়ক এক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ সময় অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, মুক্তিযুদ্ধের জ্ঞানকোষ রচনা প্রকল্পের পরিচালক এবং প্রধান সম্পাদক অধ্যাপক হারুনÑঅরÑরশীদ, প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক অধ্যাপক ড. সাজাহান মিয়া এবং এশিয়াটিক সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আহমেদ আবদুল্লাহ জামাল উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এশিয়াটিক সোসাইটির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম চৌধুরী। প্রধান অতিথির বক্তব্যে আ ক মোজাম্মেল হক আরও বলেন, ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অনেকেই ঘাপটি মেরে ছিলেন। তাদের সে সময়কার ভূমিকা খুব একটা আলোচনায় আসে না। মুজিবনগর সরকারে খন্দকার মোশতাকও ছিলেন। কিন্তু তার মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ষড়যন্ত্রের ইতিহাস সবার জানা উচিত। তাহলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে- হরতাল অবরোধের নামে যারা মানুষ পুড়িয়ে মারছেন, তাদের সঙ্গে আলোচনা-সংলাপে বসার পরামর্শদাতাদের চরিত্র আসলে কী। জ্ঞানকোষ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের জ্ঞানকোষ রচনা সম্পন্ন হলে মুক্তিযুদ্ধের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়সম্পর্কিত অনেক অজানা তথ্য জানা যাবে। গবেষণা ও ইতিহাসচর্চার পাশাপাশি এটি হবে জাতীয় পর্যায়ে একটি বড় মাপের কাজ। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, গৌরবোজ্জল ইতিহাস বইয়ের পৃষ্ঠায় প্রতিফলিত হবে। আর মুক্তিযুদ্ধের ওপর মৌলিক ও বিশদ এই গবেষণা নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চর্চায়ও উদ্বুদ্ধ করবে। এর আগে প্রকল্প পরিচালক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক হারুনÑঅর-রশীদ প্রস্তাবিত গবেষণার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। এশিয়াটিক সোসাইটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের জাতীয়-আন্তর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিত এবং যুদ্ধ সংশ্লিষ্ট বিষয়াবলী অন্তর্ভুক্ত করে মুক্তিযুদ্ধের পূর্ণাঙ্গ জ্ঞানকোষ রচনার একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। এর আওতায় মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি, প্রাথমিক প্রতিরোধ, মুক্তিযুদ্ধের সামরিক-বেসামরিক নেতৃত্ব, পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় সহযোগীদের গণহত্যা, বধ্যভূমি, গণকবর, যুদ্ধশিশু, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ, শরণার্থী শিবির, ভারত ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নসহ বৃহত শক্তিবর্গের ভূমিকা, জাতিসংঘের ভূমিকা, বিশ্বসম্প্রদায় ও গণমাধ্যমের ভূমিকা জ্ঞানকোষে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ২০১৪ সালের ২৬ মে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এই প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে অনুমোদন দেয়। তিন বছর মেয়াদী (২০১৪ থেকে এপ্রিল ২০১৭) এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি ৯৮ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। এর মধ্যে ২ কোটি ৩৮ লাখ টাকার জোগান দেবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। ডিভিডি ও অনলাইন মাধ্যমসহ বাংলা ও ইংরেজীতে প্রাথমিকভাবে মোট ১০ খ- জ্ঞানকোষ প্রকাশ করা হবে। এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যে দেশের ৪৬টি জেলার ৪৩২টি উপজেলায় একজন করে তথ্য অনুসন্ধানকারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বাকি জেলাগুলোতেও এ নিয়োগ শিগগির সম্পন্ন করা হবে। প্রকল্পটি সম্পন্ন করতে একটি সার্বক্ষণিক টিম ছাড়াও একটি সম্পাদনা পরিষদ ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিসহ একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে প্রধান করে দেশবরেণ্য ৯ জন শিক্ষাবিদ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিকে নিয়ে গঠিত একটি পরামর্শক কমিটিও এ লক্ষ্যে কাজ করছে বলে অধ্যাপক হারুন-অর-রশীদ জানান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম ও অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে জ্ঞানকোষ রচনার কৌশল ও পদ্ধতিগত বিষয়ে দুটি পৃথক সেশন অনুষ্ঠিত হয়।
×